পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারের জন্য চলছিল সিপিএমের নিজস্ব ঘরোয়া বৈঠক। সেখানেই ধর্ষিতাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে রাজ্য সরকারের সমালোচনা করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির স্থানীয় এক নেত্রী। সোমবার বিকেলে ডুয়ার্সের কুমারগ্রামের দক্ষিণ নারারথলি লোকনাথপুর গ্রামে সেই ‘অপরাধ’-এ সতী সিংহ নামে সেই নেত্রীকে ‘বিচারসভা’ বসিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠল। সিপিএমের একটি বুথ অফিস ভাঙচুরের অভিযোগও উঠেছে। তৃণমূল অবশ্য দাবি করেছে, দলের নেত্রী সম্পর্কে ‘কুরুচিকর মন্তব্য’ করেছেন সতীদেবী। তারপরে সতীদেবী ‘নিজেই ভুল স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।’
সিপিএমের অভিযোগ, তাঁদের সভাতেই চড়াও হয়েছিলেন তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব। সতীদেবী কী বলছিলেন তা ওই সভায় উপস্থিত কারও মোবাইল ফোন থেকে তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্বের কানে চলে যায়। এরপরে তখনই সিপিএমের সভা ভণ্ডুল করে ‘বিচারসভা’ বসিয়ে সতীদেবীকে বাধ্য করা হয় ভুল স্বীকার করতে। সতীদেবীর কথায়, “ঘরোয়া বৈঠকে রাজ্য সরকার ধর্ষিতাদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার যে ঘোষণা করেছে, আমি তার সমালোচনা করেছি। এটা বলেছি, এর মাধ্যমে মহিলাদের সম্মানের দাম ঠিক করা হয়ে যাচ্ছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠতে পারে। ওই বৈঠক শেষ হওয়ার আগেই ১০-১২ জন তৃণমূলকর্মী সেখানে পৌঁছে আমাকে হুমকি দিতে শুরু করেন। আমি ভয়ে ক্ষমা চাই।”
তৃণমূলের পাল্টা দাবি, সতীদেবী ঘরোয়া বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কুরুচিকর মন্তব্য করে প্রচার করছিলেন। সে খবর এলাকায় চাউর হয়ে যায়। সেই সময় তৃণমূল নেতা-কর্মীরা গিয়ে সতীদেবীর কাছে বিষয়টি জানতে চান। তৃণমূলের কামাখ্যাগুড়ি অঞ্চল কমিটির সম্পাদক অজিত সাহা বলেন, “ওই মহিলা দলীয় নেত্রী সম্পর্কে যে নোংরা মন্তব্য করেছেন, তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। আমরা জানতে পেরে তাঁর কাছে যাই। কেন এমন মন্তব্য করা হল, তা জানতে চাই। তখন তিনি ভুল স্বীকার করে সকলের সামনে ক্ষমা চেয়ে নেন।” তাঁর দাবি, “এখানে অন্যায় কোথায়? অথচ এর পরেই সিপিএম আমার বিরুদ্ধে থানায় মিথ্যে অভিযোগ করেছে।” তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলা কমিটির সদস্য অঞ্জু ঘোষেরও দাবি, সতীদেবীকে ভয় দেখানো হয়নি। সতীদেবী অবশ্য বলেছেন, “আমার বক্তব্যকে বিকৃত করে আমাকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়। আমি কারও সম্পর্কে কোনও খারাপ মন্তব্য করিনি। ওঁরা এখন মিথ্যে কথা বলছেন।”
মঙ্গলবার রাতে সিপিএম-তৃণমূল দু’তরফই পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছে। বুধবার পুলিশ ঘটনার তদন্তে নেমেছে। আলিপুরদুয়ারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আকাশ মেঘারিয়া বলেন, “সিপিএমের পক্ষ থেকে তিন জনের বিরুদ্ধে ও তৃণমূলের পক্ষ থেকে এক জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে।” অবশ্য সিপিএমের কুমারগ্রাম জোনাল কমিটির সম্পাদক গরেন রায়ের দাবি, অভিযোগ করার পরেও পুলিশ নিষ্ক্রিয়। |