শারাপোভার সঙ্গে গ্ল্যামার
বিদায় নিল, হয়তো গসিপও
সেরেনা উইলিয়ামস যখন বৃহস্পতিবার তাঁর সাংবাদিক সম্মেলন করতে আসবেন, তখন অবধারিত তাঁর জন্য একটা প্রশ্ন বিশ্ব মিডিয়া রেডি করে রাখবে। শুধু ব্রিটিশ প্রেস নয়।
আপনার সঙ্গে বিতর্কই কি শারাপোভার ফোকাস নড়িয়ে দিয়েছিল?
আরও একটা প্রশ্ন অবধারিত হবে। উইম্বলডনের এ বারের কোর্টগুলো কি সত্যিই খেলার অযোগ্য? আপনি কী মনে করেন?
অল ইংল্যান্ড ক্লাবের দীর্ঘ ঐতিহ্যশালী ইতিহাসে বুধবার যা ঘটেছে, নজিরবিহীন। দেশে বিদেশে প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত টেনিস-ভক্তরা। ইলিং ব্রডওয়ে স্টেশনে সাউথফিল্ড থেকে ফেরা একদল যুবক তীব্র জটলায় মত্ত। আমাদের দেশে যেমন হয় এবং এখানে প্রায় হয় না বললেই চলে। জটলায় অবশ্যই কিছু ভারতীয় মুখ। যাদের বক্তব্য, বৃহস্পতিবার উইম্বলডনে ব্ল্যাক ডে পালন করা উচিত। কর্তারা যদি করতে অস্বীকার করেন, খেলোয়াড়রা নামুন কালো আর্মব্যান্ড পরে। রাফায়েল নাদালের প্রথম রাউন্ডে বিদায় প্রথম দিনই উইম্বলডনকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। তখন অবধি বলা হচ্ছিল স্বাভাবিক ইন্দ্রপতন। বুধবার সেই কোরাসটা অন্য চেহারা নিয়েছে মারিয়া শারাপোভা বিদায় নেওয়ার পর।
একই দিনে নাম তুলে নিয়েছেন ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কা। দুই মহিলাই বার দুয়েক করে কোর্টে পড়েছেন আর প্রচণ্ড যন্ত্রণা পেয়েছেন। তৃতীয় দিনে পড়া উইম্বলডনে মনে হচ্ছিল যে, গসিপ একটা বড় চেহারা নিচ্ছে। বিশেষত যেখানে লাঠালাঠি শুরু হয়ে গিয়েছে মহিলাদের মধ্যে। বুধবার শারাপোভা পর্তুগালের অনামী প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে ৩-৬, ৪-৬ হেরে যাওয়ায় এবং আরও বেশ কয়েক জন নাম তুলে নেওয়ায় এখন বিতর্কের আগুন জ্বলছে। এ বারের কোর্ট তার মানে কি স্লো-ই শুধু নয়, অসমান? এত চোট লাগছে কেন?
সেরেনা বনাম শারাপোভা ফাইনাল আসন্ন ধরে নিয়ে উইলিয়াম হিলস বেট অবধি দিয়ে দিয়েছিল। যাঁরা সেখানে পাউন্ড লাগাননি, তাঁরাও মনে মনে একটা ফাইনাল কল্পনা করে বসেছিলেন। যেখানে সেরেনা বনাম শারাপোভারূপসী দুই মহিলারই ফাইনাল নয়। ত্রিকোণ প্রেমের একটা চক্করও বটে।
উইম্বলডনে পতন। মিশেলের বিরুদ্ধে।
ফ্ল্যাশব্যাকে যাওয়া যাক চব্বিশ ঘণ্টা আগে। যেখানে ১৮ নম্বর কোর্টে সার্ভ করছেন গ্রিগর দিমিত্রভ। দিমিত্রভের মধ্যে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার ন্যূনতম সম্ভাবনাও এখনও কেউ দেখেনি! উইম্বলডন জেতারও না! বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে বালগেরীয় ২৮ নম্বরে। এ রকম কত প্লেয়ার আসে-যায়। ২৮ থেকে ২৮০ হয়ে মিলিয়ে যায়। কেউ খোঁজও রাখে না। এ বারের উইম্বলডন কিন্তু শারাপোভা-বিদায়ের আগে পর্যন্ত দিমিত্রভের এত খোঁজ রাখছিল যে বলার নয়।
হয়তো বিদায়ের পরেও অন্য কারণে রাখবে। মঙ্গলবার শেষ বিকেলে যখন দিমিত্রভের প্রথম রাউন্ড ম্যাচটা শুরু হয়, তখন অর্ধেক ভিড়টা বেরিয়ে নিকটস্থ টিউব স্টেশন সাউথ ফিল্ডসের দিকে হাঁটা মারার কথা। অথচ আঠারো নম্বর কোর্টে এমন জাঁকিয়ে লোক বাড়ল যে কোর্টের মধ্যে সব জায়গা ভর্তি। ওপরের স্ট্যান্ডেও। টয়লেট যাওয়ার পথে একটা ফাঁকা জায়গা আছে সেখান থেকে কোর্টটা ভাল দেখা যায়। যেমন আমাদের ময়দানের র্যাম্পার্ট। তা সেখানেও ভিড় দাঁড়িয়ে গেল। ছ’ফুট লম্বা, খোঁচা দাড়ি আর পেটানো চেহারার দিমিত্রভ যে এ বারের উইম্বলডনের সেরা আইক্যান্ডি। বিদ্রুপ করে যাঁকে পিছনের স্ট্যান্ড নিচু গলায় বলছিল, ওই যে টয়বয়!
