উত্তরাখণ্ডের বিপর্যয়ের মধ্যে বড় বিসদৃশ হইয়া বাজিতেছে রাজনীতির তরজা: শাসক ও বিরোধী দলের পারস্পরিক চাপান-উতোর ও কাদা-ছোড়াছুড়ি। উত্তরাখণ্ড রাজ্যটি বর্তমানে কংগ্রেস-শাসিত হওয়ায় বিরোধী দল বিজেপি এই বিপর্যয় রোধে বা তাহার মোকাবিলায় শাসকের সীমাবদ্ধতা লইয়া যথেচ্ছ কামান দাগিতেছে। সেই গোলাবর্ষণের মধ্যে বিপর্যয়ের সময় রাহুল গাঁধীর অনুপস্থিতির বিষয়টিও লক্ষ্যবস্তু হইতেছে। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কেমন দক্ষতার সহিত পনেরো হাজার গুজরাতি পুণ্যার্থী ও পর্যটককে উদ্ধার করিয়া বাড়ি পাঠাইয়াছেন, তাহার গর্বিত বিবরণীও শুনানো হইতেছে। জবাবে কংগ্রেস তীব্র প্রশ্ন ছুড়িয়া দিতেছে: মোদী কেন গোধরা-উত্তর দাঙ্গার সময় আরও বেশি মানুষকে বাঁচাইতে উদ্যোগী হন নাই।
মুখে জাতীয় বিপর্যয় আখ্যা দিলেও বিপর্যস্ত মানুষদের কষ্টযন্ত্রণা লইয়া সংকীর্ণ রাজনীতি করার সুযোগ কোনও দলই কি ছাড়িতে প্রস্তুত নয়? মোদী যে তাঁহার রাজ্যবাসীর উদ্ধারে তত্পরতা দেখাইয়াছেন, তাহাতে সংশয় নাই। কিন্তু উদ্ধারকার্য তো ব্যক্তিগত ভাবে তিনি করেন নাই, করিয়াছেন সেনা-জওয়ানরা। তা ছাড়া, কেন কেবল গুজরাতি দুর্গতরাই মোদীর সহানুভূতি পাইবে, অন্য রাজ্যের বাসিন্দারা নয়, সেই প্রশ্নও উঠিতে পারে। আবার কংগ্রেসের তরফে এই বিপর্যয়ের জন্য বিজেপির উত্তরাখণ্ড শাসনকালে সংঘটিত পরিবেশ ধ্বংসের ঘটনার উপর দায় চাপানো হইতেছে। কিন্তু কংগ্রেস বা বিজেপি, উভয় সরকারই সব হুঁশিয়ারি অগ্রাহ্য করিয়া যথেচ্ছ নদী-বাঁধ দিয়া অসংখ্য জলবিদ্যুত্ কেন্দ্র ও হোটেল-মোটেল নির্মাণ এবং বিপুলসংখ্যক দূষণকারী মোটরযান যাতায়াতের পক্ষে সওয়াল করিয়াছে স্থানীয় অর্থনীতির বিকাশ এবং জন-উন্নয়নের নামে।
বিপর্যয়ের জন্য কিংবা বিপর্যয়-উত্তর উদ্ধার ও ত্রাণকাজে ত্রুটিবিচ্যুতির জন্য পারস্পরিক দোষারোপ করিয়া অতএব লাভ নাই। এই মুহূর্তে যাহা প্রয়োজন, তাহা হইল, বিপর্যয় লইয়া রাজনীতি বন্ধ করিয়া সমবেত ভাবে, দলমতনির্বিশেষে দুর্গতত্রাণে আত্মনিয়োগ করা। নিজেরা কিছু করিতে না পারিলে অন্তত যাহারা করিতেছে, নিন্দা-সমালোচনা না করিয়া তাহাদের সাহায্য করা। প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে বিপর্যয় লইয়া বক্তৃতা দিলেন কি না, তাহার অপেক্ষা অনেক বেশি জরুরি সরেজমিনে আকাশপথে তাঁহার বিপর্যয়কবলিত এলাকা পরিদর্শন এবং তাহার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ত্রাণ-তহবিল মুক্ত করা। রাহুল গাঁধী ব্যক্তিগত ভাবে দুর্গত এলাকায় গেলেন কি না, কবে গেলেন, তাহাও বোধহয় প্রাসঙ্গিক নয়। বরং ভিআইপি-রা এই সব ক্ষেত্রে যত কম অকুস্থলে যান, ততই দুর্গতদের মঙ্গলতাঁহাদের উদ্ধার ও ত্রাণের কাজটি সুষ্ঠু ভাবে সম্পাদিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কেননা প্রশাসন তখন ভিআইপিদের পিছনে ছোটে না। সমস্ত দলেরই এখন আর কিছু না হউক, বাস্তববাদী হওয়া জরুরি। মহানুভবতার প্রত্যাশা বৃথা, চক্ষুলজ্জাই যথেষ্ট হইবে। |