ব্যারাকপুর উপ-সংশোধনাগারের (সাব জেল) ডেপুটি জেলারের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। বুধবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে সাব জেলের পাশে জেলারের কোয়ার্টার্সে। মৃতের নাম কৌশিক দাস (৩৬)। পুলিশ গিয়ে দরজা ভেঙে বাড়িতে ঢুকে ঝুলন্ত অবস্থায় কৌশিকবাবুর দেহ উদ্ধার করে।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসক। এই ঘটনায় ম্যাজিস্ট্রেট তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি, পুলিশের তদন্তও চলবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। পুলিশ জানায়, এই মৃত্যুর কারণ কী, তা এখনও পরিষ্কার নয়। তবে প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, এটি আত্মহত্যা। কৌশিকবাবু মানসিক অবসাদে ভূগছিলেন বলেই ধারণা পুলিশের। ঘটনাটির তদন্ত শুরু হয়েছে। মহাকরণে আইজি (কারা) রণবীর কুমার বলেন, “পুলিশ এই ঘটনার তদন্ত করছে। তদন্তের রিপোর্ট পেলেই বোঝা যাবে, কী ঘটেছে।”
উল্লেখ্য, এই সাব জেলে আগের জেলারের নামেও নানা ধরনের অভিযোগ নিয়ে ভিজিল্যান্স তদন্ত শুরু হয়। পাশাপাশি, হয় পুলিশি তদন্তও। এর পরেই কৌশিকবাবুকে ব্যারাকপুরে পাঠানো হয়েছিল গত অগস্ট মাসে। ১১ মাসের মধ্যেই আবার এমন দুর্ঘটনা ঘটায় চিন্তায় পুলিশ-মহল।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিদিনের মতো এ দিনও কৌশিকবাবু ভোর ৬টা নাগাদ জেলে এসেছিলেন বন্দিদের ‘আন-লক’ (যাঁদের আদালতে পাঠানো হবে তাঁদের জেলারের অফিসে আনা) করতে। ওই সময়ে তিনি প্রায় পৌনে ৭টা পর্যন্ত অফিসে ছিলেন। তার পরে আবার নিজের ঘরে ফিরে যান কৌশিকবাবু। সকাল ১০টায় বন্দিদের আদালতে পাঠানোর জন্য তাঁর আবার ৯টায় অফিসে আসার কথা ছিল।
কিন্তু এ দিন আর অফিসে ফিরে আসেননি তিনি। |
পুলিশ জানিয়েছে, ডেপুটি জেলার না আসায় তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলেন দুই কর্মী। ডাকাডাকি করে সাড়া না পেয়ে ঘরের জানলা দিয়ে উঁকি দিতেই তাঁরা দেখতে পান, কৌশিকবাবু সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় দড়ি বেঁধে ঝুলছেন। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে মৃতদেহটি উদ্ধার করে। ঘটনাস্থলে পৌঁছন মহকুমাশাসকও। সুরতহাল করে দেহটি ময়না-তদন্তের জন্য পাঠানো হয়।
পুলিশ সূত্রে খবর, ব্যারাকপুরের সাব জেল সম্পর্কে অভিযোগ পেয়ে গত বৃহস্পতিবারই এআইজি কারা (দক্ষিণবঙ্গ) বিচিত্রা ভট্টাচার্য-সহ কারা দফতরের অফিসারদের একটি দল এখানে তদন্তে আসেন। ওই সময়ে বন্দিদের হাত থেকে মোবাইল ফোন, আই ফোন থেকে শুরু করে নগদ ৬০ হাজার টাকাও আটক করেন তাঁরা। কৌশিকবাবুকে শো-কজ করা হয়। কারা দফতরের এক উচ্চপদস্থ কর্তা ওই দিন তাঁকে খুব বকাঝকাও করেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। পাশাপাশি, ওই দিনই শরৎ গাঁধী নামে এক বন্দির বিরুদ্ধে জেলের অন্যান্য বন্দিদের ভয় দেখিয়ে টাকা তোলার ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগ মেলায় তাকেও দমদম জেলে সরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। এই দুই ঘটনার সঙ্গে ডেপুটি জেলারের মৃত্যুর কোনও সম্পর্ক রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
ব্যারাকপুর সাব জেল সূত্রে খবর, বিষয়টি নিয়ে কারা দফতরের মধ্যেই চাপান-উতোর শুরু হয়েছে। ‘শাস্তির মুখে পড়ে অপমানে আত্মঘাতী হয়েছেন কৌশিক’এমন মন্তব্য করছেন কারারক্ষীরাই। তাঁদের ক্ষোভ, যেখানে রাজ্যের সমস্ত জেলের মধ্যেই অনিবার্য ভাবে টাকা, মাদক সেবন, মোবাইল ব্যবহার চলছে, এবং যার সঙ্গে উঁচু থেকে নীচ তলা পর্যন্ত কারা দফতরের অনেকেই ‘জড়িত’, তার মাসুল কেন দিতে হবে কৌশিকবাবুদের মতো এক-দু’জনকে। কৌশিকবাবু আদৌ এ সবে জড়িত কি না, সে প্রশ্নও ওঠে। এ দিন ঘটনাস্থলে যান স্টেট গভর্নমেন্ট জেল এমপ্লয়িজ ফেডারেশনের কর্মকতারা। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক (রাজ্য) অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘রাজ্যের সেন্ট্রাল জেলগুলিতে খুঁজলে অন্তত ৫০০টির মতো এমন বেআইনি জিনিস মিলবে। সর্ষের মধ্যে ভূত রয়েছে। এই দায় এক জনের মাথায় চাপালে যা
হয়, কৌশিকবাবুর ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। কারা দফতরের কর্তার বেহিসেবি আচরণই পুরোপুরি এই মৃত্যুর জন্য দায়ী।’’
এ ব্যাপারে বিচিত্রা ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ওই জেলারের সঙ্গে আমি কোনও কথা বলিনি। তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি।’’ কারাকর্তাদের একাংশ পাল্টা প্রশ্ন তোলেন, অনিয়ম ঠেকাতে এ রকম শাস্তি না দেওয়া হলে অপরাধ ঠেকানো যাবে কী করে? তবে এ ব্যাপারে আইজি (কারা) রণবীর কুমার শুধু বলেন, ‘‘মৃত্যুর তদন্ত হবে। এখনই আর কিছু বলা যাবে না।’’
|