মনে করার কোনও কারণই নেই যে দিমিত্রভ স্থানচ্যুত করতে পেরেছেন ব্রিটেনবাসীর হৃদয়ে গত কয়েক বছর অধিষ্ঠান করা মানুষকে। যার নাম অ্যান্ডি মারে। কলকাতায় যেমন সৌরভ, উইম্বলডনে তেমনই মারে। সৌরভের বত্রিশ বছর আগে তো তবু পঙ্কজ রায় বলে কেউ টেস্ট খেলেছিলেন। মারে-র মধ্যে ব্রিটেনবাসী যে উইম্বলডন খেতাব দেখার জন্য প্রতি বছর উদগ্রীব হয়ে থাকে আর হতাশ হয়, সেটা এখানকার যে ভদ্রলোক শেষ জিতেছিলেন, তখনও রবীন্দ্রনাথ বেঁচে। তাঁর নাম ফ্রেড পেরি।
কোর্ট অঞ্চলে ঢোকার মুখেই ফ্রেড পেরির বিখ্যাত মূর্তি। যার উল্টো দিকে স্ট্রবেরি অ্যান্ড ক্রিমের পৃথক কাউন্টার। কালীঘাট গেলে যেমন পুজো না দিয়ে আসার কথা নয়। তেমনই উইম্বলডন গিয়েও দু’শো পঁচিশ টাকা খরচায় স্ট্রবেরি অ্যান্ড ক্রিম খেয়ে আসাটা মাস্ট। বুধবার বিকেলে ছবি তোলার সবচেয়ে লোভনীয় এই দু’টো স্পটে ভিড় কম। কারণ কিছু ভিড় দু’নম্বর কোর্টে টেনে নিয়ে গিয়েছেন শারাপোভা। আর বাকি পুরোটাই এক নম্বর কোর্টে মারে!
প্রেমিক দিমিত্রভের
সঙ্গে শারাপোভা।
উইম্বলডনে মডেল
নাওমি ক্যাম্পবেলের স্টাইল স্টেটমেন্ট।
ডিউক অব কেন্ট সচরাচর ছোটখাটো ম্যাচে আসেন না। আজ দ্বিতীয় রাউন্ড দেখতেও চলে এসেছিলেন। মারের একই অর্ধে থাকা নাদাল প্রথম রাউন্ডেই ছিটকে যাওয়ায় এ দেশ অ্যাসেজ জেতাটেতাকে আপাতত রান্নাঘরের ময়লা ফেলার বাক্সে ঢুকিয়ে দিয়েছে। একটাই কামনা এখন— অ্যান্ডি এ বার যেন...। উইম্বলডনের ইতিহাসে কালো বুধবারে ফেডেরার, সঙ্গা ছিটকে যাওয়ায় এই অর্ধে মারের তিন প্রতিদ্বন্দ্বী ভূতলশায়ী। মারের সামনে তাই ফাইনালের রাস্তা কার্যত ফাঁকা। ইন্টারেস্টিং হল, মারে-র চেয়ে দিমিত্রভের ম্যাচে মা-মাসিমাদের ভিড় বেশি। ওটা যদি টেস্ট ক্রিকেট হয়, এটা যেন আইপিএল! দিমিত্রভ আসলে সেরেনা উইলিয়ামসের প্রাক্তন প্রেমিক। মারিয়া শারাপোভার বর্তমান। এই যৌথ সংযোগ তাঁকে এমন অপ্রতিরোধ্য চৌম্বকক্ষেত্র করে তুলছে যে লোকে রিটার্ন বা সার্ভিস ভুলে স্রেফ দিমিত্রভকে দেখতেই চলে আসছে। সামনে দুই মাসিমা দিমিত্রভকে নিয়ে প্রখর আলোচনা-ব্যস্ত। এক জন শুনলাম ফ্রান্সে অধ্যাপিকা। এস সার্ভ দিয়ে এ বারের উইম্বলডন অভিযান শুরু করেছেন দিমিত্রভ। ফর্টি লাভ এবং তার পর গেম। সামনের তরুণদের গ্রুপ চ্যাংড়ামি শুরু করে দিল, লাভ গেম দিমিত্রভ। লাভ গেম। অধ্যাপিকা ও তাঁর সঙ্গী তখনও চুপচাপ। কিন্তু প্রথম সেট শেষ হওয়ার অনেক আগেই তাঁরা প্রবল আলোচনায় ডুবে গেলেন। দিমিত্রভকে কার সঙ্গে বেশি মানায়? শারাপোভা না সেরেনা?
