কেউ গীতা পাঠ করে শোনান। তা শেষ হলে বাকিরা আলোচনায় বসেন। আলিপুরদুয়ারের খেলার মাঠ, পার্কের সমস্যা মেটাতে, রাস্তার হাল ফেরাতে কী করণীয় তা নিয়ে নানা পরামর্শ-প্রস্তাব উঠে আসে সেই আলোচনায়। কখনও তা শুনতে পুরকর্তারাও হাজির হন প্রবীণদের এই আড্ডায়। পরামর্শ মেনে নেওয়া হয় ব্যবস্থাও।
এমন এক আড্ডার জায়গা রয়েছে আলিপুরদুয়ার শহরে। প্রবীণ ব্যবসায়ী অমূল্য দাস এক দশকের বেশি সময় ধরে ওই আড্ডায় যাতায়াত করেন। প্রথমে তাঁর স্ত্রী ও পরে এক ছেলের দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়। আলিপুরদুয়ারে মেয়ের বাড়িতে থাকেন। বিকেল হলে এক ঝাঁক বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে হাজির হন প্যারেড গ্রাউন্ড মাঠের পাশে। প্রবীণ নাগরিকদের জন্য ওই ‘আড্ডার জায়গা’ তৈরি করে দিয়েছে আলিপুরদুয়ার পুরসভা। অমূল্যবাবুর কথায়, “এ বয়সে নিঃসঙ্গতা দূর করতে সমবয়সীদের সঙ্গে প্রাণ খুলে আড্ডা দিতে প্রতিদিন হাজির হই আড্ডায়।”
যে আড্ডায় হাজির অবসরপ্রাপ্তদের পরামর্শ নেয় পুরসভা। পুর চেয়ারম্যান দীপ্ত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “প্রবীণদের নানা অনুষ্ঠানে নিয়মিত আমন্ত্রণ করি। তাঁদের পরামর্শকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। তাই ওঁদের জন্য আরও একটি ঘর তৈরি করা হবে। যেখানে শুধুই প্রবীণ মহিলারা আড্ডা দিতে পারবেন।” |
এখানেই বসে প্রবীণদের আলোচনা। —নিজস্ব চিত্র। |
শহরে ৮০ প্রবীণ নাগরিক সকালে বিকালে ও সন্ধ্যায় তিনটি ভাগে আড্ডা দিতে হাজির হন প্যারেড মাঠের পাশে বৈঠকখানায়। এই আড্ডা যেন এক সময়কার চণ্ডীমণ্ডপের আড্ডার কথা মনে করিয়ে দেয় অনেককে। একে অপরের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়েন তাঁরা। কোনও সদস্য অসুস্থ হলে হাসপাতালে গিয়ে দেখাশোনা থেকে অসুস্থ বন্ধুর মানসিক জোর বাড়াতে নানা ভাবে তাদের ভরসা জুগিয়ে দ্রুত সুস্থ করে তুলতে সাহায্য করেন।
২০০৯ সালে ওই আড্ডার জায়গা তৈরি হয়। ঠিক পাশে আলিপুরদুয়ারে ফুসফুস বলে পরিচিত প্যারেড গ্রাউন্ড মাঠটির দুরবস্থা প্রবীণদের ভাবিয়ে তোলে। মাঠে অসামাজিক কাজকর্ম বন্ধ করা, মাঠে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা সহ তারা কিছু প্রস্তাব দেন পুরসভাকে। ওই প্রবীণ নাগরিকদের সংগঠনের সহ সম্পাদক বিদ্যুৎ পর্ষদের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী জিতেন্দ্রনাথ ঘোষের কথায়, “অসামাজিক কাজ রোধে পুরসভাকে উদ্যোগী হতে বলি। কিছুটা আলোর ব্যবস্থা হয়েছে। পুলিশ টহল দেয়।”
আলিপুরদুয়ার কলেজের ইতিহাস শিক্ষক শৈলেন দেবনাথ জানিয়েছেন, প্রবীণদের ওই আড্ডায় যে সব প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয় তা থেকে নানা পুর-সমস্যার সমাধান হতে পারে। |