|
|
|
|
কেদারনাথ বিধ্বস্ত, নিশ্চিহ্ন গৌরীকুণ্ড |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
দেবভূমিতেই প্রকৃতির রুদ্র-তাণ্ডব।
ভারী বৃষ্টি ও ধসে কেদারনাথ মন্দিরের গর্ভগৃহটি ছাড়া আশেপাশে আর কোনও কিছুর অস্তিত্ব নেই। উদ্ধার হেলিকপ্টার থেকে তুলে নিয়ে আসা ছবি বলছে, মন্দিরের একেবারে গা-ছুঁয়ে থাকা ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের অতিথি নিবাস, বিড়লা গেস্ট হাউস, শঙ্করাচার্যের সমাধি কিছুই আর নেই। মুছে গিয়েছে দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম এই মন্দিরটির চাতাল ও প্রধান ফটকও।
স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গাঁধী সরোবর উপচে আসা বিপুল জলের তোড় ও তার সঙ্গে বড় বড় পাথরের আঘাতে বাড়ি-ঘর ভেঙে মন্দাকিনীতে তলিয়ে গিয়েছে। বহু মানুষ ভেসে গিয়েছেন। মন্দিরের সামনে কালো পাথরে খোদা নন্দী-ষাঁড়ের মূর্তিটি রয়ে গিয়েছে, যার গলা ধরে প্রাণে বেঁচেছেন রুদ্রপ্রয়াগের এসডিএম এল এন মিশ্র। তাঁর ভয়ার্ত চোখের সামনে খড়কুটোর মতো ভেসে গিয়েছেন বেশ কয়েক জন। নিখোঁজ বহু। ধসে পড়া বাড়িগুলির নীচেও অনেকে চাপা পড়ে রয়েছেন। আটকে রয়েছেন শয়ে শয়ে তীর্থযাত্রী। |
|
চার পাশে ধ্বংসের মধ্যে নিঃসঙ্গ কেদারনাথ মন্দির। মঙ্গলবার। ছবি: পিটিআই। |
উখীমঠে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের পরিচালিত স্কুলটির অধ্যক্ষা চন্দ্রিমা সরকার জানাচ্ছেন, লোকমুখে কেদারের ভয়াবহ ছবি পাচ্ছেন তাঁরা। সেখানে অতিথি নিবাসের দায়িত্বে থাকা মহারাজের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় উদ্বেগ আরও বেড়েছে। তাঁদের অতিথি নিবাসটি ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় মহারাজ, কর্মী ও তীর্থযাত্রীরা কে কী-ভাবে রয়েছেন, কোনও খবরই মিলছে না। চন্দ্রিমাদেবী জানাচ্ছেন, স্থানীয় প্রশাসন ও বাসিন্দাদের সূত্রে যা খবর মিলেছে, তা ভয়ানক। গৌরীকুণ্ড ও রামওয়াড়ার জনপদ কার্যত মুছে গিয়েছে। গৌরীকুণ্ডের প্রাচীন মন্দিরটিও হেলে গিয়েছে। তবে গত বছর ধসে বিপর্যস্ত উখীমঠে এ বার ক্ষয়ক্ষতি ততটা হয়নি।
হরিদ্বারে গাড়ির ব্যবসা করেন বিরাটির প্রবীর নাগ। বললেন, এত বছর গাড়োয়ালে রয়েছেন, প্রকৃতির এমন ভয়াবহ রূপ আগে দেখেননি। ওপর থেকে নেমে আসা জল ও টন টন পাথরে গ্রামের পর গ্রাম মুছে গিয়েছে। রাস্তাঘাট কবে ঠিক হবে, কেউ জানে না। উত্তরকাশী ও কেদারনাথ তো এই মরসুমে তীর্থযাত্রীদের জন্য আর খুলবে বলেই মনে হচ্ছে না।
দেবভূমি গাড়োয়ালে প্রকৃতির এই রুদ্র রোষের জন্য জনজোয়ার ও অপরিকল্পিত উন্নয়নকেই দায়ী করছেন পরিবেশবিদরা। তাঁদের অভিযোগ, সরকার পর্যটক টানতেই ব্যস্ত। অথচ এর ফলে পাহাড়ের বাস্তুতন্ত্রের ওপরে মারাত্মক চাপ পড়ছে। সঙ্গে পরিবেশের পরোয়া না করে নদীর গতিরোধ করে গড়ে উঠছে একের পর এক জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এর ফলেই ভারী বর্ষণে ধস নেমে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। |
|
হেমকুণ্ড সাহিব যাওয়ার পথে প্রবল বৃষ্টিতে আটকে পড়েছেন ক্রিকেট তারকা হরভজন সিংহ ও তাঁর পরিবার।