তার চেয়েও অনেক প্রাসঙ্গিক সমবেত জিজ্ঞাসা: শারাপোভা কি এসেছেন? এলে কোথায় বসেছেন? বাকি সব কোর্টের প্রবলতর প্রতিদ্বন্দ্বী ভুলে গোটা মিডিয়ার ঝাঁক সেখানে হাজির। কেউ তখনও আঁচ করতে পারছে না, চব্বিশ ঘণ্টা পরেই যে ওঁত পেতে আছে টুর্নামেন্টের সবচেয়ে গভীর বিষণ্ণতা। কালকের জল্পনার কারণ ছিল গত পরশুই তো শারাপোভা-দিমিত্রভের ছবি পাপারাৎজি পেয়েছে। লন্ডনের জাপানি রেস্তোরাঁয় দু’জনে খেতে বেরিয়েছিলেন। তার আগে মাদ্রিদ ওপেনের সময়েও তো একসঙ্গে ওঁদের দেখা গিয়েছে। আর তখনই প্রেমের খবরটা চাউর হয়। এ বারে তো আরওই ব্যাপারটা খুল্লমখুল্লা হয়ে গিয়েছে শারাপোভা বনাম সেরেনাতীব্র বক্তব্যের লড়াইয়ে। যার মূলে সেই দিমিত্রভ।
শারাপোভা শুধু আসবেনই, না কী স্টাইল স্টেটমেন্ট সমেত কোর্টে আসবেন, তার তীব্র জল্পনায় তখন আঠারো নম্বর কোর্ট ভরপুর। কেউ ভাবতেই পারছে না যে, তিন নম্বর বাছাইকে ঘিরে অন্তত এ সপ্তাহে কোনও দুঃখজনক কারণ তৈরি হতে পারে বলে। এমনিতে উইম্বলডন বরাবরই মহিলাদের ফ্যাশন মেলা। পৃথিবীর আর কোনও স্পোর্টস টুর্নামেন্ট দেখতে লোকে এত সেজেগুজে যায় না। এই দু’দিনের গরম অগ্রাহ্য করে ডিজাইনার সব জ্যাকেট। বেশির ভাগই ফ্লোরাল। যা এ বারের ফ্যাশন। মডেল নাওমি ক্যাম্পবেল আগের দিন এমন একটা জ্যাকেট পরেছিলেন যা এ বারের উইম্বলডন ফ্যাশন পেজে ঢুকে গিয়েছে। জুতোতেও কত রকম বৈচিত্র। হেয়ারস্টাইলে। প্রায় প্রত্যেকের পায়ে স্টিলেটো। কী করে ওই উঁচু উঁচু স্ট্যান্ডের সিঁড়ি ওঠা আর নামা ম্যানেজ করছেন, মহিলারাই জানেন। আগেকার দিনে ফ্যাশনটা দর্শকদের জন্যই ছাড়া থাকত। খেলাটা প্লেয়ারদের জন্য। অর্থাৎ স্টেফি গ্রাফের ফোরহ্যান্ডই দেখব। সাজবআমরা যারা এসডব্লিউ নাইন্টিনে আসছি হয় ব্ল্যাক ক্যাবে চেপে। নইলে ডিস্ট্রিক্ট লাইনের টিউব ধরে।

চোট ছিটকে দিল যাঁদের। মাটিতে পড়ে ক্যারোলিন ওজনিয়াকি।
এখন সে দিন নেই। ফেডেরার, শারাপোভা আর সেরেনার আমলে প্রেক্ষিতটা পুরো বদলে গিয়েছে। এখন প্লেয়াররাই প্রতিদিন শার্ট, হেডব্যান্ড বা জুতোয় কোনও না কোনও নতুনত্ব আনেন। উইলসন র্যাকেট দিয়ে খেলা দিমিত্রভের তেমন কিছু নেই। আর বোঝাও যাচ্ছে, এত মনোযোগে কিছুটা অস্বস্তি হচ্ছে তাঁর। তা-ও তো আলোচনাগুলো শুনতে হচ্ছে না তাঁকে, রক্ষা। মহিলারাই গেমে বিরতি হওয়া মাত্র নিরন্তর কথা বলে যাচ্ছেন, এক জনের র্যাঙ্কিং দুই (শারাপোভা), আর এক জনের আঠাশ (দিমিত্রভ)। মহিলার বয়স ছাব্বিশ। পুরুষের বাইশ। এদের প্রেম হল কী করে!
