জুনের শুরু থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে ধারাবাহিক ভাবে। এর ফলে এ বার আমন ধান ভাল হবে বলে আশায় চাষিরা। শুধু আমন নয়, রবি মরসুমেও ভাল ফলন হবে বলে মনে করছেন কৃষি দফতরের কর্তারা। তবে টানা বৃষ্টির মধ্যে সব্জি খেতে ছত্রাকের সংক্রমণ রুখতে চাষিদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন কৃষিকর্তারা।
কালনা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর জুনে এক পশলাও বৃষ্টি হয়নি এই মহকুমায়। জুলাইয়ে ধানের বীজ ফেলে আমন চাষ ফেলে আমন চাষ শুরু করতে দেরি হয়ে গিয়েছিল। আমন চাষ পিছিয়ে যাওয়ায় ক্ষতি হয়েছিল রবি চাষেও। আলু, পেঁয়াজ, ডালশস্যের মতো ফসলে শেষ দিকে ঠান্ডা আবহওয়া না পাওয়ায় রোগ-পোকার সংক্রমণ দেখা গিয়েছিল।
এ বার অবশ্য সেই সম্ভাবনা নেই বলেই জানাচ্ছেন কৃষি আধিকারিকেরা। জুনের শুরু থেকেই নিয়মিত বৃষ্টি হচ্ছে। কালনা মহকুমার পাঁচ ব্লক মিলিয়ে এ মাসের প্রথম তিন সপ্তাহে একশো মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হয়ে গিয়েছে। এই হারে বৃষ্টি দেখে চাষিরাও বসে নেই। মহকুমা কৃষি দফতরের রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, এ বার ৫৭ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হবে। যার জন্য প্রয়োজন ছ’হাজার হেক্টর জমির বীজতলা। ধারাবাহিক বৃষ্টিপাতে উৎসাহিত হয়ে বুধবার পর্যন্ত প্রায় চার হাজার হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছেন চাষিরা। |
তৈরি হচ্ছে বীজতলা। কালনায় তোলা নিজস্ব চিত্র। |
মহকুমা কৃষি দফতরের এক কৃষি বিশেষজ্ঞ পার্থ ঘোষ বলেন, জুলাইয়ের মাঝামাঝি বীজতলা থেকে ধানচারা তুলে মূল জমিতে বসানো হলে অক্টোবরে পাকা ধান মিলবে। এটাই আমন ধান চাষের আদর্শ সময়। সময়ে ধান উঠলে রবি চাষও শীতে করা যাবে। এ বার দুই চাষই সময়মতো করার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সে ক্ষেত্রে দুই ধরনের চাষেই ফলন বাড়বে।” তিনি আরও জানান, বর্তমানে যে ধারাবাহিক বৃষ্টি চলছে তাতে সতর্ক থাকতে হবে সব্জি চাষিদের। পার্থবাবুর কথায়, “মাঠে এই সময়ে বেগুন, ঢ্যাঁড়শ-সহ নানা সব্জির চারা রয়েছে। ধারাবাহিক বৃষ্টি ও মেঘলা পরিবেশ পেলে সব্জি চারায় ছত্রাকঘটিত রোগের সংক্রমণ দেখা দিতে পারে।” সেরকম হলে কপার অক্সিক্লোরাইড প্রতি লিটার জলে চার গ্রাম, অথবা ম্যাঙ্কোজেব প্রতি লিটার জলে দু’গ্রাম মিশিয়ে স্প্রে করলে চাষিরা সুফল পাবে।
কৃষি বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, জমি থেকে বেশির ভাগ পাট কাটা হয় জুলাইয়ের শুরু থেকে। এর পরেই কাটা পাট পচানো হয় নদী, নালা, খাল, বিল-সহ নানা জলাশয়ে। গত বছর জলাশয়গুলিতে জলসঙ্কট দেখা দেওয়ায় পাটচাষিরা সমস্যায় পড়েন। এ বার টানা বৃষ্টিতে ছোট ছোট জলাশয়গুলি ভরে যাওয়ায় চাষিদের পাট পচানোর সমস্যা কমে যাবে। এ বার মহকুমায় প্রায় আট হাজার হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছে।
সম্প্রতি একটি আলোচনসভায় বিজ্ঞানীরা জানিয়েছিলেন, কালনা মহকুমার ব্লকগুলিতে কোথাও পঞ্চাশ মিটার, কোথাও আবার তার থেকেও বেশি জলস্তর নেমে গিয়েছে। এ বার জুনের নিয়মিত বৃষ্টিতে ভূগর্ভস্থ জলস্তরের কিছুটা উন্নতি হবে বলেও আশা করছেন বিশেষজ্ঞেরা। |