আগামী ২৪ মে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে বসতে চলেছে রাজ্য সরকার, কেন্দ্রীয় সরকার ও জিটিএ। আসন্ন এই ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের আগে কেন্দ্রের থেকে বাড়তি দাবি-দাওয়া আদায়ের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাশে পেতে আসরে নেমে পড়ল জিটিএ-র শাসক দল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী দার্জিলিং সফর সেরে কলকাতায় ফেরার আগেই মহাকরণে দাঁড়িয়ে সেই বার্তা দিয়েছেন মোর্চার কালিম্পঙের বিধায়ক হরকাবাহাদুর ছেত্রী। তিনি বলেন, “জিটিএ-এর মাধ্যমে পাহাড়ের সার্বিক উন্নয়ন করতে আমরা বদ্ধপরিকর। মুক্যমন্ত্রীও তা-ই চান। সেই চেষ্টাও করে চলেছেন। বার বার পাহাড়ে গিয়ে সেটা বুঝিয়ে দিচ্ছেন। আমরাও রাজ্যকে পাশে নিয়ে চলেছি ও চলব। রাজ্য যা করার তো করছে ও করবে, আমরা কেন্দ্রের থেকেও বাড়তি বরাদ্দ চাই। ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে সে কথা বলব। রাজ্যও আমাদের পাশে থাকবে।”
|
তবে হরকাবাহাদুরের অভিযোগ, পাহাড়ের এক শ্রেণির রাজ্য সরকারের সঙ্গে তাঁদের সুসম্পর্ক নষ্ট করার ছক কষছে। সে জন্য গত ২৯ জানুয়ারির ঘটনার পরে মোর্চার সঙ্গে রাজ্যের ভুল বোঝাবুঝি বাড়ানোর চেষ্টাও হয় বলে তাঁর সন্দেহ। সেই সম্পর্ককে ফের আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনার জন্যই মোর্চার পক্ষ থেকে এ বারে ফের দার্জিলিং সফরে আসার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল বলে তিনি জানান। তাঁদের আশঙ্কা ছিল, সফরকে ঘিরে এ বারেও হয়তো কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে, কিন্তু তা হয়নি। বরং মুখ্যমন্ত্রী ও বিমল গুরুঙ্গের মধ্যে আলোচনায় তা মিটে যায় বলে মোর্চার ওই বিধায়কের দাবি। তাঁর কথায়, “রাজ্যের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে। মুখ্যমন্ত্রীর এ বারের পাহাড় সফর তাই গুরুত্বপূর্ণ।”
কার্যত এ দিন মহাকরণে হরকা বাহাদূর মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক দক্ষতা, পাহাড়ের উন্নতি নিয়ে তাঁর প্রচেষ্টা এবং পরিকল্পনা নিয়ে ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “অনেকে প্রশ্ন করছেন মুখ্যমন্ত্রীর বারবার দার্জিলিং সফরে আসার প্রয়োজন কী? মহাকরণে বসেই তো তিনি তাঁর কাজ সারতে পারেন।” হরকা জানান, এর আগে পশ্চিমবঙ্গের অন্য কোনও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো বারবার পাহাড়ের মানুষের কাছে যাননি। তিনি বলেন, “জ্যোতি বসু তাঁর দীর্ঘ মুখ্যমন্ত্রীত্ব কালে মাত্র তিন বার পাহাড়ে গিয়েছিলেন। অথচ তাঁর রাজনৈতিক জীবনেরশুরুর দিকে পাহাড়ের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে তিনি কালিম্পংয়ের একটি বস্তিতে আত্মগোপন করে থেকেছেন। পাহাড়ের মানুষ তাঁকে সাহায্য করেছিল।”
তাঁদের ‘হৃদয়ে গোর্খাল্যান্ড’ থাকলেও জিটিএ-এর মাধ্যমে লক্ষ্য পূরণের জন্য তাঁরা সব রকম চেষ্টা করবেন বলেও হরকাবাহাদুর জানিয়ে দেন। তিনি জানান, জিটিএ সবে কাজ করতে শুরু করেছে। সে দিকেই তাঁরা নজর রাখছেন। তাঁর যুক্তি, জিটিএ এখনও পুরোপুরি ভাবে তৈরি হয়নি। বেশ কিছু দফতর তৈরি হয়েছে। কিছু আংশিকভাবে কাজ করছে। জিটিএ যদি তার কাজ করতে ব্যর্থ হয় তখন পাহাড়ের মানুষ পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। তবে এখনও পর্যন্ত জিটিএ যে ভাবে কাজ করছে তাতে তাঁরা নেতিবাচক কিছু দেখতে পারছেন না বলে ছেত্রী পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমরা চাই পাহাড় ও সমতেলর মানুষের মধ্যে যে মানসিক দূরত্ব বা কিছু ক্ষেত্রে ভুল বোঝাবুঝি রয়েছে তা দূর হোক।” হরকার দাবি, তাঁর চান না দার্জিলিং আবার ১৯৮৬ সালের সেই সুবাস ঘিসিংয়ের সময়ে ফিরে যাক।
|