এক বৃহস্পতিবার বাজার বিষণ্ণ। পরের শুক্রবার শক্তি প্রদর্শন। আগের বৃহস্পতিবার সেনসেক্স পড়েছিল ৫৩৮ পয়েন্ট। গত শুক্রবার তা প্রায় শোধ করে দিয়েছে মুম্বই সূচক। ওই দিন এক ঝটকায় বাজার উঠেছে ৫২০ পয়েন্ট।
বৃহস্পতিবারই গতি পেয়েছিল সেনসেক্স। উঠেছিল ৩২৪ পয়েন্ট। অর্থাৎ পরপর দু’দিনে মুম্বই সূচক উঠল মোট ৮৪৪ অঙ্ক। আবার ১৯ হাজারের বাধা ভেঙে পৌঁছেছে ১৯,৩৯৬ পয়েন্টে। সবার মনেই প্রশ্ন, প্রতিকূলতার মধ্যে হঠাৎ বাজার এতটা উঠল কীসের ভিত্তিতে।
আসলে সবই পরিসংখ্যানের খেলা। বৃহস্পতিবার রিজার্ভ ব্যাঙ্ক প্রকাশ করে ভারতের চলতি খাতে লেনদেন ঘাটতির পরিসংখ্যান, যা দেশের অর্থনীতির কাছে প্রধান চিন্তার কারণ।এই ঘাটতির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার আয় ও ব্যয়ের ফারাক হিসাব করা হয়। দেখা যায়, যা আশঙ্কা ছিল, ঘাটতি তার থেকে বেশ খানিকটা নেমে এসেছে জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে।
বিগত ২০১২-’১৩ আর্থিক বছরের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে ঘাটতির পরিমাণ ছিল মোট জাতীয় উৎপাদনের ৬.৭ শতাংশ। তা শেষ ত্রৈমাসিকে কমে দাঁড়ায় ৩.৬ শতাংশে। ঘাটতি এতটা নেমে আসতে পারে, তা অনেকেই আশা করেননি। শেয়ারের দাম যে-ভাবে পড়ছিল এবং ডলারের দাম বেড়েই চলছিল, তার উপর মলম লাগাতে নির্ধারিত তরিখের এক দিন আগেই ঘাটতির এই অনুকূল তথ্য প্রকাশ করে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।
কাজও হয় মন্ত্রের মতো। আগুনে ঘি পড়ার মতো হঠাৎই তেতে ওঠে ঝিমিয়ে পড়া শেয়ার বাজার। নেমে আসে ডলারের দামও। শুক্রবারের ৫২০ পয়েন্ট উত্থান ছিল গত ২২ মাসে সেনসেক্সের সর্বোচ্চ উত্থান। যে ডলার ‘সিনিয়র সিটিজেন’ হয়ে গিয়েছিল দু’দিন আগে, তা আবার নেমে আসে ৬০-এর নীচে। ৮০ পয়সা কমে বন্ধ হয় ৫৯.৪০ টাকায়।
একই দিনে বাজার পায় আরও একটি উত্তেজক খবর। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নেয় প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বাড়ানোর। প্রতি ১০ লক্ষ ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট গ্যাসের দাম প্রায় দ্বিগুণ বাড়িয়ে করা হয় ৮.৪ মার্কিন ডলার। প্রায় তিন বছর পর বাড়ানো হল গ্যাসের দাম। এই খবরও বাজারকে জ্বলে ওঠার ইন্ধন জোগায়।
বস্তুত বাজারের কাছে এই বার্তা পৌঁছয় যে, সরকার আর্থিক সংস্কার থেকে পিছু হটেনি। গ্যাসের দাম বাড়ার খবরে ওএনজিসি এবং রিলায়ান্স-সহ তেল ও গ্যাস কোম্পানিগুলির শেয়ার তেতে ওঠে। তবে গ্যাসের এতটা দাম বাড়ার প্রভাবে বেড়ে উঠতে পারে বিদ্যুৎ, সার এবং সিএনজি-র দাম। এই ব্যাপারে বিভিন্ন মহল থেকে প্রতিবাদ হওয়ায় শুক্রবার অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম জানান, বিদ্যুৎ এবং রাসায়নিক সার কোম্পানিগুলিকে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি বাবদ ভর্তুকি দেওয়া হবে।
