উনিশে পা
জিও ক্লাস থার্টিন! কলেজে ভর্তির জন্য শহরের নানা প্রান্তে লম্বা লাইন, নিশ্চয়ই চোখে পড়েছে। একরাশ স্বপ্ন নিয়ে এক ঝাঁক পড়ুয়া। পা বাড়িয়ে রয়েছে জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় অধ্যায় কাটাবে বলে। দেখলে মনে হয়, ট্রিগার টিপলেই সবাই দৌড় শুরু করবে। মনে পড়ছে আপনার কলেজ জীবনের প্রথম দিনের কথা? অনেকটা ‘অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড’য়ের মতো মনে হয়েছিল না? কলেজ জীবনে প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে কত কিছুই না ঘটে! ক্যানভাসে তুলি দিয়ে সব রং একসঙ্গে ছেটালে যেমন হবে, অনেকটা সে রকমই কলেজের দিনগুলি। কী, আর এক বার আপনার মনকে ফাঁকা ক্যানভাস ভেবে ডুব দেবেন নাকি কলেজের দিনগুলোতে?

দুরু দুরু বুকে প্রথম দিন
স্কুল শেষ মানেই বেশ একটা স্বাধীন-স্বাধীন ব্যাপার। যেন হঠাৎ অনেকটা বড় হয়ে যাওয়া। ইউনিফর্ম নেই, সময়ের বাধ্যবাধকতা নেই, বাবা-মায়ের কড়া নজরদারিও যেন একটু শিথিল এই সময়। মনোবিদ সঞ্চিতা পাকড়াশীর ব্যাখ্যা, কলেজেই প্রথম ঘরের ঘেরাটোপ ছেড়ে বেরোয় ছেলেমেয়েরা। একই মানসিকতার অনেক ছেলেমেয়ে একসঙ্গে হয়। তাই সবার মধ্যেই একটা চোখ ধাঁধানো ব্যাপার থাকে। এ সবের প্রতিফলন ঘটে চলনবলন, কথাবার্তায়। কলেজের প্রথম দিন মানেই তাই অনেক রকম অনুভূতির খিচুড়ি। শ্রেয়া আর ওঁর বন্ধুরা খুব উত্তেজিত। অবশেষে ওঁদের কলেজে পদার্পণের দিন চলে এসেছে। কত যে জল্পনা ওঁদের! কী পোশাক পরবেন, কী ভাবে নিজেদের পরিচয় দেবেন, কী ভাবে সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব করবেন-এই সব। দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী শ্রীপর্ণার দারুণ মজা লেগেছিল ফার্স্ট ইয়ারে কলেজে আসার পর। আসল উদ্দেশ্য বন্ধুত্ব করা। তবে তার মাঝে, নানা প্রশ্ন করে বিব্রত করা, “তুই নাকি দারুণ গান করিস! ওই গানটা শোনা।” তার পর তাঁকে বাধ্য করা গান গাইতে, তা সে যতই বেসুরো হোক না কেন! মনোবিদ সঞ্চিতা বলছেন, এটা গ্রুপ সাইকোলজি। অনেকটা শাশুড়ি-বৌয়ের মতো। আমাদের ফ্রেশার হিসেবে যে ভাবে ট্রিট করা হয়েছিল, আমরাও তাই করব। কিম্ভুতকিমাকার প্রশ্নও করা হয়। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে প্রথম দিন ক্যাকটাসের সিধুকে বিষয় দেওয়া হয়েছিল প্রেমের সাগরে তুমি, আমি, চারিদিকে কনডোম ভেসে বেড়াচ্ছে! এই রকম বিষয় নিয়ে সবার সামনে বলা। মানে ব্যাপারটা কী অস্বস্তিকর বুঝতেই পারছেন। “তবে পুরোটাই খুব মজা করে হত, নাথিং সিরিয়াস।” বললেন পটা। “কর্তৃত্ব ফলাতে কার না ভাল লাগে,” বলেন সায়নী, দক্ষিণ কলকাতার একটি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ভূগোলের ছাত্রী, “ওই প্রথম কয়েক দিনই সিনিয়রদের একটু সমঝে চলে জুনিয়ররা। তার পর ওরাও বুঝে যায়, এরা গর্জায় কিন্তু বর্ষায় না।”

