রাফায়েল নাদালের সোচ্চার মহানিষ্ক্রমণের পাশাপাশি লেটন হিউইটের নিঃশব্দ পুনঃপ্রতিষ্ঠা!
এটাই হয়তো ২০১৩ উইম্বলডনের সবচেয়ে জুতসই উদ্বোধনী ‘স্টেটমেন্ট’!
লন্ডনের গত মেঘলা বিকেলে অগুণতি টেনিসপ্রেমীর প্রধান প্রশ্ন ছিল— নাদালকে হারানো বেলজিয়ান ছেলেটা কে? যাঁর নাম রাতারাতি এরকুল পয়রো, অড্রে হেপবার্ন, কিম ক্লিস্টার্স অথবা রোড সাইকেল রেসের সর্বকালের সেরা এডি মার্কস-এর মতো জগদ্বিখ্যাত বেলজিয়ান ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে এক নিঃশ্বাসে উচ্চারিত হওয়ার জোগাড়!
মজার কথা, খুব কম লোকই জানে, নাদাল-সংহারক স্টিভ দারসিস অল ইংল্যান্ড ক্লাবের ঘাসের কোর্টে আগেও অঘটন ঘটিয়েছেন। গত বছর লন্ডন অলিম্পিকে এই বেলজিয়ানের দ্বিতীয় রাউন্ডে ষষ্ঠ বাছাই টমাস বার্ডিচকে হারানোটা প্রায় অলক্ষ্যেই থেকে গিয়েছে। হয়তো তাই দারসিস বলেছেন, “ঘাসে আমি বরাবরই ভাল খেলি।” উইম্বলডনের সেন্টার কোর্টে যে অখ্যাত পারেন অঘটন ঘটাতে, তিনি এক নম্বর কোর্টে আর একটা ঘটাবেন তাতে আশ্চর্য কী? কিন্তু এখানে নেটের উল্টো দিকের লোকটার নাম নাদাল বলেই এত আলোড়ন। যাঁর বিরুদ্ধে আগে একবারই খেলে (২০১০ দোহা ওপেনে ০-৬, ০-২ পিছিয়ে থেকে ওয়াকওভার দেন) একটাও গেম নিতে পারেননি দারসিস। |

বয়স বত্রিশ। বসে পড়েছেন হিউইট। তবে ম্যাচ জেতার পরে। ছবি: এপি |
গত বছর সাত-সাতজন শল্যবিদের পরামর্শ অগ্রাহ্য করে ৩২ বছর বয়সি
প্রাক্তন বিশ্বসেরা তারকা
বাঁ পায়ের বুড়ো আঙুলে অস্ত্রোপচার করে হাড় বাদ দিয়ে তার
জায়গায়
এক জোড়া স্ক্রু-সহ ধাতব প্লেট
বসিয়েছিলেন। ডাক্তারদের সপ্তরথীর রায় ছিল,
এত বড় অস্ত্রোপচার হিউইটের কেরিয়ারের উপর যবনিকা টেনে দেবেই। |
|
নামটার উচ্চারণ নিয়েই তো বিবিসি টিভিতে বিশেষজ্ঞদের লম্বা আলোচনা! স্টিভ নিজেই বলেছেন, “আমিই ভাল করে জানি না আমার পদবীর ‘এস’টা উচ্চারণ হয় কি না। দারসিস, না দারসি?” স্টিভের ‘শার্ক’ ডাকনামটাও যেন নাদালকে হারানোর পর থেকেই টেনিস সার্কিটে বেশি করে শোনা যাচ্ছে। ডান কাঁধে হাঙরের ট্যাটু ছাড়াও স্টিভের টুইটার অ্যাকাউন্টের নাম ‘স্টিভদারসিশার্ক’। নিজেই ব্যাখ্যা দিয়েছেন, “হাঙর প্রজাতিটার ব্যাপারে আমি মোহাবিষ্ট। সে জন্য এ রকম করেছি। তা ছাড়া আমার রাশি মীন। মানে মাছ।”
