জালিয়াতির তদন্তে নেমে ব্যাঙ্কের চেকেও ‘প্লাস্টিক সার্জারি’র হদিস পেল লালবাজার। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাপ্রধান পল্লবকান্তি ঘোষ জানান, গুজরাতের একটি সার সংস্থার চেক জাল করে প্রায় দু’কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছিল। কয়েক মাস আগে অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নামে ব্যাঙ্ক জালিয়াতি দমন শাখা। গ্রেফতার করা হয়েছে ওই ঘটনার মূল অভিযুক্ত-সহ চার জনকে। ধৃতদের নাম সুকুমার সুব্রহ্মণ্যম, রাজ কফ্ফুর, সবরিস সিলভারাজ এবং নির্মল সিংহ। প্রথম তিন জন তামিলনাড়ুর বাসিন্দা, নির্মলের বাড়ি সোদপুরে। গোয়েন্দাদের দাবি, নির্মলই এই জালিয়াতির কায়দা রূপায়ণের কারিগর।
পুলিশ সূত্রের খবর, গুজরাতের ওই সার সংস্থার একটি আসল চেকের ছবি জোগাড় করেছিল জালিয়াতেরা। সেই সঙ্গে জোগাড় করা হয় ওই সংস্থার অ্যাকাউন্ট থাকা একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ফাঁকা দু’টি চেক। এর পরে ছবিটি ই-মেল করে পাঠিয়ে দেওয়া হয় নির্মলের কাছে। খালি চেকগুলিও ক্যুরিয়র মারফত সোদপুরে পৌঁছে যায়। বাকিটা নির্মলেরই ‘হাতযশ’ বলে মন্তব্য এক গোয়েন্দাকর্তার।
তদন্তকারীরা জানান, ওই খালি চেকগুলির নম্বর ঘষে তুলে সেখানে আসল চেকের নম্বর বসায় নির্মল। আসল চেকে থাকা গুজরাতের ওই সার সংস্থার নাম এবং সইও জাল করে ওই চেকে বসায় সে। এ ভাবেই তা হয়ে ওঠে গুজরাতের সার সংস্থাটির ‘আসল’ চেক। এর পরে সেখানে ইচ্ছে মতো নাম ও টাকার অঙ্ক বসিয়ে শহরে ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এক শাখায় ভাঙানো হয় চেকটি। সেখান থেকে বৈদ্যুতিন লেনদেনের মাধ্যমে টাকা চলে যায় একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের বড়বাজার শাখায়। সেখান থেকে তুলে নেওয়া হয় নগদ ৬৭ লক্ষ টাকা। বাকি টাকা ফের বৈদ্যুতিন লেনদেনের (আরটিজিএস) মাধ্যমে চলে যায় আর একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের রাসবিহারী অ্যাভিনিউ শাখায়।
কী ভাবে ধরা পড়ল জালিয়াতেরা? পুলিশ জানিয়েছে, বড়বাজারের ব্যাঙ্ক থেকে যে ব্যক্তি টাকা তুলে নেয়, তদন্তে তার খোঁজ পায় পুলিশ। এর পরে অশোক গুপ্ত নামে ওই ব্যক্তি এবং আরও এক জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের জেরা করেই সুব্রহ্মণ্যম ও তার সঙ্গীদের সন্ধান মেলে। তামিলনাড়ু গিয়ে ওই জালিয়াতদের গ্রেফতার করেন ব্যাঙ্ক জালিয়াতি দমন শাখার অফিসারেরা। তাদের জেরা করেই সন্ধান মেলে নির্মলের। লালবাজারের দাবি, তামিলনাড়ু থেকে পাকড়াও করা অভিযুক্তদের নামে বিভিন্ন জায়গায় মামলা রয়েছে। তবে এই কায়দার জালিয়াতি আগে ধরা পড়েনি। |