|
|
|
|
ফেরত যাবে ভর্তুকির টাকা |
খামতি ঋণ পরিশোধে, কর্মসংস্থান প্রকল্পে ধাক্কা
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
ঋণ নিয়েও পরিশোধ না করায় ব্যর্থ হতে চলেছে ‘প্রধানমন্ত্রী কর্মসংস্থান সৃষ্টি যোজনা’র লক্ষ্য। ঋণ পরিশোধের হার কম হওয়ায় ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বেশিরভাগ আবেদনকারীই ঋণ পেলেন না। এমনকী যাঁদের ঋণ মঞ্জুর হয়েছে, তাঁদেরও টাকা পেতে দেরি হচ্ছে বলে অভিযোগ।
ব্যাঙ্কের বক্তব্য, ২০১০-১১ আর্থিক বছর বা তার আগের ঋণ পরিশোধের হার মাত্র ২৩ শতাংশ। এই অবস্থায় অনেক ভাবনাচিন্তা করে ঋণ দিতে হচ্ছে। সমস্যার কথা মেনে নিয়ে জেলা শিল্প কেন্দ্রের আধিকারিক প্রহ্লাদ হাজরা বলেন, “ঋণ পরিশোধ একটা সমস্যা ঠিকই। তবু এই ব্যাপারে সাহায্যের জন্য ব্যাঙ্কগুলিকে আবেদন করা হয়েছে। ব্যাঙ্কগুলির সঙ্গে আলোচনাও চলছে।” কিন্তু ঋণ পরিশোধের হার এত খারাপ কেন? জেলা শিল্প কেন্দ্র জানিয়েছে, এই প্রকল্পে ঋণ নিয়ে ৫০ শতাংশ উদ্যোগপতি ভাল কাজ করছেন। ৪০ শতাংশ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। ১০ শতাংশ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সফল ৫০ শতাংশ উদ্যোগপতিও নিয়ম মেনে ঋণ পরিশোধ করেন না বলেই এই অবস্থা!
তা হলে ঋণ দেওয়া বন্ধ না করে যাঁরা পরিশোধ করছেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেই তো হয়।
পশ্চিম মেদিনীপুরে ব্যাঙ্কের লিড ডিস্ট্রিক্ট ম্যানেজার সমরেন্দ্র সন্নিগ্রাহী বলেন, “তাই হচ্ছে। সমস্ত ব্যাঙ্ককে বলা হয়েছে, তালিকা তৈরি করতে। ইচ্ছাকৃত ভাবে যাঁরা ঋণ পরিশোধ করছেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ারও পরিকল্পনা করা হয়েছে।”
প্রধানমন্ত্রী কর্মসংস্থান সৃষ্টি যোজনা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। যে প্রকল্পে একজন বেকার যুবক-যুবতী উৎপাদনমুখী প্রকল্প তৈরির জন্য সর্বোচ্চ ২৫ লক্ষ টাকা ঋণ পেতে পারেন। পরিষেবামূলক প্রকল্পে ঋণ পেতে পারেন সর্বোচ্চ ১০ লক্ষ টাকা। প্রকল্প তৈরি করতে হলে সাধারণ উদ্যোগপতিকে প্রকল্প ব্যয়ের ১০ শতাংশ বিনিয়োগ করতে হবে। তফসিলি জাতি, উপজাতি, সংখ্যালঘু, মহিলা, প্রতিবন্ধীদের মতো বিশেষ শ্রেণির হলে ৫ শতাংশ বিনিয়োগ করলেই হবে। প্রকল্পে ভর্তুকিও রয়েছে। সাধারণ শ্রেণির জন্য গ্রাম্য এলাকায় ভর্তুকির পরিমাণ ২৫ শতাংশ, শহরাঞ্চলে ১৫ শতাংশ। বিশেষ শ্রেণির জন্য গ্রাম এলাকায় ৩৫ শতাংশ ও শহরে ২৫ শতাংশ ভর্তুকি রয়েছে। এই প্রকল্পে পাঁপড়, চানাচুর, সাবান, শালপাতার থালা তৈরি থেকে শুরু করে সাইকেল, মোবাইল, পাম্পসেট মেরামত-সহ উৎপাদনমুখী ৪৫টি ও পরিষেবামূলক ২১টি প্রকল্প করা যায়। প্রকল্পটি সহজেই মানুষের নজরও কেড়েছিল। তাই ২০১০-১১ আর্থিক বছরে কেন্দ্রীয় সরকার যেখানে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার জন্য ৪ কোটি ২৪ লক্ষ টাকার লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছিল, সেখানে এই প্রকল্পে ওই আর্থিক বছরে ১৮৫৬ জনকে প্রায় ১৪ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়। স্বাভাবিক ভাবেই সরকার নির্দিষ্ট করা ভর্তুকির পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলে ২০১১-১২ আর্থিক বছরে এই প্রকল্পে বরাদ্দ মেলেনি জেলায়।
২০১২-১৩ আর্থিক বছরে ফের বরাদ্দ মেলে। যার লক্ষ্যমাত্রা পরিমাণ প্রায় ৬ কোটি টাকা। কয়েক হাজার মানুষ আবেদনও করেন। জেলা স্তরের কমিটি তাঁদের মধ্যে থেকে ৯২৬ জনকে ঋণ দেওয়ার জন্য ব্যাঙ্কের কাছে পাঠায়। ঋণের পরিমাণ ছিল প্রায় ৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩৯১ জনের আবেদন মঞ্জুর করে ব্যাঙ্ক। যার পরিমাণ ৩ কোটি ৮৬ লক্ষের মতো। তা-ও দিয়েছে মাত্র ৩ কোটি ৪৭ লক্ষ টাকা। অথচ, চলতি আর্থিক বছরে সরকার যে ভর্তুকির লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছিল তাতে ১৪ কোটিরও বেশি টাকা ঋণ পাওয়া যেত। আবেদনকারীরা ঋণ না পাওয়ায় ভর্তুকির ওই টাকা ফেরত যাবে। |
পুরনো খবর
• এলাকায় শিবির করেও বাড়ানো যাচ্ছে না ঋণ শোধের পরিমাণ
|
• পশ্চিমে কর্মহীন ৩০ লক্ষ, গুরুত্ব কারিগরি শিক্ষায় |
|
|
|
|
|