লিয়েন্ডার পেজকে দেখলাম তখন। আঠারো নম্বর কোর্টের পাশ দিয়ে ফেরত যাচ্ছিলেন প্লেয়ার্স লাউঞ্জে। সাইড কোর্টে প্র্যাক্টিস করে ফিরছেন। উইম্বলডনের রোল অফ অনার লিস্টে নাম রয়েছে লিয়েন্ডারের। নব্বই সালে জুনিয়র উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন হন। যেমন রমেশ কৃষ্ণন হয়েছিলেন ১৯৭৯-তে। ওই লিস্টে প্রাক্তন জুনিয়র বিজয়ী হিসেবে চারটে মাথা ঘুরিয়ে দেওয়া নাম রয়েছে। বিয়র্ন বর্গ, ইভান লেন্ডল, প্যাট ক্যাশ ও রজার ফেডেরার। এই লিয়েন্ডারকে বেশ ক্লিষ্ট, টেনসড দেখাচ্ছে। কোনও ব্যক্তিগত সমস্যা নাকি? না কি টেনিস সংক্রান্ত? রাতের দিকে জানা গেল, কালো বুধবারে হতাশার শিকার তিনিও। তাঁর ডাবলস সঙ্গী রাদেক স্টেপানেক, যাঁকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতেছিলেন, তিনি নাকি হঠাৎ চোটের জন্য সিঙ্গলস থেকে নাম তুলে নিয়েছেন। ধরে নেওয়া হচ্ছে স্টেপানেক ডাবলসও খেলবেন না। লিয়েন্ডারকে হয়তো ওয়াকওভার দিয়ে দিতে হবে বৃহস্পতিবার।
মহেশ ভূপতি যে ক্রিকেটের ধাঁচে টেনিসে আইপিএল করছেন, তাতে কি লিয়েন্ডার খেলবেন আগামী বছর কলকাতার হয়ে?
“কীসের আইপিএল—কলকাতা? আমি তো কিছুই জানি না,” বললেন লিয়েন্ডার।
তা কি হয় নাকি? কলকাতা খেলবে, আপনি খেলবেন না?
“সত্যি নো আইডিয়া,” লিয়েন্ডার অদৃশ্য হয়ে গেলেন প্লেয়ার্স লাউঞ্জের দিকে।
মহেশ ততক্ষণে প্র্যাক্টিস ফেরত হোটেলে। বুধবার অ্যান্ডি মারের ম্যাচের ঠিক আগে অস্ট্রিয়ান জুড়িকে নিয়ে তাঁর ডাবলস ম্যাচটাও তো চলছিল। যেখানে তৃতীয় সেট গড়াতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন দর্শকাসনে থাকা সস্ত্রীক জয়দীপ মুখোপাধ্যায়। জয়দীপ আইপিএলে কলকাতা টিমের মেন্টর কাম কোচ। যার হয়ে খেলতে পারেন নাদাল বা জকোভিচ। কিন্তু লিয়েন্ডার স্কোয়াডে থাকবেন না হয় নাকি, যতই হোক মহেশ পরিচালিত।
আচ্ছা ওদের যখন প্রথম ঝগড়া শুরু, তখন কি রবীন্দ্রনাথ বেঁচে ছিলেন?




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.