আইনি সাহায্যের আশ্বাস শিবিরে
নিগ্রহ প্রতিরোধের উপায় খুঁজছেন ছাত্রীরা
রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময়ে মাঝে মধ্যেই পাশ থেকে উড়ে আসা অশালীন মন্তব্য খুব অপরিচিত নয় মেয়েদের কাছে। সেটাই যখন বাড়তে বাড়তে ধর্ষণ বা যৌন নিগ্রহের মতো ঘটনা ঘটে, তখন তো আর চুপ থাকা যায় না। তবে অনেকেই ভয়ে লজ্জায় সিঁটিয়ে থাকেন কোনও প্রতিবাদ না করে। রাজ্যে পরপর ঘটে যাওয়া মেয়েদের উপর হিংসার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বর্ধমান, হুগলি ও বীরভূমের কয়েকটি স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে স্টেট লিগাল অথরিটির উদ্যোগেএকটি নারী সুরক্ষা ও আইনি সচেতনতা শিবির হল বর্ধমানের লোক সংস্কৃতি মঞ্চে। সেখানে স্কুল কলেজের নানা বয়সের মেয়েরা জানালেন তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা। ছিলেন হাইকোর্টের বিচারপতি তথা স্টেট লিগাল সার্ভিস অথরিটির চেয়ারম্যান অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, জেলা জজ আশুতোষ কর, বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত, কয়েকটি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা-সহ আরও অনেকে।
পোশাক থেকে বিজ্ঞাপনে নারীদেহের পণ্যায়ন, নানা বিষয় নিয়ে কথা বললেন মেয়েরা। তবে সব থেকে বেশি নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক তৎপরতার অভাব নিয়ে অভিযোগ।
বর্ধমান মডেল স্কুলের অনন্যা ঘোষের অভিযোগ, ‘বেশির ভাগ সময়েই পুলিশ পদক্ষেপ করতে দেরি করে। ততক্ষণে তো দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায়।” ধর্ষণ বা নিগ্রহের মতো ঘটনায় তদন্তের প্রক্রিয়া নিয়েও ক্ষুব্ধ সে। বলে, “অনেক সময়ে পুলিশ সবার সামনে নির্যাতিতাকে কেমন করে নিগৃহীত হয়েছে তা প্রশ্ন করে। শরীরের কোথায় কোথায় আঘাত করা হয়েছে তা জিজ্ঞাসা করা হয়। এতে তো নির্যাতিতার সম্মানহানি হয়। এই অবস্থার পরিবর্তন হওয়া জরুরি।” রাজ কলেজের শম্পা মণ্ডল বলেন, “বাড়ির সব কাজে আমাকেই বেরোতে হয়। অশালীন মন্তব্য তো শুনতেই হয়। তবে কি বাড়িতে বসে থাকব?” হুগলির বিনোদিনী গার্লস স্কুলের শ্রীতমা মিত্রেরও একই মত।
ঘরে বা স্কুলেও নিরাপদ নয় মেয়েরা। বিদ্যার্থীভবন গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা কৃষ্ণা মুখোপাধ্যায় শোনালেন তাঁর অভিজ্ঞতার কথা। বললেন, “দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রী আমায় বলেছিল, নিজের বাবাই তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছিল। বাধ্য হয়ে মা তাকে নিয়ে মামার বাড়ি চলে আসেন। এখন তাঁরাও যদি আশ্রয় দিতে না পারেন, তবে কোথায় যাবে মেয়েটি?” বর্ধমানের খোসবাগানের হরিসভা হিন্দু গার্লসের মন্তেক সালুজার অভিজ্ঞতা, “এক বার তো একটা ছেলে আমাদের স্কুলে ঢুকে পরপর ছবি তুলতে শুরু করল। ভাগ্যিস দিদিমণিরা তাকে ধরে ফেলেছিলেন। না হলে হয়তো আমাদের ছবি বিকৃত করে বাজারে ছড়িয়ে দেওয়া হত।” বর্ধমান পুর বালিকা বিদ্যালয়ের ছা্ত্রী ঐশ্বর্যা বলে, “আমরা যারা পড়াশোনা জানি, তারা তো তাও দরকারে থানায় যেতে পারি। কিন্তু বাড়ির পরিচারিকারা তো তাও পারেন না। প্রতিবাদ করলেই তো তাকে চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়।”
প্রশ্ন উঠেছে পরিবারের দৃষ্টিভঙ্গী নিয়েও। বর্ধমানের বিদ্যার্থী গার্লস স্কুলের শর্মিষ্ঠা রায় বলে, “বিজ্ঞাপনে অশ্লীল ভাবে মেয়েদের শরীর দেখানো হয়। আর আমাদের পোশাক সামান্য খোলামেলা হলেই বাড়িতে, স্কুলে ধমক খেতে হয়। অথচ এভাবে তো আর নিগ্রহ আটকানো যাচ্ছে না।” বর্ধমান মহিলা কলেজের শুভশ্রী দে’র ক্ষোভ, “কোনও খারাপ ঘটনা বাড়িতে এসে বললে চেপে যেতে বলা হয়। কিন্তু কত দিন কথা না বলে অন্যায় প্রশ্রয় দেব?”
কিন্তু এ ভাবে যে আর চলা যাচ্ছে না, এক মত বেশির ভাগ ছাত্রীই।
বীরভূমের গার্লস স্কুলের ছাত্রী শর্মিষ্ঠা রায় ও দুর্গাপুর বিধানচন্দ্র ইনস্টিটিউশনের অঙ্কিতা দত্তের মত, ঘরে বসে প্রতিবাদ করলে হবে না। কামদুনির মত আমাদেরও এক সঙ্গে রাস্তায় নামতে হবে।” হুগলির বিনোদিনী গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সুমা মুখোপাধ্যায়ের মতে মেয়েদের আত্মরক্ষার কৌশল জানাটা খুব জরুরি। হুগলির উইমেন্স কলেজের টুম্পা সেন যেমন জানালেন নিজের অভিজ্ঞতার কথা। বলেন, “মারের বদলে পাল্টা মার দিতে হবে। আমি তো দু’এক বার সঙ্গে থাকা জলের বোতল দিয়ে নাকে মেরেছি। পালিয়ে গিয়েছে।” সুমাও বলেন, “আমি চাই, ছাত্রীরা কারাটে, কুংফু শিখুক। লেখাপড়ার পাশাপাশি শরীরটাকে শক্তপোক্ত করে তুলতে বলি ওদের।”
শিবির শেষ হওয়ার পরে ছাত্রীদের সংস্থার তরফে মহকুমা স্তরের প্রতিনিধিদের ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক পর্বেই তারা যাতে আইনি পরিষেবা পায়, সেদিকেও লক্ষ্য রাখা হবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.