ইন্দো-টিবেটান বর্ডার পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করে নিয়ে যায় জোশীমঠে ত্রাণশিবিরে। অন্যান্য পুণ্যার্থীর সঙ্গে
সেখানেই নিরাপদে হরভজন। তবে সই শিকারিদের হাত থেকে নিস্তার নেই সেখানেও। টুইটার থেকে পাওয়া ছবি। |
উত্তরাখণ্ড আর হিমাচলপ্রদেশ জুড়ে এখন শুধু ধ্বংসের ছবি। জনজীবন পুরোপুরি বিপর্যস্ত। কোথাও কোথাও উদ্ধারকাজ শুরু হলেও অধিকাংশ এলাকা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় সাহায্য পৌঁছনো সম্ভব হচ্ছে না। বৃষ্টি একটু কমলেও উত্তরাখণ্ডে দুর্যোগে আজ প্রাণ হারিয়েছেন আরও ১১ জন। উত্তর ভারত জুড়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮২। উত্তরাখণ্ডে আটকে পড়েছেন প্রায় ৭২ হাজার পর্যটক। হিমাচলপ্রদেশে ১৭০০ মানুষ আটকে। হড়পা বান আর ধসের মধ্যেই দুই রাজ্যে শুরু হয়েছে উদ্ধারকাজ।
রুদ্রপ্রয়াগের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। অলকানন্দার পাড় জুড়ে ৪০টি হোটেল-সহ ৭৩টি বাড়ি সম্পূর্ণ ধুয়েমুছে গিয়েছে। সড়ক পথ পুরোপুরি ধসে যাওয়ায় রুদ্রপ্রয়াগ, চামোলি এবং উত্তরকাশীতে আটকে পড়েছেন অসংখ্য তীর্থযাত্রী। বিপর্যয় মোকাবিলা দল জানিয়েছে, চামোলিতে ২৭ হাজার, রুদ্রপ্রয়াগে ২৫ হাজার এবং উত্তর কাশীতে ৯ হাজার তীর্থযাত্রী আটকে পড়েছেন। তবে উত্তরকাশীতে ভাগীরথী এবং হৃষীকেশে গঙ্গার জল বিপদসীমার কিছুটা নীচে নেমেছে। জলস্রোতে বন্ধ হয়ে গিয়েছে হৃষীকেশ-কেদারনাথ সড়ক, রুদ্রপ্রয়াগে গৌরীকুণ্ড-কেদারনাথ হাঁটাপথ এবং গোবিন্দঘাট-জোশীমঠ সড়ক। চামোলিতে বন্ধ বদ্রীনাথ-হৃষীকেশ জাতীয় সড়কও। তবে আবহাওয়ার সামান্য উন্নতি হওয়ায় এই সব জায়গায় উদ্ধারকাজে হেলিকপ্টার নামানোর চেষ্টা চালাচ্ছে প্রশাসন। চামোলির জেলাশাসক এস মুরুগেশন জানিয়েছেন, গাড়োয়ালে শ্রীনগরের কাছে গোচরে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে কেদার-বদ্রী থেকে হৃষীকেশের রাস্তা। ওপর থেকে গড়িয়ে আসছে বোল্ডার। আটক পর্যটকদের খাবার-জলের বন্দোবস্ত করেছেন স্থানীয় মানুষ।
আজ সকালে কিন্নরে প্রায় ৬০ ঘণ্টা আটকে থাকা হিমাচলের মুখ্যমন্ত্রী বীরভদ্র সিংহকে উদ্ধার করা হয়েছে। বৃষ্টি কিছুটা কমায় আবহাওয়া পরিষ্কার হলে কংগ্রেসের পাঠানো চপার গিয়ে উদ্ধার করে তাঁকে। পাশাপাশি রাজ্য সরকারের আর একটি হেলিকপ্টারে তুলে আনা হয় বয়স্ক এবং অসুস্থ ১২ জনকে। কিন্নরে ১৭০০ মানুষ তিন দিন ধরে আটকে রয়েছেন। হিমাচলপ্রদেশের মুখ্যসচিব সুদৃপ্ত রায় এ দিন বলেন, “শিমলা জেলাই সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আজ সন্ধে থেকেও ফের শুরু হয়েছে বৃষ্টি। হড়পা বানে অধিকাংশ রাস্তাই ধুয়ে মুছে গিয়েছে। সে ক্ষেত্রে আর বৃষ্টি না হলেও, সড়কপথ মাস খানেকের আগে স্বাভাবিক হবে না। এই মুহূর্তে রাজ্য সরকারের উদ্ধারকারী দল ছাড়া সেনাবাহিনীও উদ্ধার কাজে নেমেছে।” সাংলায় ১০০ জন এবং পিওতে ১৫০ জন পর্বত অভিযাত্রী আটকে পড়েছেন বলেও এ দিন জানিয়েছেন মুখ্যসচিব।
|
পুরনো খবর: লাগামছাড়া বৃষ্টি, বিপর্যস্ত উত্তরাখণ্ড-হিমাচল |
|
|
|
|
|