ভোটে কাঠি পড়ার পর থেকেই ভালুকা পঞ্চায়েতের আনন্দবাস ও বনগ্রামে এলাকা দখল ঘিরে শাসক-বিরোধী দলের গণ্ডগোল লেগেই আছে।
রবিবার গভীর রাতে সিপিএম প্রার্থী সজিপা বিবির বাড়িতে হামলার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনার রেশ না কাটতেই মঙ্গলবার পুনরায় দু’দলের সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে আনন্দবাস। এ দিন তৃণমূল প্রার্থী মরিচা বিবিকে মারধরের অভিযোগ ওঠে সিপিএমের বিরুদ্ধে। জখম মরিচা বিবি শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ভর্তি। ঘটনাস্থলে গেলে তৃণমূল কর্মীরা পুলিশের উপর চড়াও হয়। ভাঙচুর করা হয় পুলিশের গাড়িতে। জখম হয়েছেন একজন কনস্টেবল। তাঁকে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে যান জেলা পুলিশের ডিএসপি (সদর) দিব্যজ্যোতি দাস। ক্ষোভে ফেটে পড়েন গ্রামবাসীরা। জেলা পুলিশ সুপার সব্যসাচীরমন মিশ্র বলেন, “দু’দলের সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে আহত হয়েছেন একজন কনস্টেবল। এই ঘটনায় জড়িতদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।”
আনন্দবাসের সংলগ্ন গ্রাম বনগ্রাম। আদিবাসী অধ্যুষিত ওই গ্রামের গরিষ্ঠ ভোটারই সিপিএম সমর্থক। আনন্দবাসের একাংশ ও বনগ্রাম মিলিয়ে ভালুকা পঞ্চায়েতের ২৩২ নম্বর বুথ। বনগ্রামের ২৯৭ জন ভোটার এই বুথের জয় পরাজয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয় সূত্রের খবর, বামেদের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত বনগ্রাম দখলের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর থেকেই মরিয়া হয়ে ওঠে তৃণমূল। সেই কারণে রবিবার বাম সমর্থক আদিবাসীদের বাড়িতে হামলার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে এলাকায় একটা চাপা উত্তেজনা ছিল। |
মঙ্গলবার বনগ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী আনন্দবাসে আসেন। অভিযোগ, সিপিএম সমর্থক ওই মহিলাদের হুমকি দেয় তৃণমূল। কিন্তু গ্রামে রটে যায় মারধর করা হয়েছে ওই চার অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীকে। অভিযোগ, এরপরেই বনগ্রামের লোকজন লাঠিসোটা নিয়ে আনন্দবাসে এসে তৃণমূল প্রার্থী মরিচা বিবির বাড়িতে চড়াও হন। মারধর করা হয় ওই তৃণমূল প্রার্থীকে। পাশাপাশি আরও ১২ জন তৃণমূল সমর্থকের বাড়িতেও হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে সশস্ত্র বাম সমর্থকদের বিরুদ্ধে। আক্রান্ত মরিচা বিবির স্বামী হুমায়ুন শেখ বলেন, “বাড়ির সকলকেই মারধর করা হয়েছে। পাশাপাশি কয়েকটি দামি বালুচরি শাড়িও লুঠ করেছে সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীরা।” জখম প্রার্থীর দেওর বাবলু শেখ বলেন, “দুষ্কৃতীরা আমার স্নাতক স্তরের শংসাপত্রও পুড়িয়ে দিয়েছে। মেয়ের বিয়ের জন্য বড়দা ৫০ হাজার টাকা ব্যাঙ্ক থেকে তুলে এনেছিলেন। সেই অর্থও লুঠ করেছে ওরা।”
গত কয়েকদিন ধরে চলতে থাকা সংঘর্ষের জেরে এলাকায় রাজনৈতিক নেতাদের আনাগোনা লেগেই রয়েছে। রবিবারের ঘটনার পর সোমবার এলাকায় গিয়েছিলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি সিপিএমের মেঘলাল শেখ। তৃণমূল নেতৃত্ব পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন, ওই দিন মেঘলাল শেখের উপস্থিতিতেই সিপিএমের লোকজন তৃণমূল প্রার্থীকে মারধর করেছে। অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে মেঘলাল শেখ বলেন, “ঘটনার সময় আমি এলাকাতেই ছিলাম না। তা ছাড়া আমি যখন যাই, তখন এলাকায় পুলিশ ছিল। অতএব আমার উস্কানি দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।”
দলীয় প্রার্থী ও কর্মীদের বাড়িতে হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার এলাকায় যান তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত ও নবদ্বীপের বিধায়ক তথা রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের প্রতিমন্ত্রী পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা। গৌরীশঙ্করবাবু বলেন, “গোটা এলাকায় সিপিএম নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। তাই সন্ত্রাস সৃষ্টি করে ভোটে জিততে মরিয়া হয়ে উঠেছে। সিপিএমের হাতে মার খেয়ে আমাদের প্রার্থী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। গণ্ডগোলের সময় পুলিশকে আক্রমণ করার ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক পুলিশ।” সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সুমিত বিশ্বাস বলেন, “গোটা ভালুকা পঞ্চায়েতেই তৃণমূলের পায়ের তলায় মাটি নেই। তাই বনগ্রাম-আনন্দবাস সহ বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালাচ্ছে শাসক দল।” |