মিটছে না এলাকার বিদ্যুৎ-সমস্যা
জমি জটে আটকে সাব-স্টেশন তৈরির কাজ
লাকায় লো ভোল্টেজের সমস্যা দীর্ঘ দিনের। তাই এলাকায় একটি সাব-স্টেশন তৈরি করা খুবই প্রয়োজন। পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানি সে ব্যাপারে অনেকটা এগিয়েও গিয়েছে। কিন্তু কোম্পানির অভিযোগ, এলাকাবাসীর একাংশের অসহযোগিতাতে জমি মিলছে না। ফলে মাড়গ্রাম এলাকার জন্য তৈরি করা যাচ্ছে না পৃথক একটি সাব-স্টেশন। যার জেরে মিটছে না লো-ভোল্টেজের সমস্যাও। কোম্পানি বলছে, সাব স্টেশনটি হলে মাড়গ্রাম থানা এলাকার প্রায় ৩০ হাজার বিদ্যুৎ গ্রাহক উপকৃত হবেন।
জমি নিয়ে ঠিক কী সমস্যা?
পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির বিদ্যুদয়ন বিভাগের জেলা প্রকল্প ম্যানেজার তপন দে জানিয়েছেন, মাড়গ্রাম গ্রাহক পরিষেবাকেন্দ্রের অধীনে ৩৩/১১ কেভি সাব-স্টেশন তৈরির জন্য মাড়গ্রাম মৌজা ও বসোয়া মৌজার শেষপ্রান্তে তিন বিঘা জমি দেখা হয়েছিল। ওই জমির ১৮ জন চাষি জমির মূল্য বাবদ প্রাপ্য টাকা নিতেও রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু পরে দু’জন চাষি (যাঁরা মোট জমির অর্ধেক অংশের মালিক) বেঁকে বসায় জমির মূল্য বাবদ বাকি ১৬ জন চাষিকে চেক বিলি করা যায়নি। যার জেরে মাস দেড়েক আগে ওই সাব-স্টেশন তৈরির জন্য আসা প্রায় সাড়ে ছ’লক্ষ টাকা হেড অফিসে ফেরত চলে গিয়েছে। আরও সমস্যা, ওই দুই অনিচ্ছুক জমিদাতার দেখাদেখি এখন ইচ্ছুকদের মধ্যেও দু’ একজন আবার জমি দিতে চাইছেন না। ফলে মাড়গ্রাম এলাকার বিদ্যুৎ সমস্যা মেটার রাস্তাটি এখন কার্যত বিশ বাঁও জলে। তপনবাবুর কথায়, “অনিচ্ছুক জমিমালিকেরা যদি জমি দিতে রাজি হন, তা হলেই সমস্যা মিটবে। অন্যথায় নতুন করে জমি দেখা শুরু করতে হবে। পুরো পরিকল্পনাটিই পিছিয়ে যাবে।”
কোম্পানি সূত্রের খবর, প্রথম দিকে রামপুরহাট শহরের সানঘাটা পাড়ায় ৩৩/১১ কেভি সাব-স্টেশন থেকে বিদ্যুৎ যোগান দেওয়া হত রামপুরহাট ও মাড়গ্রাম থানার বিস্তীর্ণ এলাকায়। বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ায় ২০০৭ সালে রামপুরহাটের মনসুবা মোড়ে ১৩২/৩৩ কেভি সাব-স্টেশনে ৩৩/১১ কেভি আলাদা একটি পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়। কিন্তু পরে বিদ্যুতের চাহিদা এতটাই বেড়ে যায় যে, মাড়গ্রাম, চাঁদপাড়া, দুনিগ্রাম-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার লো-ভোল্টেজ সমস্যা দূর হয়নি। পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির রামপুরহাট বিভাগীয় অফিসের ১১০০০ লাইনের নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক টেকনিক্যাল আধিকারিকের মত, এ মরসুমে বোরো চাষের ক্ষেত্রে মাড়গ্রাম এলাকায় চাহিদা মেটানো গেলেও আগামী মরসুমে তা আর মেটানো সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে খুব দ্রুত মাড়গ্রামে একটি পৃথক ৩৩/১১ কেভি সাব-স্টেশন তৈরি করতে হবে। অন্য দিকে, কোম্পানির মাড়গ্রাম বিদ্যুৎ পরিষেবাকেন্দ্রের সহকারী বাস্তুকার শিশুনাথ দাস বলছেন, “মনসুবা মোড় সাব-স্টেশন থেকে যে দূরত্বে ফিডার লাইনে মাড়গ্রাম থানার বিস্তীর্ণ এলাকায় বিদ্যুৎ পাঠানো হয়, সেই দূরত্বের মধ্যে লাইনে কোনও অসুবিধে দেখা দিলে তা মেরামত করতে অনেক সময় লাগে। মাড়গ্রামে একটি সাব-স্টেশন থাকলে তা করতে কম সময় লাগবে। লো-ভোল্টেজের সমস্যা তো দূর হবেই।