আসল উদ্দেশ্য যেন ভুলে যেয়ো না
হলফ করে বলতে পারি পড়াশোনায় খুব মনোযোগী যাঁরা, তাঁরাও ফার্স্ট ইয়ারে দারুণ মন দিয়ে পড়েছে, এই উদাহরণ বিরল। প্রথমত, মনে হয় ওহ্! কলেজে পৌঁছে গিয়েছি, ব্যস, এর পর গ্র্যাজুয়েশন তো হাতের মুঠোয়। নিজের পছন্দের বিষয় নিয়ে পড়ব, এ আর এমন কী কঠিন কাজ! মনোবিদরা বলছেন, “এটাও এক ধরনের গ্রুপ সাইকোলজি।” এই মানসিকতা যে কতটা ভুল, তা পার্ট ওয়ানের পরীক্ষা দেওয়ার সময় হাড়ে হাড়ে টের পান সবাই। “একটু ক্যাজুয়াল অ্যাটিটিউড আসে বইকী,” বললেন ‘বাপি বাড়ি যা’-র অর্জুন চক্রবর্তী। “আমারও এসেছিল। মনে হয় তিন বছর তো! ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু তারপর রেজাল্ট আশানুরূপ না হওয়ায়, তৎক্ষণাৎ ফাঁকিবাজি ক্যান্সেল।”
ছবি: কৌশিক সরকার
অধ্যাপক দেবাশিস সরকার বলছেন, “এই সময়ে, শিক্ষকের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ আগে কলেজপড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের কাছে নিজের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করা। বন্ধু হয়ে ওঠা। অল্প সময়ে অনেক বেশি এক্সপোজার পায় একজন স্টুডেন্ট। কলেজে এসে তাই ওদের একটু সময় দিতে হবে থিতু হওয়ার। দ্বিতীয়ত, ক্লাস বাঙ্ক করা যায়। পাস ক্লাসে প্রক্সি দেয় বন্ধু। ব্যস, চলল সবাই দল বেঁধে আড্ডা দিতে, বা সিনেমা দেখতে। মনে হয় বুঝি শিক্ষক বুঝতে পারেননি বা খেয়াল করেননি। প্রকৃতপক্ষে, কোনও কিছুই শিক্ষকদের নজর এড়ায় না।” অভিনেতা অর্জুন ‘গানের ওপারে’ সিরিয়ালে অভিনয় শুরু করেন যখন তিনি ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্ট। ক্লাস বাঙ্ক খুব একটা করেননি। সেন্ট জেভিয়ার্সে এতটা কড়াকড়ি যে পরপর দু’টো ক্লাস মিস হলেই, টিচাররা ঠিক খেয়াল করতেন। প্রথম বছর অনেক ছাত্রই, ওদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অতটা ওয়াকিবহাল থাকেন না, খেয়াল করেছেন দেবাশিস সরকার। কিছুটা লাগামছাড়া। বললেন, “আমি নিজের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, এমন অনেক স্টুডেন্ট যারা পড়াশুনায় ভাল, আবার দুষ্টুমিও প্রচণ্ড করে। ওদের শাসন করতে হবে, কিন্তু যত্ন নিয়ে।”
