কাশ্মীরে জঙ্গি হানায় গ্রামের ছেলের আকস্মিক মৃত্যু এবং সেই খবর পেয়ে স্ত্রীর আত্মঘাতী হওয়াএই জোড়া মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে তালড্যাংরা থানার পাঁচমুড়া গ্রামে।
সোমবার শ্রীনগরের কাছে জঙ্গিদের গুলিতে মারা যান এই গ্রামের বাসিন্দা, রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের জওয়ান অদ্বৈত নন্দী। সেই খবর পেয়ে মঙ্গলবার রাতে শ্বশুরবাড়িতে গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মঘাতী হন অদ্বৈতের স্ত্রী, কলেজছাত্রী পিউ। তার পর থেকেই গ্রামের মানুষ রয়েছেন নন্দী পরিবারের পাশে। সান্ত্বনা দিচ্ছেন বাড়ির লোকেদের। বুধবার দুপুরে ওই গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, সেনাবাহিনীর জওয়ানদের একটি গ্রুপ ফটো হাতে নিয়ে পাথরের মতো বসে আছেন অদ্বৈতের বাবা সুশীল নন্দী। হাতড়ে বেড়াচ্ছেন নিজের বড় ছেলের ছবি। দু’চোখ দিয়ে সমানে বয়ে চলেছে জলের ধারা।
নিহত জওয়ানের সত্তরোর্ধ্ব ঠাকুরমা বাড়ির উঠোনে চুপ করে বসে। হাউহাউ করে কেঁদে চলেছেন অদ্বৈতের পিসি অঞ্জলি বাসুলি ও মাসতুতো বোন মালতি পাল। প্রতিবেশীরা জানালেন, অল্প বয়সেই মাকে হারিয়েছিলেন অদ্বৈত। |
তার পর থেকে পিসিই দুই ভাইকে মানুষ করেন। বাঁকুড়া মেডিক্যাল চত্বরে এ দিন পিউয়ের বাবা দীনবন্ধু দে বলছিলেন, “শ্রীনগরে যাওয়ার আগে জামাই বলে গিয়েছিল, তাড়াতাড়ি পঞ্জাবে বদলি হয়ে যাবে সে। তখন পিউকে তার কাছে নিয়ে যাবে। কিছুই আর হল না। সব শেষ হয়ে গেল!” কিছুক্ষণ থেমে রইলেন। তার পর কাঁপা গলায় ফের বললেন, “ওরা দু’জন দু’জনকে খুব ভালবাসত। কেউ কাউকে বেশিক্ষণ ছেড়ে থাকতে পারত না। তাই অনেক ব্যস্ততার মাঝেও পিউকে রোজ এক মিনিটের জন্য হলেও ফোন করত অদ্বৈত। পিউ সারাদিন ওই ফোনের অপেক্ষায় থাকত। ফোনটা কোনও সময় হাতছাড়া করত না।”
স্বামীর মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর থেকেই পিউ বলে যাচ্ছিলেন, ‘আমি এ মুখ আর কাউকে দেখাব না’। দীনবন্ধুবাবু জানান, আগুনে প্রায় ৯০ শতাংশ পুড়ে যাওয়া পিউকে মঙ্গলবার গভীর রাতে হাসপাতালে নিয়ে আসার পর যখন চিকিৎসা শুরু হল, তখনও তিনি ক্ষীণ গলায় বলছিলেন, ‘আমি ওর কাছে যাব, আমাকে বাঁচিও না’। দুই পরিবারেরই প্রশ্ন, কোন জঙ্গি গোষ্ঠী কী পাওয়ার আশায় এই আক্রমণ ঘটালো? উত্তর জানা নেই কারও। |