কয়লাচুরির অভ্যাস ছেড়ে স্বনির্ভর হচ্ছেন শীলা, নমিতারা
যে কোনও দিন সকালে নবগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে পড়লে দেখা যাবে, মিড-ডে মিলের ভাত-ডাল রান্না করছেন জনা বারো মহিলা। এমন দৃশ্য হয়তো সব স্কুলেই দেখা যায়। কিন্তু পাণ্ডবেশ্বরের নবগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের এই স্কুলের চত্বরে শীলা বাউড়ি, লেবু বাউড়ি, নমিতা বাউড়িদের দেখা যেত না ক’বছর আগেও। দেখা যেত কোলিয়ারির আশেপাশে, পুলিশের চোখ এড়িয়ে কয়লা চুরি করতে।
সেই দিনগুলোর কথা ভাবলে এখন শিউরে ওঠেন লেবুদেবী, নমিতাদেবীরা। স্বামীর দিনমজুরের টাকায় সংসার চলত না। কোলিয়ারির কয়লার গাড়ি থেকে আঁকশি দিয়ে কয়লা নামিয়ে নিতেন। তার পরে তা কুড়িয়ে নিয়ে প্রায় দৌড়ে পালিয়ে আসতেন। সেই কয়লা গুঁড়িয়ে তা থেকে গুল বানিয়ে জ্বালানি হিসেবে বিক্রি করতেন। নিজেরাও তাই দিয়ে উনুন জ্বালাতেন ঘরে। লেবুদেবী বলেন, “কষ্টের জীবন ছিল। মাঝেমাঝেই পুলিশের তাড়া খেয়ে সারাদিন ধরে কুড়নো কয়লা ফেলে পালাতে হত। চোখের জল ফেলেও লাভ হত না।”
সেখান থেকে কেমন করে স্কুলের শিশুদের খাওয়ার কাজে এলেন ওঁরা? স্বনির্ভর গোষ্ঠীই তাঁদের সেই পথ দেখিয়েছে। “গোষ্ঠীতে ঢুকে সম্মান নিয়ে বাঁচার আনন্দ পাচ্ছি,” বললেন ওঁরা। “এখন জীবনে অনেক স্বাছন্দ্য এসেছে। সম্মান বেড়েছে। মিড-ডে মিল রান্না করে পুরো অভাব মেটে না ঠিকই। অভাব মেটাতে পরিচারিকার কাজও করতে হয়।” তবু শান্তির জীবনে ফিরে খুশি এই মেয়েরা।
সিপিএম পরিচালিত পান্ডবেশ্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শিখা মন্ডল জানান, স্বনির্ভরতা প্রকল্পে বিপিএল ভুক্ত ২৬০ টি এবং এপিএল ভুক্ত ৩৬০ টি স্বনির্ভর গোষ্ঠী গঠনের মাধ্যমে ৬২০০ মহিলার রোজগারের সুযোগ করা গিয়েছে। তবে খুব বড় সাফল্য যে মেলেনি, তা তিনিও স্বীকার করছেন। ৫২০ টি স্বনির্ভর গোষ্ঠী গঠন হলেও একশোটির বেশি গোষ্ঠী সফল হয়নি।
তার চেয়েও বড় সমস্যা, বহু মেয়ে এখনও রয়ে গিয়েছে গোষ্ঠীর আওতার বাইরে। ইস্টার্ন কোলফিল্ডস লিমিটেড-এর (ইসিএল) এলাকাভূক্ত এ রাজ্যের ৯টি ব্লকে অন্তত হাজারখানেক মেয়ে অবৈধ কয়লাসংগ্রহের সঙ্গে যুক্ত। কেবল পাণ্ডবেশ্বরেই এমন অন্তত শ’খানেক মেয়ে রয়েছে। যদিও গত বছর দুয়েকে অনেক মেয়ে এই পেশা ছেড়ে সরে এসেছেন মুড়ি ভাজা, চানাচুর তৈরির মতো নানা পেশায়।
কী করে এই মেয়েদের আনা যায় নিরাপদ জীবিকায়? শিখাদেবী মনে করেন, খুব গরিব পরিবারের মহিলাদের গোষ্ঠীর মাধ্যমে স্বাবলম্বী করা সম্ভব নয়। খনি অঞ্চলে অসংগঠিত ক্ষেত্রে মহিলাদের পাশ শিখাদেবী বলেন, “ইসিএল তাঁদের এলাকায় কমিউনিটি ডেভলেপমেন্ট ফান্ড রেখেছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষার সঙ্গে কর্মসংস্থানের বিষয়েও কাজ করার প্রয়োজন ছিল। এর মাধ্যমে ওই অসংগঠিত মহিলাদের উন্নয়ন ঘটানো নিয়ে আমরা ইসিএলের সঙ্গে বারবার বৈঠক করেছি। ইসিএল রাজিও হয়েছে। কিন্তু ওই কাজ করতে কোনও সহযোগিতা করেনি। আমরা যা করেছি বিধায়ক, সংসদ তহবিলের মতো টাকা থেকেই।” ইসিএল-এর প্রতিনিধি নীলাদ্রি রায় অবশ্য এই অভিযোগ স্বীকার করেননি। “ইসিএল-এ কর্মরত মহিলাদের একটি সংগঠনের উদ্যোগে দরিদ্র মহিলাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাঁদের উৎপাদিত দ্রব্য ব্যবহারও করা হচ্ছে।”
মেয়েদের স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে ব্যাঙ্কের অসহযোগিতার অভিযোগও করেন শিখাদেবী। গরিব মেয়েদের ঋণ দিতে আগ্রহ দেখান না ব্যাঙ্কের কর্মীরা। নবগ্রামেরই বাসিন্দা অখিলা বিবি, সাবিনা খাতুনরা ঋণ নিয়ে শালপাতার মেশিন কেনার চেষ্টা করেছিলেন। সফল হননি।
নবগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য গুলবাহার বিবি, মিনতি বাউড়িরা জানান, মহিলা প্রতিনিধি বাড়ালেই হবে না। মহিলা প্রতিনিধিদের প্রশাসনিক ক্ষমতা বাড়াতে হবে। সরকারকে ভাবতে হবে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলো যাতে সহজে ঋণ পায়, সরকারি উদ্যোগে তাঁদের উৎপাদিত সামগ্রী যাতে বিক্রি হয় নানা মেলায়, তার ব্যবস্থাও দরকার।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.