জমি অধিগ্রহণ জটে চার লেনের মহাসড়ক তৈরির কাজ থমকে থাকায়, ৩১ ডি জাতীয় সড়কের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব রাজ্য সরকারের হাতে দিল কেন্দ্রীয় সরকার। সেই সঙ্গে শিলিগুড়ির ফুলবাড়ি থেকে জলপাইগুড়ি, ধূপগুড়ি, ফালাকাটা হয়ে সলসলাবাড়ি পর্যন্ত এই সড়ক মেরামতির জন্য প্রায় ৭০ কোটি টাকা অনুমোদন করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। রাজ্য সরকারের পূর্ত দফতর বেহাল জাতীয় সড়ক জরুরি ভিত্তিতে মেরামতির কাজ শুরু করেছে।
সোমবার রাজ্যের পূর্তমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষদস্তিদার বলেন, “রাজ্য সড়ক দীর্ঘদিন ধরেই এই সড়ক মেরামতির উদ্যোগ নিতে কেন্দ্রকে চাপ দিয়ে আসছিল। আমাদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তবে কেন্দ্র যে বরাদ্দ দেবে বলেছে, তা কবে পাওয়া যাবে তার অপেক্ষা না করেই জরুরি ভিত্তিতে কাজ শুরু করা হয়েছে। দ্রুত সড়কের হাল ফিরবে।” প্রায় ১৪৭ কিমি ৩১ডি জাতীয় সড়কের দায়িত্ব রাজ্যের হাতে যাওয়ায়, দীর্ঘদিন ধরে বেহাল থাকা সড়কের রক্ষণাবেক্ষণের টানাপোড়েন যেমন মিটল, অন্য দিকে জমি-জটের কারণে এই সড়কের দায়িত্ব জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ ছেড়ে দেওয়ায় এই সড়কে চার লেনের সড়ক তৈরি নিয়ে নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরি হল বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও জমি অধিগ্রহণ করা নিয়ে পূর্তমন্ত্রী বলেন, “জোর করে জমি কেড়ে নেওয়ার বিরোধী রাজ্য সরকার। সড়ক উন্নয়ন নিগম ইচ্ছুকদের জমি অধিগ্রহণ করছে, সে ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা নেই। তবে জোর করে জমি নেওয়া হবে না।”
খানা খন্দে ভরা জাতীয় সড়ক বর্ষার শুরুতেই পুরোপুরি বেহাল হয়ে পড়ে। সড়ক যাতায়াতের ঝুঁকি এড়াতে বেসরকারি বাসের সংখ্যা কমেছে। দুর্ভোগে যাত্রীরা। এই পরিস্থিতিতে প্রায় সাড়ে ৪৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে সড়কের প্রাথমিক মেরামতির সিদ্ধান্ত নিয়ে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। ২৮ জুন কেন্দ্রীয় সরকারের সড়ক পরিবহণ ও সড়ক মন্ত্রকের সচিব রাজ্যের মুখ্য সচিবকে চিঠি পাঠিয়ে শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি হয়ে যাওয়া সড়ককে রাজ্য সরকারের হাতে দিয়ে দেওয়ার কথা জানায়। এ দিন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের প্রকল্প ম্যানেজার ডি কে আনসারিয়া বলেন, “৩১ ডি জাতীয় সড়ক রাজ্যের পূর্ত দফতরকে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দেওয়া হয়েছে। এবিষয়ে দিল্লি থেকে বিজ্ঞপ্তিও জারি হয়েছে। সে কারণে সড়ক মেরামতির টেন্ডার প্রক্রিয়া নিয়েও নতুন করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
সড়কে যে সংখ্যক ও যে আকারের গর্ত তৈরি হয়েছে তাতে এক-দু দিনের মধ্যে সড়ক দিয়ে যাতায়াত সম্ভব ছিল না বলে পুর্ত দফতর জানিয়েছে। আপাতত গত শনিবার থেকে রাস্তার গর্তগুলিকে কেটে দিয়ে যান চলাচলের উপযুক্ত করার কাজ শুরু হয়েছে।
গুজরাত পোরবন্দর থেকে অসমে শিলচর পর্যন্ত চার লেনের পূর্ব-পশ্চিম মহাসড়কের জন্য শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি ১২এ রাজ্য সড়ককে জাতীয় সড়কে উন্নীত করা হয়। চার লেনের সড়ক তৈরিতে ৪৩৩ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে বলে জানা গিয়েছে। এর বেশির ভাগটাই জলপাইগুড়ি জেলায়। আলিপুরদুয়ারের কংগ্রেস বিধায়ক দেবপ্রসাদ রায় বলেন, “বারবার সংস্কার করে এই সড়কের হাল ফিরবে না। স্থায়ী ভাবে এই সড়কের সমস্যা মেটাতে হলে চার লেনের মহাসড়ক তৈরি করতে হবে। সরকারকে জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।” |