পুনর্বাসনের জন্য ১৭ কাঠা জমি প্রস্তুত। কিন্তু ঢিল ছোড়া দূরত্বের ওই জমিতে জবরদখলকারীদের কী ভাবে সরানো হবে, থমকে আছে সেই সমীক্ষা। যার ফলে আটকে আছে দত্তাবাদে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের কাজ। অভিযোগ, আড়াই মাস আগে তৃণমূল কংগ্রেস সমর্থকদের তাড়া খেয়ে এলাকা থেকে পালিয়ে এসেছিলেন সমীক্ষকেরা। সমস্যা মেটাতে দলের দুই বিধায়ককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল মহাকরণ থেকে। পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও প্রকল্প রূপায়ণে তৎপর। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুরমন্ত্রীকে বিষয়টি ত্বরান্বিত করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
সল্টলেকের সেক্টর ফাইভে প্রান্তিক স্টেশন থেকে সুভাষ সরোবর পর্যন্ত প্রকল্পের ৫.৫৮ কিলোমিটার অংশে কাজ হচ্ছে উপর দিয়ে। বেঙ্গল কেমিক্যাল থেকে সল্টলেক সিটি সেন্টার পর্যন্ত ৩৬৫ মিটার অংশে ১৩টি স্তম্ভ তৈরি করা দরকার ছিল। টেন্ডারের মাধ্যমে একটি নামী ঠিকাদার সংস্থাকে কাজের বরাত দেয় কলকাতা মেট্রো রেল নিগম (কেএমআরসি)। কথা ছিল দু’বছরে করতে হবে কাজটি। কিন্তু দত্তাবাদে দখলদার সরানো নিয়ে দফায় দফায় বৈঠকেও কাজ এগোয়নি। এই পরিস্থিতিতে যাঁরা বরাত পেয়েছেন, তাঁরা দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়ে সরে দাঁড়িয়েছেন।
কেএমআরসি-র দাবি, দত্তাবাদের বস্তির এই অংশ বাদে প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ শেষ। স্তম্ভ তৈরির জন্য দত্তাবাদের ওই বস্তিতে ক’টি গর্ত খোঁড়া দরকার। কথা ছিল, পর্যায়ক্রমে কিছু ঝুপড়ি পাশে সরিয়ে প্রকল্পের স্তম্ভ তৈরির পরে আবার প্রায় স্বস্থানে সরিয়ে দেওয়া হবে বাসিন্দাদের। প্রায় ৬ মিটার উপরে ধারক হিসেবে ২৫ মিটার দৈর্ঘ্যের কিছু লোহার বিম বসানোর পরিকল্পনা ছিল। এই বিম বসানোর সময়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকায় ঝুপড়িবাসীরা সরতে চাননি। |
কেএমআরসি-র চিফ ইঞ্জিনিয়ার বিশ্বনাথ দেওয়ানজি বললেন, “এর পরে পরিকল্পনা বদল করে আমরা ৯০ মিটার দীর্ঘ লোহার বিম বসানোর সিদ্ধান্ত নিই। সেই পরিবর্তনের জন্য বাড়তি ৩০ কোটি টাকার দায় পড়ে আমাদের উপরে।”
দত্তাবাদের জট কাটাতে গত বছর ৩ মে বৈঠক হয় মহাকরণে। ওই বৈঠকে সমস্যা সমাধানের জন্য বিধাননগর পুরসভা এবং সংলগ্ন অঞ্চলের দুই বিধায়ক সুজিত বসু ও সব্যসাচী দত্তকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। বৈঠকে ঠিক হয়, পাশে নির্ধারিত ১৭ কাঠা জমিতে দখলদারদের সাময়িক স্থানান্তরিত করা হবে। কেএমআরসি-র তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়, ওই জমিতে শহুরে দরিদ্রদের জন্য কেন্দ্র-রাজ্য যৌথ প্রকল্পে ছোট ফ্ল্যাট করে দেওয়া হবে। পুনর্বাসন কী ভাবে করা যাবে, তা দেখতে কেএমআরসি এবং প্রশাসনের কিছু অফিসার গত ৪ মার্চ ঘটনাস্থলে যান। সেই সময়ে দখলদারদের তাড়া খেয়ে পর্যবেক্ষকরা পালিয়ে আসতে বাধ্য হন। এর পরে পরিস্থিতি রয়েছে একই অবস্থায়। অভিযোগ, বাধাদানকারীরা তৃণমূল কংগ্রেসের সদস্য-সমর্থক।
পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ববি হাকিম জানান, বিধাননগরের তৃণমূল বিধায়ক সুজিত বসু এবং বিধাননগর পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সব্যসাচী দত্তকে এ ব্যাপারে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সুজিত বসু বলেন, “বিষয়টি ওই অবস্থাতেই আছে। পঞ্চায়েত ভোট মিটে গেলেই শুরু হবে সমীক্ষা।” সব্যসাচী দত্ত বলেন, “সমস্যা আছে। সমাধানের চেষ্টা হচ্ছে। দেখা যাক!”
