আউশগ্রাম ২ ব্লক
গ্রামে ঢোকার রাস্তা নেই, বর্ষায় আঁধারে আমানি
যেন ঘরের মধ্যে ঘর। অথচ সেই ঘরে যাওয়ার রাস্তা নেই কোনও। বেরোবারও নয়। তবু একান্তই যদি যেতে হয়, তবে আড়াই কিলোমিটার লম্বা একটা মেঠো রাস্তা অবশ্য আছে আমানি গ্রামে যাওয়ার। আউশগ্রাম ২ ব্লকের দেবশালা গ্রাম পঞ্চায়েতের একটি আদিবাসী গ্রাম। গ্রামবাসীদের দাবি, বহুবার স্থানীয় পঞ্চায়েতের কাছে তাঁদের গ্রামে যাওয়ার রাস্তা বানানোর জন্য অনুরোধ করলেও কোনও ফল হয়নি। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যা মেহেরুন্নেসা বিবি জানান, তাঁর এবং গ্রামবাসীদের তরফে এখানে একটি ব্রিজ ও রাস্তার জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরে আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু জায়গার অভাবে তা করা সম্ভব হয়নি।
নয় নয় করে ২০টি আদিবাসী পরিবারের বাস ওই গ্রামে। প্রায় সত্তর ছুঁই ছুঁই সোম সোরেন জানান, কোনও দিনই এই গ্রামে ঢোকা-বেরনোর রাস্তা নেই। পিচ রাস্তা থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার রাস্তা মাঠের আল ধরে আসতে হয়। দু’দিক দিয়ে অবশ্য এই গ্রামে যাওয়া যায়। কাঁকসা থানার পিয়ারিগঞ্জ অথবা বুদবুদ থানার কাঁকড়া গ্রাম দিয়ে।
কিন্তু দু’দিকেই দূরত্ব একই রকম। কাঁকড়ার দিক দিয়ে যেতে গেলে গ্রামে ঢুকতে গিয়ে পেরোতে হয় কুনুর নদী বা ডুলে খাল। সোম জানালেন, ভর দুপুর বা মাঝ রাত, কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তাকে নিয়ে যেতে ভরসা গরুর গাড়ি। রাতে খুব অসুবিধায় পড়তে হয়। আর বর্ষায় কুনুর নদীর জল বাড়লে কাঁকড়া দিয়ে যাওয়ার রাস্তাও বন্ধ।

কুনুর নদী পেরিয়ে দিয়ে যেতে হয় গ্রামে।
গ্রামবাসীরা জানান, চাষের সময় খেতের ফসল নষ্ট হয়ে যাবে বলে মাঠের উপর দিয়ে গরুরগাড়ি নিয়ে যাওয়া যায় না। তখন হাঁটা ছাড়া কোনও উপায় নেই। সোম সোরেন বলেন, “আজন্ম এখানে আছি। জমিতে ভাগ চাষ করি। ফসল আবার বিক্রি করতেও সমস্যা। গরুরগাড়ি অথবা মাথায় করে বয়ে নিয়ে যেতে হয়।” সবথেকে অসুবিধায় পড়তে হয় গর্ভবতী মহিলাদের নিয়ে। তাঁদের তো অনেক সময়ে গরুর গাড়ি অথবা খাটে করেও নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। বেলডাঙার বাসিন্দা কেষ্ট মুর্মু বলেন, “রাতবিরেতে কোনও দুর্ঘটনার খবর পেলেও ওখানে যেতে পারি না।” তাই বাইরে থেকে আত্মীয় স্বজনেরা আসতে ভয় পান আমানিগ্রামে এই অবস্থায় নিত্য দিন দুর্ভোগ পোহাতে হয় গ্রামের পড়ুয়াদের। প্রায় তিন কিলোমিটার রাস্তা পেরিয়ে আমানিডাঙা থেকে পিয়ারিগঞ্জ স্কুল অবধি পড়াশোনা করতে যায় গ্রামের বেশ কিছু পড়ুয়া। দশম শ্রেণির ছাত্রী সুমিত্রা সোরেন ও পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র সুখলাল সোরেনরা বলে, “বর্ষার সময় মাঠের আল ধরে যাতায়াতে খুব কষ্ট হয়। অনেকবার কাদাতেও পড়ে গিয়েছি। আর সাপের ভয় তো আছেই।” যাতায়াতের এই অব্যবস্থার জন্যই অনেকে মাঝপথে পড়াশোনা ছেড়ে দেয় বলে অভিযোগ গ্রামের বাসিন্দাদের। কাঁকড়া থেকে গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে আসেন কর্মী লুতফা খাতুন। জানালেন, বর্ষায় কুনুর নদীর জল বাড়লে তাঁকে পিয়ারীগঞ্জ হয়ে ঘুরে গ্রামে যেতে হয়। তিনি বলেন, “ওই গ্রামের অনেক শিশুই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে আসে। বর্ষার সময় না গেলেও তাই চলবে না।” তিনি আরও জানান, এখানে কেন্দ্রের জন্য কোনও নির্দিষ্ট ঘর নেই। টিনের একটি আটচালা করা আছে মাত্র। তাই পাশের কমিউনিটি সেন্টারে রান্না করে খাবার রাখতে বাধ্য হন তাঁরা।

পিচ রাস্তা থেকে আড়াই কিলোমিটার হেঁটে গ্রামে পৌঁছতে হয় বাসিন্দাদের।
শুধু রাস্তা নয়, একই দুরবস্থা বিদ্যুতেরও। বছর পাঁচেক আগে বিদ্যুতের খুঁটি পোতা হলেও একটা তারও এখনও পর্যন্ত লাগানো হয়নি সেখানে। তাই হ্যারিকেনের আলোই ভরসা। গ্রামের বাসিন্দা গোঁসাই মুর্মু, সনাতন সোরেন’রা জানালেন, তাঁদের পঞ্চায়েত কার্যালয়ে যেতে হলে কাঁকড়া হয়ে যেতে হয়। তাছাড়া রেশন আনতে যেতে হয় দেবশালা গ্রামে। রেশনে কেরোসিন পেলে তবেই তাঁদের গ্রামের অন্ধকার দুর হয়। কিন্তু বর্ষাকালে কুনুর নদীর জল বেড়ে গেলে আর রেশন আনতে যাওয়াও সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে তাঁদেরকে অনেক সময় অন্ধকারের মধ্যেই দিন যাপন করতে হয়। গ্রামবাসীদের দাবি, এমন করুণ যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য গ্রামের মেয়েদের বিয়ে দিতে সমস্যায় পড়তে হয়। কেউ সম্বন্ধ পাকা করতে চান না। উৎসব অনুষ্ঠানে গ্রামে আসতে চান না আত্মীয় স্বজনেরা।
মেহেরুন্নিসা বিবি বলেন, “এখানে রাস্তা করতে হলে অন্যের জমির উপর দিয়ে করতে হবে। সব জমি মালিকদেরকে রাজি করিয়ে তারপর রাস্তা তৈরি করা হবে।” এই বিষয়ে জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।

—নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.