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৯ সালে তৎকালীন মহকুমাশাসক (রামপুরহাট) বিধান রায়ের উদ্যোগে সমস্যার সমাধানে বসোয়া ও মাড়গ্রাম মৌজার শেষ প্রান্তের জমিটি বাছা হয়েছিল। রামপুরহাট ২ পঞ্চায়েত সমিতির বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ পারভিন সুলতানার দাবি, “প্রথম দিকে ওই জমির পাঁচ জন মালিক ছিলেন। পরে শরিক বেড়ে যাওয়ায় দেখা যায় জমির মালিক ১৮ জন। ২০১০ সালের নভেম্বরে তাঁরা জমি দিতে রাজিও হয়ে যান। সরকার সেই মতো জমির মূল্য ধার্য করে প্রায় ৫ লক্ষ ৩৬ হাজার টাকা।” এরপরেই জমির অন্যতম দুই মালিক বেঁকে বসেন। অনেক পরে ২০১২ সালের অগস্টে জমি দিতে রাজি হলেও, দু’জনেই শর্ত রাখেন তাঁদের চাকরি দিতে হবে। সেই দাবি কোম্পানির পক্ষে মানা সম্ভব না হলেও তারা জমির মূল্য বাবদ সাড়ে ৬ লক্ষ টাকা চাষিদের মধ্যে বিলি করতে রাজি ছিল। পারভিন সুলতানা বলেন, “ওই দুই চাষি তাঁদের শর্ত না মানা হলে জমি দেবেন না বলে ফের জানিয়ে দেন। ফলে জমি না পেয়ে টাকা ফেরত চলে যায়।” এ দিকে ওই দুই অনিচ্ছুক জমিদাতার পাশাপাশি ইচ্ছুকদের একটা অংশের মধ্যে আবার জমি বিক্রি করা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
সম্প্রতি এলাকার প্রায় ১০-১২টি গ্রামের লোক প্রথম দুই অনিচ্ছুকের সঙ্গে দেখা করে এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে জমি দিতে আবেদন করেন। ওই দুই অনিচ্ছুক নিমাইচরণ দাস ও শ্রীনাথচরণ দাস বলছেন, “চাকরি পাব জেনেই জমি দিতে সম্মত হয়েছিলাম। কিন্তু পরে জানলাম চাকরি মিলবে না। তাই চেক নিইনি।” তবে এলাকার মানুষের কথা ভেবে বিষয়টি নিয়ে তাঁরা নতুন করে ভাবেন। তাঁরা বলেন, “কোম্পানির রামপুরহাট বিভাগীয় বাস্তুকার নারায়ণচন্দ্র রায়ের কাছে জমির মূল্য বৃদ্ধির আবেদন করেছি। সেই দাবি মেনে নিলে জমি বিক্রি করে দেব।” জমির মূল্যবৃদ্ধি (দু’জনের দাবি ১০ লক্ষ) প্রসঙ্গে নারায়ণবাবু জানিয়েছেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এ দিকে একটা সময় যাঁরা জমি দিতে রাজি হয়েছিলেন, তাঁদেরই কেউ কেউ সুযোগ বুঝে নিমাইবাবুদের মতোই জমির মূল্যবৃদ্ধি, এমনকী চাকরির দাবিও তুলতে শুরু করেছেন। তাঁদেরই একজন মাড়গ্রামের ইরফান শেখের বক্তব্য, “আমি জমি দিতে তো রাজিই ছিলাম। কিন্তু ব্যাপারটা নিয়ে গত ৫ বছর ধরে টানাপোড়েন চলছে। ফলে ওখানে চাষ করতে পারিনি। এই পাঁচ বছরে তার জন্য অনেক আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। ফলে জমির জন্য কোম্পানিকে এখন বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী টাকা বা চাকরি দিতে হবে।” বিষ্ণুপুরেই বাসিন্দা, পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ অপূর্ব চৌধুরী, কংগ্রেস নেতা রথীন মজুমদার বা তৃণমূলের বিষ্ণুপুর অঞ্চলের সভাপতি নন্দদুলাল দাস বা মাড়গ্রামের সিপিএম নেত্রী পারভিন সুলতানারা সমস্যার সমাধানে জমি মালিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা জানিয়েছেন। অন্য দিকে, জমি দিতে যাঁরা এখনও সম্মত, তাঁদেরই মধ্যে মাড়গ্রামবাসী সিরাজুল মণ্ডল ও রেন্টু শেখরা কিন্তু প্রশ্ন তুলছেন, “ভাল কাজের জন্য লোকে তো অনেক সময়ে বিনা পয়সায় জমি দিয়ে দেন। এ ক্ষেত্রে আমরা তো জমির যথার্থ মূল্যও পাচ্ছিলাম। সাব-স্টেশন তৈরি হলে এলাকার হাজার হাজার মানুষের উপকার হবে। সেখানে এমন গোঁ ধরে বসে থাকার কোনও যুক্তি দেখতে পাচ্ছি না। প্রশাসনের বিষয়টি দ্রুত মিটিয়ে ফেলা উচিত।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.