কেএমআরসি-র কর্তারা জানান, নারকেলডাঙার কাছে ৬০টি পরিবারের জন্য কাজ আটকে ছিল। তাদের সরিয়ে প্রকল্পের ওই অংশের কাজে গতি আনার চেষ্টা হচ্ছে। এঁদের মধ্যে অনেক বাসিন্দাই ক্ষতিপূরণের দাবিও তুলেছেন। দত্তাবাদের জমির জট দ্রুত কাটলে আগামী বছরের একেবারে গোড়ায় প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের অর্থাৎ সল্টলেক থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত অংশের পুরো কাজ শেষ হবে। এই কারণে দত্তাবাদের ওই অংশের নতুন টেন্ডার ডাকা হয়েছে। এ বার আর আগে চূড়ান্ত বরাত দেওয়া হচ্ছে না। দখলদার সরানোর পরেই ঠিকাদারকে ওই দায়িত্ব দেওয়া হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ অবশ্য আটকে আছে প্রকল্পের পরিমার্জিত মানচিত্র নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য বিরোধে।
দত্তাবাদের বাসিন্দাদের একাংশকে সরানো না গেলেও বাইপাসের ধারে স্বভূমির কাছে সাফাইকর্মীদের বস্তি সরিয়ে দিতে পেরেছেন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক পরেশ পাল।
মেট্রোর এক কর্তা বলেন, স্বভূমির সামনে কাজ আটকে ছিল। এখানে তিনটি স্তম্ভ হবে। ৬৩টি পরিবার ওখানে বসবাস করতেন। এঁদের বেশির ভাগই কলকাতা পুরসভার সাফাইকর্মী এবং তাঁদের আত্মীয়। ৫৩টি পরিবারকে সুভাষ সরোবরে অস্থায়ী ভাবে সরানো হয়েছে। অস্থায়ী বাড়ি তৈরির জন্য দেড় কোটি টাকা মেট্রো কর্তৃপক্ষ খরচ করেছেন। স্থায়ী আবাসন তৈরির জন্য পুরসভা জমি দিয়েছে। সেখানে কাজ শুরু হয়েছে। ছ’তলা এই আবাসনে ৬৩টি ফ্ল্যাট থাকবে। দুটি করে ঘর, একটি রান্নাঘর, একটি শৌচালয় এবং একটি বারান্দা থাকবে। খরচ হচ্ছে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। ২০১৪ সালের প্রথম দিকে ফ্ল্যাটগুলি সাফাইকর্মীদের দেওয়া হবে। এই ফ্ল্যাট তৈরির টাকাও কলকাতা মেট্রো রেলের পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছে।
সল্টলেকের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়ে দত্তাবাদ এলাকা। সেখানকার কাউন্সিলর রাধানাথ চাদ। তিনি সল্টলেকের সিপিএমের নেতা। রাধানাথবাবু বলেন, “রাজ্য সরকার একটি কমিটি তৈরি করেছে। সেই কমিটি সব করবে। কী করছে, তা পুরসভা বলতে পারবে। আমি কী করে বলব? আমি কমিটিতে নেই। কমিটির সদস্যেরা আগে এলাকার মানুষের সঙ্গে বসে আলোচনা করুন। তাঁরা কী চান, সেটা আগে দেখুন।”
|