আতঙ্কের উত্তরাখন্ড থেকে ২৩ জুন বাড়ি ফিরেছেন বনগাঁর বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা রমারানি বিশ্বাস। কিন্তু দুঃস্বপ্ন এখনো তাড়া করছে তাঁকে। চোখ বুঝলেই ধেয়ে আসছে ভয়ঙ্কর প্রকৃতি।
৩ জুন কুম্ভ এক্সপ্রেস করে ১১ জন সহযাত্রী-সহ হরিদ্বার রওনা হয়েছিলেন রমারানি দেবী। পৌঁছে উঠেছিলেন গণেশ হোটেলে। তারপর হোটেল মালিকের ঠিক করে দেওয়া দুটো গাড়ি করে তাঁরা পৌঁছান কেদারনাথের নীচে। গৌরীকুন্ডের কিছু আগে অল ইন্ডিয়া হোটেল নামে একটি হোটেলে ওঠেন তাঁরা। সে দিন থেকেই শুরু হয় দুর্যোগ।
রমাদেবীর কথায়, “সকাল থেকেই শুরু হয় প্রবল বৃষ্টি। জলের ওরকম ভয়ঙ্কর শব্দ কোনও দিন শুনিনি। হোটেলের সামনে জল চলে এসেছিল। আমাদের উল্টো দিকের হোটেলটা ভেঙে পড়ল হুড়মুড় করে। সে দিন ভোররাতে হোটেল ছেড়ে পাহাড়ের উপর একাই হাটতে শুরু করি। ব্যাগ পত্তরও হারিয়ে গিয়েছে।” |
রমাদেবী জানান, এরপর তিনি এক বন কর্তার অফিসে গিয়ে পৌঁছান। প্রবল ঠান্ডায় মধ্যে সেখানে এক কাপ চা মিললেও আশ্রয় জোটেনি। বাঁচার আশা তিনি যখন প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন, তখন একটি মেয়ে তাঁকে উদ্ধার করে পাহাড়ের নীচে নিয়ে আসেন। সেখানে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় পান তিনি। ভিজে যাওয়া টাকা গরম করে নেন সেখানে। পরদিন সকালে প্রশাসন ও স্থানীয় মানুষের সাহায্য তিনি হোটেল অল ইন্ডিয়াতে ফেরেন। দেখা হয় তিন সহযাত্রীর সঙ্গে। ৬০ টাকার বিনিময়ে মেলে চারটে রুটি। গাড়ি বা হেলিকপ্টারের দেখা না পেয়ে কয়েকজন সহযাত্রীকে নিয়ে শুরু করেন হাঁটা। প্রায় ১০ মাইল পথ হাঁটার পর দেখা মেলে একটি ট্যাক্সির। ট্যাক্সিচালক তাঁদের হরিদ্বার পৌঁছে দিতে রাজি হন। প্রায় ৩২ ঘণ্টার পথ উজিয়ে হরিদ্বার পৌঁছান তাঁরা। পথে আরও কয়েকজন সহযাত্রীর সঙ্গে দেখা হয়। তাঁদেরকেও ট্যাক্সিতে তুলে নেওয়া হয়। বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ নেই অনেক দিন। বৃদ্ধা জানান, “অচেনা ট্যাক্সিচালকের ফোন থেকেই বাড়িতে যোগাযোগ করি।” অবশেষে হরিদ্বার থেকে ট্রেনে উঠে রওনা দেন বাড়ির উদ্দেশ্য।
|