|
|
|
|
|
আপনার কলার টিউনই আপনার পরিচয়
শুধুই কি মুড অনুযায়ী গান বদল? না কি সেই গানে ধরা পড়ে
একজন মানুষের ভাবনাও? কান পাতলেন অদিতি ভাদুড়ি |
|
সদ্য প্রেম ভেঙে যাওয়া রূপসার চোখের পাতা ভারী হয়ে আসা অভিমানটা উস্কে ওঠে ওর প্রিয় বন্ধুর ফোনে কল করলেই। রাশিদ খানের আবেগবিহ্বল গলায় ‘আও গে যব তুম সাজনা’ কলার টিউনটা ও এখন যেন সহ্যই করতে পারে না।
গান তো অন্তহীন। তবে এই গান শুধু গান নয়। মনের আয়নাও বটে। কতগুলো প্রশ্নও থেকে যায়। এখনকার জেনারেশন কি শুধুই ট্রেন্ডিং গান অনুযায়ী তাদের কলার টিউন বদলানোর পক্ষপাতী? না কি কলার টিউন পরিচয় দেয় মন এবং মননের গভীরতারও?
“এখন এত ধরনের কলার টিউন! আর মোবাইল সার্ভিস প্রোভাইডারদের কলার টিউনের পলিসিগুলোও খুব ফ্লেক্সিবল হয়ে গিয়েছে। পছন্দ মতো বেছে নিলেই হল,” মত কলকাতার স্কুলপড়ুয়া শায়েরির।
একই মত রাজর্ষি, অনিরুদ্ধদের মতো সদ্য কলেজে পা রাখা ঝকঝকে জেন-ওয়াই ছেলেমেয়েদেরও। তবে হালফিলের বাংলা গান নিয়ে সবাই মোটামুটি একমত। “এত ক্যাচি প্রেজেন্টেশন আর শ্রুতিমধুর গানগুলো! এখন তো এলভিস, রিহানা, এমনকী এনরিকেরাও ব্যাক লিস্টে চলে যাচ্ছে,’’ বলতে বলতেই হেসে ফেলে অঙ্কনা। |
কলার টিউন সামগ্রিক ব্যক্তিত্বের প্রতিফলন। আমার টিউন ‘রেনকোট’ সিনেমার ‘মথুরা নগরপতি’ গানটি। বহু আবেগ ধরা আছে এই গানে
দেবজ্যোতি মিশ্র |
আমার কলার টিউন সপ্তকের ‘যে ভাবে হাওয়াতে গোধূলি রং ঝরে পড়ে’ গানটি। সপ্তকের যে কোনও গান কলার টিউনে রাখাটাই বেশি পছন্দ করি
মানালি দে ভট্টাচার্য |
গীতা দত্তের গানের খুব বড় ফ্যান। কলার টিউনে ওঁর ‘অ্যায় দিল মুঝে বতা দে’ গানটা ব্যবহার করছি। মেলোডিয়াস গান কলার টিউনে রাখতে ভাল লাগে
সুচিত্রা ভট্টাচার্য |
|
পূর্ব ভারতের এক প্রখ্যাত সঙ্গীত বিপণন সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্তা ফজলে করিম জানালেন, হালফিলের বাংলা সিনেমার গানের জনপ্রিয়তা এতটাই যে, কলার টিউন বেছে নেওয়ার তালিকায় আধুনিক প্রজন্মের সব থেকে পছন্দ এই গানগুলোই। কথাপ্রসঙ্গে জানালেন, “টিন-এজরা এই গানগুলো নিজেদের কলার টিউন করার ব্যাপারে সত্যিই ক্রেজি। গত তিন বছরে জনপ্রিয়তার দিক থেকে অনেক এগিয়ে ‘অন্তহীন’ সিনেমার গানগুলো। ‘যাও পাখি’ তো রেকর্ড ব্রেকার হিট। ‘অটোগ্রাফ’, ‘হেমলক সোসাইটি’, ‘বাইশে শ্রাবণ’-এর গানও কলার টিউন হিসেবে সাঙঘাতিক জনপ্রিয়।”
তিনি এও জানালেন মূলত সার্ভিস প্রোভাইডাররাই কলার টিউন পরিষেবা দিয়ে থাকেন। মিউজিক কোম্পানিদের লাভের খাতায় এমন কিছুই যোগ হয় না। তবে কলার টিউন ডাউনলোড করার ক্ষেত্রে এই সার্ভিস প্রোভাইডারদের যা লাভ হয়, তার মোটামুটি ১০ শতাংশ হিসেবে মুনাফা মিউজিক কোম্পানিরা পায়। তিনি আরও বলেন, “সিআরবিটি বা কলার রিং ব্যাক টোন প্রচুর জনপ্রিয় এক পরিষেবা। দেখুন না, এখন তো গান শোনার অনেক পার্সোনালাইজড মিডিয়ম এসে গিয়েছে। তাতেও কিন্তু কলার টিউনের জনপ্রিয়তা মোটেই কমেনি।”
মোহর স্কুলশিক্ষিকা। তিনিও কলার টিউনের পক্ষেই সওয়াল করলেন। “আমি মাঝেমধ্যেই কলার টিউন বদলে নিই। বন্ধুবান্ধবীদের কাছ থেকে বেশ প্রশংসাও পাই। তা ছাড়া মোবাইল কোম্পানিগুলো নানা সময় বেশ ভাল ভাল অফারও দেয়। পছন্দ হলে নাও। নইলে নিও না!” |
|
বদ্তমিজ দিল (ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি) |
গভীর জলের ফিশ (খোকা ৪২০) |
তুমহি হো (আশিকি ২) |
বোঝে না সে বোঝে না (বোঝে না সে বোঝে না) |
|
তবে কথা বলে জানা গেল সবাই যে খুব কলার টিউন ব্যবহার করার পক্ষে, এমনটাও নয়। বিদেশি ভাষার শিক্ষিকা অনুরাধা মৈত্র যেমন বললেন, “সার্ভিস প্রোভাইডাররা অনেক সময়ই ওদের মনপসন্দ টিউন জুড়ে দেয়। অপ্রয়োজনীয় চার্জও কাটে। আমার স্টুডেন্টরা অনেক সময় রীতিমতো অভিযোগ জানিয়েছে আমি কী সব গান কলার টিউন করেছি এই বলে!’’ আবারও হাসতে হাসতে জানান, “তবে অনুপমের ‘আমাকে আমার মতো থাকতে দাও’ গানটাকে এখন কলার টিউন করেছি। কী সুন্দর না গানটা?”
বাজারে আইপড, আইফোন, এমপিথ্রি ছাড়াও হাজারো অ্যাপসের ভিড়ে কলার টিউন কি কিছুটা হলেও জায়গা হারাচ্ছে না? জেনারেশন ওয়াই কিন্তু সবেতেই স্বচ্ছন্দ। কলার টিউন তাই চলছে। ভবিষ্যতেও চলবে। অন্তত যত দিন মোবাইল ফোন নামক বস্তুটি রয়েছে, তত দিন তো নিশ্চিন্তে। |
|
|
|
|
|