ভোটের গুঁতোয় এ বারে জামাইষষ্ঠীটাও হল না দোলগোবিন্দপুরের দাস বাড়িতে। যদিও বাপের বাড়ির ঢিল ছোঁড়া দূরত্বেই মেয়ের শ্বশুরবাড়ি। পড়শিদের ফিসফাস, ননদ-ভাজ দু’দলের হয়ে ভোটে দাঁড়াতেই এই বিপত্তি।
পঞ্চায়েত ভোট নির্ধারিত সময়ে হবে কি না, এখনও পরিষ্কার নয়। কিন্তু শ্রীরামরপুর পঞ্চায়েতের ৬৬ নম্বর বুথ ইতিমধ্যেই সরগরম মৌ আর মৃদুলাকে নিয়ে। ননদ মৌ দেবনাথ আর বৌদি মৃদুলা দাস প্রতিদ্বন্দ্বী এ বার। ননদ দাঁড়িয়েছেন সিপিএমের হয়ে আর বৌদি তৃণমূলের। তবো তাঁদের ঘিরে পাড়া সরগরম হলেও নিজেরা কিন্তু একেবারেই ভোটের সঙ্গে জামাইষষ্ঠীর সম্পর্ক মানছেন না। মৌ বলেন, “দাদার একার রোজগার। কতই বা আয় হয় যে প্রতিবছর ষষ্ঠী করবেন। ১৬ বছর বিয়ে হয়েছে আমার। আর ষষ্ঠী কিসের? এর মধ্যে কোনও রাজনীতি নেই।” আর মৃদুলা বলেন, “বাড়ির মধ্যে আবার রাজনীতি কিসের? ওসব বাইরে। পরিবারে আমরা ননদ-বৌদি, আর এটাই শেষ কথা। তাই প্রার্থী হওয়ার আগেও সম্পর্ক যা ছিল, এখনও তাই আছে। থাকবেও।” |
|
|
বাঁ দিক থেকে, মৌ ও মৃদুলা। —নিজস্ব চিত্র। |
|
গ্রামের এক ধারে কাটোয়া-ব্যান্ডেল রেললাইনের ধার ঘেঁষে কালাচাঁদ দাসের বাড়ি। চায়ের দোকান চালিয়ে সংসার চালান। স্ত্রী মৃদুলা এবারই প্রথম ভোটে দাঁড়িয়েছেন। পরিবার সেই অর্থে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না হলেও স্বামী স্ত্রী দু’জনেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পছন্দ করেন। ফলে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব এলাকার মেয়েমহলে জনপ্রিয় মৃদুলাকে প্রার্থী করতে চাইলে আপত্তি করেন নি কেউই। অন্যদিকে, মৌয়ের শ্বশুরবাড়ি এলাকায় বামপন্থী পরিবার হিসেবেই পরিচিত। স্বামী সৌদি আরবে কাজ করেন। শ্বশুর হীরালাল দেবনাথই অভিভাবক। তিনি এলাকর সিপিএম নেতাও বটে। মৌ বলেন, “সেভাবে রাজনীতি করিনা বটে। তবে গ্রামে নানা সমস্যা। মদ-জুয়ার কারবার নিয়েও কেউ কথা বলেন না। তাই বাবা যখন ভোটে দাঁড়াতে বললেন, না বলিনি।”
শাসক ও বিরোধী দলের প্রার্থী হলেও সম্পর্কের বাঁধন থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে আসছেন না কেউই। দু’জনেই বারবার বলছেন, ভোট আর পরিবার একেবারেই আলাদা। ননদ-বৌদির গল্পে ভোটের প্রসঙ্গ নেই বলেও দাবি দু’জনের। প্রচারে বেরিয়েও দু’জনের কেউ কারও বিরুদ্ধে কথাও বলছেন না, আবার মুখোমুখিও হচ্ছেন না।
তবে জয়ী হওয়ার বিষয়ে দু’জনেই যথেষ্ট আশাবাদী। শ্রীরামপুর পঞ্চায়েতের তৃণমূলের উপপ্রধান দিলীপ বলেন, “ভোটে দাঁড়ানো গণতান্ত্রিক অধিকার। আমাদের লড়াই সিপিএমের প্রতীকের বিরুদ্ধে। কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়।” সিপিএম নেতা হীরালাল দেবনাথ বলেন, “আমরা অনেক আগেই বৌমাকে প্রার্থী হিসেবে ভেবেছিলাম। পরে উনি দাঁড়িয়েছেন। এতে কোনও অসুবিধে নেই। বিচার করবেন মানুষ।”
|