তেরো মাস ধরে নিখোঁজ দুই যুবক। হদিস তো মেলেইনি, অপহরণ করে খুনের যে মামলা দায়ের হয়েছিল, তারও চার্জশিট দেয়নি পুলিশ। ওই যুবকদের খোঁজ পেতে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন এক নিখোঁজের দাদা। সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্ট কেতুগ্রাম থানাকে আট সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত শেষ করে ফৌজদারি আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
|
বিনয় |
|
টগর। |
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর ৯ মে নিখোঁজ হন বামুন্ডি গ্রামের টগর শেখ ও তাঁর বন্ধু বিনয় সর্দার। টগরের দাদা কদর শেখ গত বছর ১১ মে কেতুগ্রাম থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। তার এক সপ্তাহ পরে তিনি আবার পুলিশে অভিযোগ করেন, তাঁর ভাই ও বন্ধুকে একটি গাড়িতে করে তুলে নিয়ে গিয়ে খুন করা হয়েছে। দেহ লোপাটের জন্য বামুন্ডি গ্রাম থেকে কিছু দূরে নিরোলের মুড়গ্রামের মাঠে দেহ দু’টি পুঁতে ফেলা হয়। পুলিশকে খোঁজাখুঁজি করতে দেখে চার দিন পরে দেহ দু’টি তুলে নিয়ে গিয়ে অন্যত্র আলাদা ভাবে পুঁতে দিয়েছে বলে তাঁর অনুমান, পুলিশকে জানান কদর শেখ।
কেতুগ্রাম থানা সূত্রে জানা যায়, কদর শেখের অভিযোগ পাওয়ার পরেই আপেল শেখ, কমরেড শেখ-সহ চার জনের বিরুদ্ধে অস্ত্র দেখিয়ে অপহরণ এবং খুন করে মৃতদেহ লোপাটের মামলা শুরু করা হয়। অভিযুক্তদের গ্রেফতারও করা হয়। তবে তারা এখন জামিনে মুক্ত রয়েছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, টগর শেখ ও বিনয় সর্দার এলাকায় তৃণমূল কর্মী হিসেবে পরিচিত। বামুন্ডি এলাকায় তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠী রয়েছে। নিখোঁজ দু’জন সাউদ মিঞা-গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। তৃণমূলের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ঘটনার পর থেকে সাউদ রাজনৈতিক কাজকর্ম বন্ধ করে দিয়েছে। বামুন্ডি এলাকায় এখন দাপট রয়েছে তৃণমূল কর্মী তথা ওই ঘটনায় অভিযুক্ত আপেল শেখের।
কেতুগ্রাম থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্তদের জেরা করেও কোনও তথ্য মেলেনি। এর পরে কদর শেখ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল সাংসদ মুকুল রায়ের দ্বারস্থ হন। গত ২২ মার্চ মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে পুলিশকে চিঠি দিয়ে ঘটনার তদন্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়। সম্প্রতি কদর শেখ ঘটনার সিআইডি তদন্ত চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করেন। তিনি আদালতকে জানান, ১৩ মাস কেটে গেলেও পুলিশ এখনও তাঁর ভাই ও বন্ধুর কোনও খোঁজ দিতে পারেনি। প্রমাণ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, এমন আশঙ্কার কথাও জানান তিনি। এর পরেই গত ১১ জুন হাইকোর্ট কেতুগ্রাম থানাকে ৮ সপ্তাহের মধ্যে চার্জশিট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। জেলার এক পুলিশকর্তা বলেন, “আদালতের নির্দেশ মেনেই চার্জশিট জমা দেওয়া হবে।”
সিপিএমের ভাগীরথী-অজয় জোনাল কমিটির সদস্য তপন কাজীর অভিযোগ, “তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জন্য পুলিশ এক বছর ধরে ওই দুই যুবককে খোঁজার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি।” তৃণমূলের কেতুগ্রাম ১ ব্লক সাধারণ সম্পাদক জাহের শেখের যদিও বক্তব্য, “পুলিশ তার কাজ করবে। এর মধ্যে তৃণমূলের ব্যাপার নেই। আমরাও চাই, ওই দুই যুবকের হদিস দিক পুলিশ।” |