বিপর্যয় ঘটিয়া গেলে তাহার মোকাবিলা যাহাতে সুষ্ঠু ভাবে করা যায়, সে জন্যই দেশে দেশে ইদানীং নানা সংস্থা গড়িয়া উঠিয়াছে। ভারতও তাহার ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু উত্তরাখণ্ডের মেঘ-ভাঙা বর্ষণ, প্লাবন ও ধসে ক্ষতবিক্ষত মানুষরা দেখিলেন, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা কর্তৃপক্ষ (এন ডি এম এ) বড় জোর একটি কাগুজে সংস্থা মাত্র, যাহার প্রয়োজনীয় তহবিল নাই, কর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নাই, সুপারিশ করার অধিকার থাকিলেও রাজ্য সরকারগুলিকে তাহা মানাইবার কর্তৃত্ব নাই। তাই উত্তরাখণ্ডে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলার যাহা কিছু কাজ, সব সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর জওয়ানদেরই করিতে দেখা গেল।
সত্য, এই ধরনের বিপর্যয়ে সেনাবাহিনীর ভূমিকা সব দেশেই লক্ষ করা যায়। কিন্তু এখনও তাহার উপর এমন ঐকান্তিক নির্ভরশীলতা কেন? আট বছর খুব কম সময় নয়। কেন্দ্রীয় সরকার বিপর্যয় মোকাবিলা আইন প্রণয়ন করার পর হইতে অদ্যাবধি আট বছরে যেটুকু অগ্রগতি হইয়াছে, তাহা নামমাত্র। এই সময়পর্বে নানা ধরনের বিপর্যয় ঘটিয়াছে। কিন্তু এন ডি এম এ’কে সে ভাবে কার্যকর হইতে দেখা যায় নাই। কর্তারা বলিতেছেন, সংস্থাকে বিপর্যয় মোকাবিলা প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করিতে আরও অন্তত দশ বছর সময় দিতে হইবে। মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। লক্ষণীয়, সংস্থার শীর্ষ পদে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের আলঙ্কারিক উপস্থিতি থাকিলেও অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে এমন কেহ নাই, যাঁহার প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলার কোনও রূপ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অভিজ্ঞতা আছে। সংস্থার দৈনন্দিন কার্যকলাপ সঞ্চালন করেন অন্ধ্রপ্রদেশের এক কংগ্রেস বিধায়ক। যোজনা কমিশনের কাছে কর্মী-প্রশিক্ষণ ও রসদ সংগ্রহ বাবদ প্রার্থিত তহবিলের সামান্য অংশই এ যাবৎ মঞ্জুর হইয়াছে। সেই তহবিলেরও বৃহদংশই রাজ্যগুলি অপচয় করিয়া থাকে। রাজ্যগুলিতে যে-সকল সংস্থা বিপর্যয় মোকাবিলার কাজে যুক্ত, তাহাদেরও পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ নাই। এই ভাবে কোনও কিছু চলিতে পারে না। প্রায়শ কোনও শিশু পাতকুয়ায় পড়িয়া গেলে তাহাকে উদ্ধার করিতে প্রশাসন যে ভাবে নাজেহাল হয়, তাহার পিছনেও বিপর্যয় মোকাবিলা কর্তৃপক্ষের অদক্ষতাই দায়ী। উত্তরাখণ্ডে অবশ্য মে মাসেই সংস্থার এক প্রতিনিধিদল সফরে গিয়া বেআইনি নির্মাণ, বাঁধ তৈরি, মাইন খোঁড়া ও জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈয়ারির সম্ভাব্য পরিণাম হিসাবে বিপর্যয়ের পূর্বাভাস দিয়া রাজ্যকে সতর্ক করিয়াছিলেন। কিন্তু পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট করিয়া অতিমুনাফা কামাইতে ব্যগ্র লগ্নিকারী ও তাঁহাদের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকরা সেই সতর্কবার্তায় কর্ণপাত করা প্রয়োজন মনে করেন নাই। বিপর্যয় মোকাবিলা সংস্থাকে কার্যকর করিতে হইলে তাহাকেও দাঁত-নখে সজ্জিত করিতে হইবে। নির্বাচন কমিশন শক্তিমান হইবার আগে পর্যন্ত যেমন কোনও রাজনীতিকের সমীহ আদায় করিতে পারে নাই, এ ক্ষেত্রেও তাহাই ঘটিয়াছে। |