ভোটের আগে সমস্যা মেটানোর দেদার আশ্বাস। ভোট পেরোলে আর মেলে না দেখা। ফের যখন নির্বাচনের ডঙ্কা বাজে, সেই সমস্যার কথাই হাতিয়ার করে শাসক-বিরোধী দু’পক্ষই। শুরু হয় তরজা। পানীয় জলের সমস্যা নিয়ে তেমন তরজাই শুরু হয়েছে গলসি ১ ব্লকের মানকর-বুদবুদে।
এই এলাকায় জলের সমস্যা মেটাতে রাজ্যের তত্কালীন পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী বঙ্কিম ঘোষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরে কেটে গিয়েছে ছ’বছর। পরিস্থিতি বদলায়নি। এ বার পঞ্চায়েত ভোটের প্রাক্কালে সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ না হওয়া ও নতুন সরকারের আমলে উদ্যোগের কথা মানুষকে বোঝাতে তত্পর হয়েছে তৃণমূল। সিপিএমের পাল্টা দাবি, যেটুকু উদ্যোগ হয়েছে, তা তাদের লাগাতার দাবির জন্যই।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৮০ সালে এক লক্ষ গ্যালন ক্ষমতার জলাধার গড়ে পাইপলাইনের মাধ্যমে এলাকায় জল সরবরাহের ব্যবস্থা করেছিল জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। বেশ কয়েক বছর আগে ওই দফতর বুদবুদের সেই জল সরবরাহ প্রকল্প পঞ্চায়েত সমিতিকে দেয়। পঞ্চায়েত সমিতি সূত্রে জানা যায়, প্রকল্প হাতে পাওয়ার সময়ে প্রচুর টাকা বিদ্যুত্ বিল বাকি ছিল। প্রকল্পের যন্ত্রপাতি পুরোনো হয়ে যাওয়ায় ট্যাঙ্কে জলও উঠত না। তবু বাসিন্দাদের কথা ভেবে সরাসরি পাম্প চালিয়ে তা সরবরাহের ব্যবস্থা করেছিল পঞ্চায়েত সমিতি। ফলে বিদ্যুত্ খরচও বেশি হত। পাম্প হাউসের কর্মীরাও নিয়মিত বেতন পেতেন না। মাঝে মাঝে জেলা পরিষদ থেকে পাওয়া এককালীন অর্থে কোনও রকমে চলত। এক সময়ে বিদ্যুত্ বিল প্রায় ২৩ লক্ষ টাকায় পৌঁছায়। ২০০৬ সালে প্রকল্পটি বন্ধ করে দেয় পঞ্চায়েত সমিতি। |
পড়ে আছে খালি ট্যাঙ্ক। —নিজস্ব চিত্র। |
বাসিন্দারা জানান, ওই প্রকল্পের জল বুদবুদ বাজার, বুদবুদ গ্রাম, মানকর ছাড়িয়ে ভিড়সিন গ্রামেও যেত। তাঁদের অভিযোগ, মানকরে জলস্তর গভীর। নলকূপ বসাতে খরচ বেশি। সবার সেই সামর্থ্য নেই। সারা বছর কোনও রকমে কাজ চললেও গ্রীষ্মে জলস্তর নেমে গেলে বিপাকে পড়তে হয়। বুদবুদ ও মানকর পঞ্চায়েতের তরফে কিছু নলকূপ বসানো হলেও তা যথেষ্ট নয় বলে দাবি বাসিন্দাদের।
২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে তত্কালীন পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী বঙ্কিমবাবু এলাকায় এসে মানকরে জল সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার আশ্বাস দেন। কিন্তু বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন কোনও ব্যবস্থা হয়নি। ২০১১ সালে গলসি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হন ফরওয়ার্ড ব্লকের সুনীল মণ্ডল। বিধানসভায় বুদবুদ-মানকরের জল সমস্যা নিয়ে সরব হন তিনি। সুনীলবাবু বলেন, “তত্কালীন জনস্বাস্থ্য কারিগরি মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় গলসি ১ ব্লকে তিনটি পানীয় জল প্রকল্পের অনুমোদন দেন। তারই একটি গড়া হবে বুদবুদে। মোট খরচ ৬ কোটি ৬৪ লক্ষ টাকা।”
গলসি ১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি জনার্দন চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, এই পঞ্চায়েত সমিতি বরাবর সিপিএমের দখলে। কিন্তু জল সমস্যা মেটাতে তারা উদ্যোগী হয়নি। তিনি বলেন, “বাম আমলে আশ্বাস মিললেও কাজ কিছুই হয়নি। নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে এখানে নতুন জলপ্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে। প্রচারে এই বিষয়টি তুলে ধরছেন আমাদের কর্মীরা।” অভিযোগ মানতে চাননি সিপিএম পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জয়শ্রী বিষ্ণু। তাঁর দাবি, পুরনো প্রকল্পটি প্রথম থেকেই পঞ্চায়েত সমিতির ‘গলার কাঁটা’ হয়ে উঠেছিল। তবু মানুষের অসুবিধার কথা ভেবে বহুদিন পর্যন্ত তা চালানোর চেষ্টা করা হয়। তিনি বলেন, “কে কী বলছেন জানি না। তবে নতুন জল প্রকল্প চেয়ে পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট দফতরে দরবার করা হয়। তার পরেই তিনটি পানীয় জল প্রকল্পের অনুমোদন মেলে।” |