সংসার ফেলে উত্তরাখন্ডের দুর্গতদের পাশে সংগ্রামপুরের মহিলারা
পাহাড় থেকে নেমে আসা জলের তোড়ে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ছে তিন-চারতলা বাড়ি। খড়কুটোর মতো ভেসে যাচ্ছে গাছপালা, দোকানপাট এমনকী মানুষও। টিভি খুললেই উত্তরাখন্ডে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ভয়াল-ভয়ঙ্কর ছবি। রোজ রোজ এ সব দৃশ্য দেখতে দেখতে আমরা অনেকেই অভ্যস্ত হয়ে গেলেও কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে বসে আর সহ্য করতে পারেননি মনীষা ভঞ্জ।
উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট মহকুমার সংগ্রামপুরের একটি স্বনির্ভর গোষ্টীর সদস্য মনীষাদেবী সকলের কাছে ছুটে গিয়েছিলেন ওই দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর তাগিদ নিয়ে। বিফল হননি। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে এগিয়ে এসেছেন অন্যান্য স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারাও। এগিয়ে এসেছেন লতিকা মণ্ডল, অপর্ণা দাস, শর্মিলা গণ, পূজা তালুকদারের মতো অনেকে। এগিয়ে এসেছেন এলাকার মানুষও। মঙ্গলবার সকালে দেখা গেলে সংগ্রামপুর-স্বরূপনগর রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে দুর্গতদের জন্য অর্থ সাহায্য সংগ্রহে নেমেছেন তাঁরা। মোটর ভ্যান থেকে বাস, লরি সকলের কাছেই হাতজোড় করে তাঁদের মিনতি, “উত্তরাখন্ডের মানুষগুলো বড় অসহায়। ওঁদের জন্য সাধ্যমত সাহায্য করুন।” দেখতে দেখতে কয়েক মিনিটের মধ্যেই ১০, ২০, ৫০, ১০০ টাকার নোটে ভরে গেলে কৌটো। বোঝা গেল সরাসরি অনেকে পথে না নামলেও ওই দুর্গতদের পাশে আছেন সকলেই।
পথচলতি মানুষের কাছে এ ভাবেই হাত পাতছেন। ছবি: নির্মল বসু।
৬ মাসের বাচ্চাকে শাশুড়ির কাছে ফেলে সাহায্য তুলতে বেরিয়ে পড়েছেন পূজাদেবী। তাঁর কথায়, “মানুষের এমন কষ্ট ঘরে বসে দেখা যায়? তাই মনীষাদি ডাকতেই বেরিয়ে পড়ি।” সংসারের কাজ ফেলে এভাবেই দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে পথে নেমেছেন লতিকা, অপর্ণা, রঞ্জিতা, শর্মিলাদেবীরা। কেউ কেউ ভোরে উঠে রান্না সেরে বেরিয়ে পড়েছেন সংসারের ভার স্বামীর উপরে ছেড়ে দিয়ে। মনীষাদেবীর স্বামী সঞ্জয়বাবু বলেন, “দুর্গত মানুষগুলির সাহায্যে স্ত্রীর এমন উদ্যোগে আমরা গর্বিত। সংসারের কাজ আমিই সামলে নিচ্ছি।” অমিত চক্রবর্তীর কথায়, “মা চাইলেন দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে। আমরাও তাই চাই। এই ক’দিন না হয় বাড়ির কাজকর্ম আমরাই দেখব।”
এ দিন একদল মহিলাকে এই ভাবে রাস্তায় নেমে দুর্গতদের জন্য সাহায্য চাইতে দেখে বাসের এক যাত্রীর মন্তব্য, “খালি শুনি, খারাপ হয়ে যাচ্ছে মানুষ। এঁদের দেখে কি তাই মনে হয়? ভাল মানুষ সব সময়ই রয়েছে।”
গত কয়েকদিনের চেষ্টায় ইতিমধ্যেই ২০ হাজার টাকা তুলে ফেলেছেন মনীষাদেবীরা। তবে এখানেই থামা নয়। আপাতত লক্ষ্য, ৫০ হাজার টাকা তুলে বসিরহাট মহকুমাশাসকের মাধ্যমে দুর্গতদের কাছে পৌঁছে দেওয়া। নিজেদের লক্ষ্যের কথা জানিয়ে মনীষাদেবীর মন্তব্য, “প্রথমে মনে হচ্ছিল কেউ বিশেষ পাত্তা দেবে না। পরে দেখি অনেকেই এগিয়ে এসেছেন। আমাদের এই চেষ্টা দেখে যদি অন্য স্বনির্ভর গোষ্টীগুলিও এ বিষয়ে উদ্যোগী হন তাহলে দুর্গতদের আরও উপকার হবে। মানুষের জন্য কাজে যে এত আনন্দ আগে বুঝিনি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.