সম্পাদকীয় ১...
মেধার গৌরবহীন
বামফ্রন্টের অনলস প্রচেষ্টায় পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাক্ষেত্রটি মধ্যমেধার পীঠস্থানে পরিণত হইয়াছিল। যাহার হওয়ার কথা ছিল আলোর উত্‌স, সেই শিক্ষার পরিসরে অন্ধকার জমাট বাঁধিয়া আছে। এই সর্বব্যাপী অন্ধকারে, আশা ছিল, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় এক অনির্বাণ দীপশিখার ন্যায় প্রজ্বলিত থাকিবে। বিশ্ববিদ্যালয়টির সূচনা হইয়াছিল ভাল। দেশবিদেশের প্রথিতযশা শিক্ষকরা এই প্রতিষ্ঠানে যোগ দিয়াছিলেন। কিন্তু আশঙ্কা হইতেছে, স্বপ্নের উড়ান আরম্ভ হইবার পূর্বেই তাহা মুখ থুবড়াইয়া পড়িবে না তো? একে একে সাত জন শিক্ষক প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করিয়াছেন। তাঁহাদের অধিকাংশেরই অভিযোগ, এই প্রতিষ্ঠানে গবেষণার পরিকাঠামো নাই। হইবে, তেমন আশাও নাই। যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা হইতেছিল, তখন কি কর্তারা জানিতেন না যে বিশ্বমানের শিক্ষকরা গবেষণার সুযোগ চাহিবেন? যে পরিকাঠামো প্রয়োজন, তাহার ব্যবস্থা না করিয়াই বিশ্ববিদ্যালয় চালু করা হইল কেন? শিক্ষামন্ত্রী অবশ্য বলিয়াছেন, শিক্ষকদের পদত্যাগের সহিত পরিকাঠামোর অভাবের কোনও সম্পর্ক নাই। তথ্য লইয়া তর্ক সম্ভব, মতামত লইয়া নহে। কিন্তু পরিকাঠামোর যে অভাব আছে, শিক্ষামন্ত্রীর কথাতেও তাহা স্পষ্ট। তিনি জানাইয়াছেন, ধীরে ধীরে ব্যবস্থা হইবে। ভবিষ্যত্‌ সেই অপেক্ষায় থাকিবে তো? আরও একটি লজ্জা মাসকয়েক পূর্বে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে যে রাজনৈতিক তাণ্ডব হইয়াছিল, তাহাতে ঐতিহ্যমণ্ডিত বেকার ল্যাবরেটরির বিপুল ক্ষতি হয়। ক্ষতিগ্রস্ত গবেষণাগারটির সংস্কার হয় নাই।
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় লইয়া যে প্রশ্ন উঠিতেছে, তাহার শিকড় যে অনেক গভীরে, এমন সংশয়ের কারণ আছে। শিক্ষামন্ত্রী জানাইয়াছেন, মেন্টর গ্রুপের সদস্যরা নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস লইতে পারেন। অমর্ত্য সেন বা সুগত বসুর ন্যায় কৃতবিদ্য শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে পড়াইতে আসিলে তাহা অপেক্ষা সুসংবাদ আর হয় না। কিন্তু, তাহা কি সম্ভব? তাঁহাদের ব্যস্ততার মধ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াইবার জন্য কতখানি সময় তাঁহারা দিতে পারিবেন? আরও বড় কথা, নিয়মিত শিক্ষকরা চাকুরি ছাড়িতেছেন বলিয়া মেন্টর গ্রুপের সদস্যদের ক্লাস নিতে বলা হইবে এই ‘সমাধান’ কোনও কাজের কথা হইতে পারে না। বস্তুত, এই চিন্তাটিই পশ্চিমবঙ্গের মূল সমস্যার দিকে নির্দেশ করে। এই রাজ্যে সমস্যামাত্রেই তাহাকে ধামাচাপা দেওয়া নিয়ম। কেন শিক্ষকরা চাকুরি ছাড়িতেছেন, কী ব্যবস্থা হইলে তাঁহারা অন্যত্র চাকুরি খোঁজার কথা ভাবিবেন না, নূতন শিক্ষক প্রয়োজন হইলে কোথায় তাঁহাদের খোঁজ করিতে হইবে এই প্রশ্নগুলি শিক্ষামন্ত্রী ও উপাচার্যের বৈঠকে যথেষ্ট গুরুত্ব পাইয়াছে কি?
সমস্যাকে জিয়াইয়া রাখিবার এই প্রবণতাই পশ্চিমবঙ্গকে ক্রমে এবং নিশ্চিত ভাবে মেধার গৌরবহীন, একা করিয়াছে। স্মরণে রাখা প্রয়োজন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সামাজিক জীব। ফলে, বৃহত্তর সমাজ স্বভাবতই তাঁহাদের প্রভাবিত করিবে। পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান নৈরাজ্য কাহারও নিকট প্রেরণা হইতে পারে না। ফলে, অনুমান করা সম্ভব, পশ্চিমবঙ্গের কলুষিত রাজনৈতিক আবহাওয়ায় অনেকেরই শ্বাসরোধ হইয়া আসিতেছে। প্রেসিডেন্সি কলেজ হইতে একের পর এক শিক্ষকের বিদায়কে বস্তুত একটি প্রতীক হিসাবে দেখা সম্ভব পশ্চিমবঙ্গ হইতে মেধার বিদায়ের প্রতীক। এই রাজ্যের মেধাবী ছাত্ররা গোটা দেশে, গোটা দুনিয়ায় ছড়াইয়া আছেন। তাঁহারা স্বক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত। তাঁহাদের মেধার সুফল পশ্চিমবঙ্গ পাইতেই পারিত, যদি রাজ্যের রাজনৈতিক সমাজ এই রাজ্য হইতে তাঁহাদের বিদায় এমন সুনিশ্চিত না করিয়া তুলিত। তাঁহারা জানেন, এই রাজ্যের ঘোলাজল তাঁহাদের কাজ করিতে দিবে না, বরং সর্বশক্তিতে অতলে টানিবে। প্রেসিডেন্সির বিদায়োন্মুখ শিক্ষকরা যে কারণে নাচার বোধ করিতেছেন, মূলত সেই একই কারণ এই রাজ্যের মেধাবী সন্তানদের পাকাপাকি ভাবে রাজ্যছাড়া করিয়াছে। আশঙ্কা হয়, তাঁহারা ফিরিবেন না, ভবিষ্যতের মেধাবীরাও কাল অথবা পরশু এই রাজ্যকে বিদায় জানাইবেন। পড়িয়া থাকিবে ঘোলা জল, পড়িয়া থাকিবে শিক্ষাক্ষেত্রে রাজনৈতিক দাপাদাপি, পড়িয়া থাকিবে ভাঙা বেকার ল্যাবরেটরি। পড়িয়া থাকিবে হতভাগ্য পশ্চিমবঙ্গ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.