এক হাঁটু জলে জাল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন কয়েক জন যুবক। পাশে দাঁড়ানো আর এক যুবকের হাতে লম্বা বঁড়শির মতো দেখতে একটা জিনিস। যার স্থানীয় নাম কোঁচ। কেউ চলে এসেছেন ঝুড়ি হাতেই। প্রত্যেকের নজর জলের দিকে। মাছের দেখা মিললেই কেল্লাফতে!
পুকুর বা নদী নয়। দমদম পার্কের রাস্তায়, গ্যারাজে ভেসে বেড়াচ্ছে মৌরলা থেকে বাটা, পুঁটি, তেলাপিয়া। শনিবার রাত থেকে টানা বৃষ্টির পরে দমদম পার্কের পাঁচটি ঝিলেরই জল উপচে পড়েছে। সেই ঝিলের মাছ ধরতেই নেমে পড়েছেন বাসিন্দারা।
|
কেমন মাছ ধরেছি! সোমবার। ছবি: শৌভিক দে |
বৃষ্টি থামার পরে কেটে গিয়েছে ২৪ ঘণ্টা। সোমবার দুপুরে রোদও উঠেছিল। কিন্তু জল কার্যত নামেইনি। বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রতি বছরই বর্ষায় দমদম পার্কে জল জমে। তবে ঝিল উপচে জল উঠে আসা ও তার পরে রাস্তায়, উঠোনে, গ্যারাজে মাছ ভেসে বেড়ানো বিরল। কী কী মাছ পেলেন সকাল থেকে? একগাল হেসে দমদম পার্ক লাগোয়া শ্যামনগরের বাসিন্দা অশোক মণ্ডল বলেন, “প্রচুর মৌরলা আর পুঁটি।” প্রায় কোমরজলে কোঁচ দিয়ে মাছ ধরতে ধরতে ওই যুবকেরা জানালেন, সকাল থেকে তেলাপিয়া, শোলও পেয়েছেন তাঁরা। তাঁরা জানালেন, সব থেকে বেশি মাছ মিলছে পাঁচ নম্বর ঝিলের কাছে। ওই ঝিলের ধারে তাই মাছ ধরতে হাজির দমদম পার্কের আশপাশের শ্যামনগর, বরাট কলোনি, লালকুঠির বাসিন্দারা।
পাঁচ নম্বর ঝিলের ধারে গিয়ে দেখা গেল, ধার ঘেঁষেই বয়ে যাচ্ছে বাগজোলা খাল। খালের জল উপচে পড়ছে ঝিলে। ঝিল উপচে রাস্তায়। ফলে খাল, ঝিল, রাস্তা সব এক। তাই ঝিলের আশপাশেই মাছের সংখ্যা বেশি। জল ঢুকেছে লাগোয়া আবাসনের গ্যারাজে, উঠোনে। সুজয় নাথ নামে এক যুবক জানালেন, ঝিলের ধারেই একটি বাড়ির উঠোন থেকে বেশ কিছু তেলাপিয়া পেয়েছেন।
|
এর সঙ্গেই চলছে মাছের সওদাও। রবিবার থেকে জল জমার কারণে কার্যত গৃহবন্দি এক আবাসনের বাসিন্দা বলেন, “আমাদের উঠোন থেকেই কয়েক জন মাছ ধরল। জল ভেঙে আর বাজারে যাইনি। ওদের থেকেই মাছ নিলাম। ওরা অবশ্য পয়সা নেয়নি।” পেশাদার জেলেরা অবশ্য বিনা পয়সার কারবারি নন। রীতিমতো নদীতে বা দিঘিতে মাছ ধরার জাল ফেলে জমা জলে মাছ ধরছেন তাঁরা। এমনই এক জন, মনসুর আলি জানালেন, এ ভাবে ধরা মৌরলা বা বাটা মাছ তাঁরা বাজারে বিক্রি করছেন।
তবে বাড়ির উঠোনে মাছ ধরার এমন ‘সুবর্ণসুযোগ’ সত্ত্বেও বাসিন্দাদের এখন প্রশ্ন একটাই জল কবে নামবে? এক বাসিন্দা অলোক দাশগুপ্ত বলেন, “রোদ উঠল তবু জল নামল না। ফের বৃষ্টি নামলে কী হবে? উঠোনে মাছের দরকার নেই। জল নামাটা অনেক জরুরি।”
দক্ষিণ দমদম পুরসভার দাবি, জল নামতে শুরু করেছে। চেয়ারপার্সন অঞ্জনা রক্ষিত বলেন, “কেষ্টপুরে বাগজোলা খালের লকগেটের কাছে আবর্জনা জমে জল বেরোতে না পারায় খাল উপচে ওঠে। কর্মীরা ওই লকগেট সাফ করছেন। আশা করছি, শীঘ্রই জল নামবে।” |