খোদাই করে কাঠ-মুখোশ গড়েন রাখাল
গাছের গুঁড়ি যেন তাঁর ক্যানভাস। হাতুড়ির হাল্কা ছোঁয়া তুলির মতো। বাটালির ডগা ঘুরে বেড়ায় সেখানে। সতর্ক আঁচড়ে পরিত্যক্ত সামগ্রী বদলে যায় নর্তকীর মূর্তিতে। ময়নাগুড়ির ছোট প্রধানেরবাড়ির রাখাল রায় এ ভাবেই গাছের গুঁড়ি ও কাঠ খোদাই করে গড়ছেন তিব্বত, উঃ-পূর্বাঞ্চলের নানা জনজাতি গোষ্ঠীর নৃত্য ও নাটকে ব্যবহৃত হরেক মুখোশ। নেপাল ও ভুটানের শিল্প রসিক পর্যটকরা তা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয় বাজারে তেমন গুরুত্ব না পেয়ে হতাশায় আচ্ছন্ন স্রষ্টার মন। যদিও গবেষকদের দাবি ওই শিল্পী লড়াই করে বিলুপ্তপ্রায় লোকশিল্পকে টিঁকিয়ে রেখেছেন।
বয়স পঞ্চাশ ছুঁয়েছে। যদিও চুলে পাক ধরেনি। ছিপছিপে চেহারা। রোদে পুড়ে গাঁয়ের রং তামাটে। মৃদুভাষী রাখালবাবুর হাতিয়ার বলতে হাতুড়ি ও বিভিন্ন মাপের বাটালি। নাইলনের ছেঁড়া ব্যাগে রেখেছেন কয়েক টুকরো শিরিষ কাগজ, ব্লেড। বিড়িতে টান দিয়ে তিনি জানান, বয়স যখন তখন তখন থেকে গুঁড়ি, ডাল খোদাই করে কিছু তৈরির নেশা পেয়ে বসে। বাবা ডোকল রায় কাঠমিস্ত্রি ছিলেন বলে অসুবিধা হয়নি। কিন্তু অনেকটা পথ অতিক্রমের পরে কারুশিল্পীর চোখের কোলে তৃপ্তির এতটুকু ছোঁয়া নেই। তাঁর অভিমান,“কি হবে এ সব করে! স্থানীয় লোকজন পাত্তাই দেয় না।”

রাখাল রায়। —নিজস্ব চিত্র।
অভিমান এতটাই যে একমাত্র ছেলে সুশান্তকে ধারেপাশে ঘেঁষতে দেন না। অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া ছেলেকে অন্য কিছু করার পরামর্শ দেন সব সময়। তাঁর কথায়, “ওকে এসব শিখতে দেব না। না খেতে পেয়ে মরবে। কারণ, বহু বার সরকারি সাহায্যের আবেদন করেও কিছু পাইনি।” যুগ্ম বিডিও সমরেশ রায় বলেন, “উনি যোগাযোগ করলে নিশ্চয় চেষ্টা করব।” লোকশিল্প গবেষক বিমলেন্দু মজুমদার রাখাল রায়ের কদর করেন। তিনি বলেন,“শুধু তিব্বত নয়, গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চল জুড়ে তন্ত্র সাধনায় মুখোশের ব্যবহার ছিল। এখন বিলুপ্তির পথে। রাখালবাবু শিল্পটিকে টিঁকিয়ে রেখেছেন।”
দিনভর কাঠমিস্ত্রির কাজে ব্যস্ত থাকতে হয় দশ বিঘার মতো জমি রয়েছে। সেখানেও চাষ আবাদে সময় দিতে হয় সব সামলে রাতে হাতুড়ি বাটাল নিয়ে বসে পড়েন। মুখোশ তৈরির নেশায় কখন যে রাত গড়িয়ে যায় টের পান না রাখালবাবু। তিনি জানান, দামের কোনও ঠিক নেই পাঁচশো টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকাতেও বিক্রি হয় কাজ যত নিখুঁত হবে। দাম তত ভাল মিলবে। মুখোশ ছাড়া বাঁশের গুঁড়ি দিয়ে প্যাঁচা, সজারু, হাতি বাঘ চারশো টাকায় বিক্রি হয়। তবে সব সময় চাহিদা থাকে না তাই অন্য কাজ করতে হয়।” শিল্পীর স্ত্রী চ্যনিকা দেবী বলেন, “বছর ভর বিক্রি হলে সমস্যা থাকত না। শীতেই খদ্দের আসে। অন্য সময় ফাঁকা বসে থাকতে হয়। ওই কাজের উপরে ভরসা করে থাকা যায়?”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.