নাদালের সেই ‘শার্ক’-এর শিকার হওয়াকে উইম্বলডনের ওপেন যুগে তিনটি বৃহত্তম অঘটনের মধ্যে ধরছেন বিশেষজ্ঞরা। সাতাশিতে তার আগের দু’বারের চ্যাম্পিয়ন বরিস বেকারের দ্বিতীয় রাউন্ডে জনৈক অস্ট্রেলীয় পিটার ডুহানের কাছে হার! ২০০৩-এ উইম্বলডনের ইতিহাসে মাত্র দ্বিতীয় চ্যাম্পিয়ন হিসেবে নেমে প্রথম রাউন্ডেই লেটন হিউইটের পরাজয় ইভো কার্লোভিচের কাছে। যে বিগ সার্ভার ক্রোটের সেটা ছিল উইম্বলডনে আবির্ভাব ম্যাচ! তার পরে ইউরোপীয় ফুটবলে নামী বেলজিয়ান ক্লাব আন্ডারলেখট্-এর ভক্ত স্টিভ দারসিসের হাতে ফরাসি ওপেন চ্যাম্পিয়ন নাদালের প্রথম রাউন্ডে বিদায়। সাতানব্বইয়ে রোলাঁ গারোয় চ্যাম্পিয়ন হয়ে উইম্বলডনে এসে প্রথম রাউন্ডে ব্রাজিলের গুস্তাভো কুয়ের্তেনের হারের পর নাদালই প্রথম, যিনি ফরাসি ওপেন জিতে সে বছরের উইম্বলডনে প্রথম রাউন্ডে হারলেন।
|
ডান কাঁধে হাঙরের ট্যাটু করা ছাড়াও স্টিভের টুইটার অ্যাকাউন্টের নাম ‘স্টিভদারসিশার্ক’। নিজেই ব্যাখ্যা দিয়েছেন, “হাঙর প্রজাতিটার ব্যাপারে আমি মোহাবিষ্ট। সে জন্য এ রকম করেছি। তা ছাড়া আমার রাশি মীন। মানে মাছ।” |
|
আবার হিউইট এ বার অল ইংল্যান্ড ক্লাবে প্রথম রাউন্ডের নায়কের সম্মান পাচ্ছেন। গত বছর সাত-সাতজন শল্যবিদের পরামর্শ অগ্রাহ্য করে ৩২ বছর বয়সি প্রাক্তন বিশ্বসেরা টেনিস তারকা বাঁ পায়ের বুড়ো আঙুলে অস্ত্রোপচার করে হাড় বাদ দিয়ে তার জায়গায় এক জোড়া স্ক্রু-সহ ধাতব প্লেট বসিয়েছিলেন। ডাক্তারদের সপ্তরথীর রায় ছিল, এত বড় অস্ত্রোপচার হিউইটের কেরিয়ারের উপর যবনিকা টেনে দেবেই। কিন্তু ২০০২-এর উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন এ বার ঘাসের কোর্টের গ্র্যান্ড স্ল্যামের সেরা প্রস্তুতি টুর্নামেন্ট কুইন্স ক্লাবে দিমিত্রভ (র্যাঙ্কিং ২৮), দেল পোত্রোকে (৮) হারিয়ে সেমিফাইনাল ওঠেন। তার পরে উইম্বলডনে শুরু করেছেন ১১ নম্বর বাছাই ওয়ারিঙ্কাকে স্ট্রেট সেটে হারিয়ে। এটিপি র্যাঙ্কিং হিউইটের (৭০) যতই নীচে হোক, এ বার উইম্বলডনে মাত্র ছ’জন গ্র্যান্ড স্ল্যামজয়ীর মধ্যে তিনি একজন। বাকি পাঁচ ফেডেরার, নাদাল, জকোভিচ, মারে, দেল পোত্রো। হিউইটের খেতাব জেতার পর গত দশ বছরে ফেডেরার-নাদাল-জোকোভিচ ছাড়া আর কেউ উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন হননি। “সবাই আমাকে অবসর নিচ্ছি কবে জিজ্ঞেস করে? কিন্তু সে রকম পরিস্থিতি কি কেউ তৈরি করতে পেরেছে? এখনও উইম্বলডনে নামলে আমার অ্যাড্রিনালিন দারুণ নিঃসরণ হয়। আমার পর দশ বছরে মাত্র তিনজন এখানে ট্রফিতে হাত রেখেছে। তা হলে আমার ফের সফল হতে সমস্যা কোথায়?” দাবি চিরসবুজ অস্ট্রেলীয় টেনিস তারকার। |