নজরদারির ফাঁক, যুক্তি কারাকর্মীর অভাব |
এক মিনিট কথা বলার জন্য দশ টাকা। এসটিডি কল হলে মিনিটে ৩০ টাকা। জেলের ভিতর থেকে মোবাইলে কথা বলার ‘রেট’ এ রকমই।
গাইঘাটার সুটিয়া গণধর্ষণ কাণ্ডে প্রতিবাদী মঞ্চের নেতা বরুণ বিশ্বাস খুনের পরে জেলের ভিতর থেকেই অপরাধমূলক কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক উঠেছিল। দমদম সেন্ট্রাল জেলের ভিতর থেকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বরুণবাবুকে খুনের ছক কষার অভিযোগে সুশান্ত চৌধুরীর নামে ইতিমধ্যেই চার্জশিট দিয়েছে সিআইডি। বুধবার ব্যারাকপুর উপ সংশোধনাগারের (সাব জেল) ডেপুটি জেলার কৌশিক দাসের আত্মহত্যার পরে সেই বিতর্ক ফের মাথাচাড়া দিল। তবে জেলের ভিতরে আসামীদের মোবাইল ব্যবহার প্রসঙ্গে রাজ্যের আইজি (কারা) রণবীর কুমার বলেন, ‘‘নজরদারি থাকে। তবে কখনও কখনও ফাঁক গলে এমন ঘটনা ঘটে।’’
জেলের ভিতর মোবাইলের ব্যবহার, মাদক সেবন, জেলের ভিতরে টাকা দিয়ে রফা, এমনকী, আগ্নেয়াস্ত্রর ব্যবহারও নতুন নয়। জেলের ভিতর থেকে ফোন করে তোলাবাজির অভিযোগও রয়েছে বারাসত-সহ বিভিন্ন থানায়। তবে এই ঘটনার পরে জেলে রক্ষীদের সঙ্গে অপরাধীদের ‘আঁতাত’ ও নিচুস্তরের জেলরক্ষীদের অসহায়তার দিকটাও উঠে এসেছে। গত বৃহস্পতিবার ব্যারাকপুর সাব জেলে কারাকর্তাদের একটি দল এসে বন্দিদের কাছ থেকে মোবাইল ও টাকা বাজেয়াপ্ত করার পরে শোকজ ও বকাঝকা করা হয়েছিল ডেপুটি জেলার কৌশিকবাবুকে। বুধবার তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের পরে এক দিকে যেমন প্রশ্ন উঠেছে কারাকর্তাদের ওই অভিযান এবং বকাঝকার সঙ্গে তাঁর মৃত্যুর কোনও যোগ আছে কি না। তেমনই ফের জেলে কী ভাবে বন্দিদের হাতে মোবাইল আসে, নতুন করে তা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক।
অন্য দিকে, আসামিদের সঙ্গে দেখা করার জন্য টাকা নেওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন জিনিস জেলের ভিতরে পাঠানোর জন্য টাকা নেওয়ার অভিযোগও আছে কারাকর্মীদের বিরুদ্ধে। সবচেয়ে বড় অভিযোগ, কারাকর্মীর অভাবে জেলের ভিতরে বিভিন্ন কাজকর্ম, এমনকী করণিকের কাজকর্মও কয়েদিদের দিয়েই করানো হয়।
যেমন ব্যারাকপুর সাব জেলে ৩০০ কয়েদির জন্য রয়েছেন মোট ২১ জন কারারক্ষী। আপার ডিভিশন ক্লার্কের জায়গাটি সেখানে বেশ কয়েক বছর ধরে ফাঁকা পড়ে রয়েছে। অভিযোগ, সেই সব কাজও করানো হত এক জন দাগী অপরাধীকে দিয়েই। অভিযোগ, কৌশিকবাবু অডিটে যে ১২ লক্ষ টাকা গরমিলের প্রসঙ্গ তুলেছিলেন, তাতে হাত রয়েছে এমন এক অপরাধীরই। স্টেট গভর্নমেন্ট জেল এমপ্লয়িজ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক (রাজ্য) অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘এ রাজ্যে কৌশিকবাবুর মতো মাত্র এক জন এগ্জিকিউটিভ অফিসার একটা গোটা জেল চালান। এটা পাগলামো। এ নিয়ে আমরা লক্ষ বার অভিযোগ করেছি। কিন্তু সমস্যাটা সেই তিমিরেই রয়ে গিয়েছে।’’ কারা দফতরের একাংশই এই অভিযোগ তুললেও তদন্তের আগে এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি কারা কর্তারা। |