এক দিকে অয়েল ইন্ডিয়া জানিয়েছে, গ্যাসের দাম প্রতি ১ ডলার বৃদ্ধিতে তাদের আয় ৪০০ কোটি টাকা করে বেড়ে উঠবে, তখন এনটিপিসি জানিয়েছে, গ্যাসের দাম প্রতি ১ ডলার বৃদ্ধিতে তাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ ইউনিট প্রতি ৫০ পয়সা বেড়ে উঠতে পারে। সাধারণত মানুষের কাছে এটি অবশ্যই শুভ বার্তা নয়। ‘পৌষ মাস’ এবং ‘সর্বনাশ’-এর এটি একটি আদর্শ উদাহরণ হতে পারে।
এ দু’দিনে বাজার অনেকটা উঠলেও বাজারের এই তেজী ভাব কত দিন বজায় থাকবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। চলতি খাতে লেনদেন ঘাটতি বা কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ডেফিসিট (ক্যাড) কমলেও অর্থনীতি সম্পর্কে দুশ্চিন্তা কিন্তু থেকেই যাবে বলে জানিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।
বাজারের অবস্থা অনেকটা নির্ভর করবে বিদেশি লগ্নিকারীরা শেয়ার বিক্রি বন্ধ করে আবার ক্রেতার ভূমিকায় ফেরে কি না, তার উপর। আশার আলো আছে, মার্কিন অর্থনীতির বৃদ্ধি প্রত্যাশিত হারের তুলনায় কম হওয়ার খবরেও। চলতি আর্থিক বছরের প্রথম তিন মাসে মার্কিন অর্থনীতি আগের তুলনায় বেড়েছে অনেকটা কম হারে। আগাম অনুমান অনুযায়ী আশা করা হয়েছিল, অর্থনীতি হয়তো বাড়বে ২.৪ শতাংশ হারে। বাস্তবে বেড়েছে ১.৮ শতাংশ হারে।
এই পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে অনুমান করা হচ্ছে, বার্নানকে হয়তো পূর্ব পরিকল্পনা মতো দ্রুত গতিতে আর্থিক ত্রাণ প্রকল্প তুলবেন না। অন্য দিকে বিদেশি লগ্নিকারীরাও সম্ভবত মার্কিন মুলুকে ফিরে যাওয়ার আগে আর একবার ভাববেন। এই চিন্তাও হয়তো বাজারকে শক্তি জোগাবে।
ডলারের দাম এতটা বেড়ে ওঠা সত্ত্বেও বিদেশে সোনার দাম ক্রমাগত পড়তে থাকায় ভারতেও শুক্রবার সোনার দাম নামে বেশ খানিকটা। খাঁটি সোনার (২৪ ক্যারাট) দাম ৮৫৫ টাকা কমে নেমে এসেছে ২৫,৭৪০ টাকায়। গয়নার সোনার (২২ ক্যারাট) দাম এখন আরও কম।
ব্যাঙ্ক খোলার জন্য বৃহস্পতিবার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে লাইসেন্স চেয়ে আবেদন করেছে ভারত সরকারের ডাক বিভাগ। দূর-দূরান্তের সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা পৌঁছনোই ডাক বিভাগের লক্ষ্য। ভারতে এখন ডাকঘরের সংখ্যা প্রায় ১ লক্ষ ৫৫ হাজার। এর মধ্যে ১.৩৯ লক্ষ ডাকঘর গ্রামাঞ্চলে অবস্থিত। অনুমোদন পেলে প্রথম বছরেই ব্যাঙ্কের ৫০টি শাখা খুলতে চায় ডাক বিভাগ। ভারতে এখন ব্যাঙ্ক শাখার সংখ্যা কমবেশি ৯০ হাজার। |