পাঁচ বছর আগে ভোটের সময় বিপিএল কার্ডের নাম শুনেছিলেন দিনমজুর সোম সরেন। পাঁচ বছর পর পঞ্চায়েত ভোটের মুখে জানতে চাইলেন, “বাবু বিপিএল কার্ড দেখতে কেমন?”
মঙ্গলবার ভোটের প্রচারে গিয়ে বাসিন্দাদের মুখে এ কথা শুনে অবাক তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রার্থীরা। দক্ষিণ দিনাজপুরের বংশীহারীর এলাহাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তর সংসদ বুথের নাকড়াহার গ্রামের হতদরিদ্র আদিবাসী মানুষদের দুরবস্থায় বিপিএল নামে এক ‘যাদুপত্র’র বঞ্চনা ঘিরে এ বার পঞ্চায়েত ভোট এতটাই আবর্তিত যে, বিপিএলের সুযোগ সুবিধার ফিরিস্তি শুনে হতদরিদ্র বাসিন্দা, সস্তায় পাওয়া চালের ভাত, রুটির স্বপ্ন দেখছেন। যদিও রোজ ঘুম ভেঙেই শুরু হয়ে যায় ভাত জোগাড়ের কঠিন লড়াই।
সকাল হলেই দিনমজুরি খাটতে ছোটেন পুরুষেরা। মেয়ে বউরা পুকুর ঘেঁটে তুলে আনেন গেঁড়ি, গুগলি। বৃদ্ধা হিরি হাঁসদা বলেছেন, “আর্জি জানিয়েও ভাতা মেলেনি। নাতিনাতনি নিয়ে ছ’জনের সংসার অধিকাংশ দিন গেঁড়ি, গুগলি, শামুক, ঝিনুক খেয়ে কাটাতে হয়। ” মুঙলী হেমব্রমের বয়স ৮০ বছর। হতদরিদ্র পরিবারের ওই বৃদ্ধা অর্ধাহার, অপুষ্টিতে ভুগছেন। বার্ধক্য ভাতা মেলেনি।” |
দীর্ঘকাল সিপিএমের দখলে থাকা এ অঞ্চলের প্রত্যন্ত আদিবাসী অধ্যুষিত নাকড়াহার গ্রামের মতো দিঘলডাঙ্গা, নান্দুরা, ডোমপাড়ায় মঙ্গলবার সকালে ভোটের প্রচারে যান তৃণমূলের গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রার্থী জাসমিন হাঁসদা, পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী ধ্রুবনাথ বর্মন ও জেলাপরিষদের প্রার্থী অখিল বর্মন। গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলতেই উঠে আসে বিপিএল সম্পর্কে বাসিন্দাদের অনুযোগ ও নালিশ। তা শুনে অবাক হন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদের তৃণমূলের বিদায়ী সদস্য অখিলবাবু। এ বার তিনি বংশীহারী ১৭ নম্বর আসনে তৃণমূলের প্রার্থী। আসনটিতে গতবার সিপিএমের প্রার্থী ছিলেন সভাধিপতি মাগদালিনা মুর্মু। নাকড়াহারের সোম সরেন, সুজন মার্ডি, সুধীর মার্ডিরা বলেছেন, “শুনেছি বিপিএল কার্ডে সস্তায় চাল, আটা, কেরোসিন বিনে পয়সায় চিকিৎসা, পাকা ঘর, ভাতার টাকা মেলে। গত বার বিপিএলের এত প্রাপ্তির কথা বলে কার্ড করে দেওয়ার আশ্বাস দিলেন কেউ। কেউ বললেন, কার্ডটি মেম্বারের কাছে জমা। বহু ঘুরে ওই কার্ড চোখে দেখতে পাইনি।” বাসিন্দাদের ক্ষোভ, গত বছর জেতার পর আর আসেননি মাগদালিনা মুর্মু।” গ্রামটিতে শিশুশিক্ষা বা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, বিদ্যুৎ নেই। গ্রামে যাতায়াতের রাস্তা নেই। সিপিএম প্রার্থী মাগদালিনা মুর্মুর বক্তব্য, “অভিযোগ ঠিক নয়। বিআরজিএফ ফান্ড থেকে বিদ্যুৎ, রাস্তার কাজের বন্দোবস্ত পাশ হয়ে গিয়েছে। কাজ শুরুর প্রক্রিয়া চলছে।” |