এ বার শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন প্রকল্পে বহু কোটি টাকা দুর্নীতির মামলায় তৎকালীন মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক গোদালা কিরণ কুমার এবং চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাল যুব কংগ্রেস। সোমবার যুব কংগ্রেসের তরফে এসজেডিএ কর্তৃপক্ষকে স্মারকলিপি দিয়ে ওই দাবি জানানো হয়। অভিযোগ, তৎকালীন মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক এবং চেয়ারম্যানকে বাদ দিয়ে ওই দুর্নীতি সম্ভব নয়। অথচ তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ পর্যন্ত করা হয়নি। সে কারণেই তদন্তের মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সিবিআই-কে দিয়ে তদন্তের দাবি তুলেছেন তারা। প্রসঙ্গত, প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও প্রাক্তন মুক্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক তদন্তাধীন কোনও বিষয়ে মন্তব্য করবেন না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছেন।
যুব কংগ্রেসের দার্জিলিং লোকসভা কমিটির সভাপতি অভিজিৎ রায়চৌধুরী বলেন, “বোর্ড মিটিংয়ে একমাত্র সদস্য তথা দলের বিধায়ক শঙ্কর মালাকার এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।” তাঁর কথায়, দফতরের বাস্তুকার এবং কাজের বরাত পাওয়া ঠিকাদারদের একাংশকে ধরা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু তাদের উপরে যারা মাথা ছিলেন তাদের আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে। তাই তাঁরা সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছেন। স্মারকলিপির প্রতিলিপি তারা রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও পাঠাবেন বলে জানান।
মটিগাড়া-নকশালবাড়ির বিধায়ক শঙ্করবাবু বলেন, “দুই বাস্তুকার এবং ঠিকাদার সংস্থার কর্মধারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু যিনি বিষয়গুলি অনুমোদন করেছেন তৎকালীন মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক এবং তাঁকে যিনি নির্দেশ দিয়েছেন তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন তা নিয়ে বোর্ড মিটিংয়ে প্রশ্ন তুলেছি। আশা করি কতৃর্পক্ষ ব্যবস্থা নেবেন।” এসজেডিএ’র মুখ্য কার্য নির্বাহী আধিকারিক শরদ দ্বিবেদী জানান, যুব কংগ্রেসের দাবির বিষয়টি তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানাবেন।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী এসজেডিএ’র বর্তমান চেয়ারম্যান গৌতম দেব জানান, তদন্ত চলছে বলে তিনি বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করবেন না। তবে তাঁর অভিযোগ, “সিপিএমের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে কংগ্রেস।” প্রসঙ্গত, রবিবার বামেদের তরফে সিবিআই তদন্তের দাবি করা হয়। এদিন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেছেন, “শঙ্করবাবুও এসজেডিএ-র সদস্য। তাঁর উপস্থিতিতে নানা প্রকল্পের কাজের অনুমোদন হয়েছে। যা নিয়ে তদন্ত হচ্ছে সে সব সিদ্ধান্ত অনুমোদনের সময়ও তিনি বোর্ড মিটিঙে ছিলেন। তিনি কোনও প্রশ্ন তোলেননি কেন? তা ছাড়া বোর্ড মিটিংয়ে তিনি যে কথা বলেছেন তা নথিভুক্ত রয়েছে। পরের বোর্ড মিটিংয়ে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্তের কথা জানতে পারবেন।” যা শোনার পরে শঙ্করবাবুর জবাব, “আমি বিবৃতির রাজনীতিতে বিশ্বাসী নই। সঠিক পদক্ষেপ করতেই আমি অভ্যস্ত। এ সব নিয়ে কথা না বলে গৌতমবাবু প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন। তা হলে খুশি হব।”
এসজেডিএ-র তরফে মহানন্দা অ্যাকশন প্ল্যানে নিকাশি (এসটিপি-১, এসটিপি-২) তৈরি এবং বাগডোগরা, মালবাজার এবং ময়নাগুড়ি শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি বসানোর কাজে ৫০ কোটি টাকা আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এসজেডিএ’র মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক শরদ দ্বিবেদী দফতরের ২ বাস্তুকার এবং একটি ঠিকাদার সংস্থার বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ জানান। পুলিশ এসজেডিএ’র ৩ জন বাস্তুকার-সহ ৮ জনকে গ্রেফতার করেছে। তবে ওই সমস্ত কাজ যে সময় হয়েছে তৎকালীন মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক ও চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞাসাবাদ না করায় প্রশ্ন উঠেছে। বামেদের তরফে প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোকে ভট্টাচার্য সাংবাদিক বৈঠক ডেকে সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছেন। এবং তৎকালীন চেয়ারম্যান এবং মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। |