তৃতীয়ত, জীবনে কি শুধু পড়াশুনোই করব? আরও কত কিছু আছে যেমন, কলেজ ফেস্টে এ বার কোন বাংলা ব্যান্ড গাইতে আসবে তা নিয়ে আলোচনা, সমাজ নিয়ে আলোচনা, এ সবেরও তো প্রয়োজনীয়তা আছে। মনোবিদ সঞ্চিতা বলছেন, “কলেজে এসে পরিবারের বাইরে এমন একটা জায়গা পায় ছাত্রছাত্রীরা, যেখানে ওরা ওদের কথা, অনুভূতি প্রকাশ করতে পারে। মানসিক বিকাশ ঘটে।” অর্জুনের মনে হয়, সেন্ট জেভিয়ার্সের দিনগুলো ওকে অনেক বেশি দায়িত্বশীল করে তুলেছে।

ইয়ারো দোস্তি বড়ি হি হসিন হ্যায়
কলেজের প্রথম দিনেই ছোট ছোট গ্রুপ তৈরি হয়ে যায়। কিছুটা বাধো বাধো ব্যাপার থাকে। প্রথমে কয়েক জনের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়। তার পর এক একটা দিন করে বন্ধুর সংখ্যা বাড়ে। নিজের জীবনের সব কিছু বন্ধুর সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া, গ্রুপ স্টাডি করা, পছন্দ অপছন্দের খেয়াল রাখা, প্রয়োজনে বন্ধুর জন্য জান লড়িয়ে দেওয়া। ধীরে ধীরে এমন এক নিঃস্বার্থ সম্পর্ক গড়ে ওঠে, যা আমাদের জীবনের সম্পদ হয়ে যায়। বন্ধুত্বের রং কী? ঠিক জানা নেই। তবে প্রেমের রং যদি লাল হয়, তবে বন্ধুত্বের রং আরও উজ্জ্বলতর হবে, হয়তো সূর্যের প্রথম কিরণের রং। অভিনেত্রী সোহিনী সেনগুপ্ত যাদবপুরে পড়াকালীন পেয়েছিলেন দারুণ কসমোপলিটান পরিবেশ। বন্ধুদের সঙ্গে নাটক আড্ডা সবই চলত। খুব কাছের দুই বান্ধবীর সঙ্গে এখনও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে সোহিনীর । “আমরা নিজেদের বলি থ্রি উইচেস।” সিধু জানালেন কী ভাবে চিরকুট বিনিময়ে কথোপকথন চলত বন্ধুদের মধ্যে। “এখন বিবিএম, হোয়াটস্অ্যাপের মাধ্যমে যা হয়, তাই আমাদের কলেজে পড়ার সময় ছিল চিরকুট। পরের ক্লাস করব কি না বা কোন সিনেমার টিকিট কাটব এই সব কথাবার্তা হত ক্লাসে বসেই, চিরকুট আদান প্রদানে।” বললেন সিধু। বন্ধুরা যদি দূরেও চলে যায় তাতেও বন্ধুত্বের শিকল ছেঁড়ে না। এ প্রসঙ্গে বলি অয়নের কথা। যাদবপুর থেকে ইকনমিক্সে স্নাতক, মাস্টার্স করেছে। এখন লস এঞ্জেলেসে চাকরি করছেন। বছরে এক বার কলকাতায় আসবেনই। আর এলে সোজা পুরনো ঠেকে। ফেসবুকের মাধ্যমে ওঁরা পাঁচ বন্ধু সময় ঠিক করে নেন। তার পর ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা। ওঁদের গ্রুপের পছন্দের গান, ‘বন্ধু তোমায় এ গান শোনাবো বিকেল বেলায়...।’

প্রেমের গাড়ি সিগন্যাল মানে না
কলেজ জীবনে একাধিক প্রেম, কলেজ জীবনে একমাত্র প্রেম, চির সঙ্গী। সূচনা বন্ধুত্ব দিয়ে। তবে কিছু দিনের মধ্যেই বন্ধুদের মধ্যে কোনও এক জন খুব বেশি কাছের হয়ে ওঠে। তার সঙ্গে আলাদা করে সময় কাটাতে ইচ্ছে করে। কলেজ শেষে ঘণ্টার পর ঘণ্টা টেক্সট করা, একই ডেস্কে পাশাপাশি বসা, না বলেও মনের কথা বুঝে ফেলা। প্রেমের শুরুর অভিজ্ঞতা অনেকটা এ রকমই হয়। সরাসরি প্রেম নিবেদন আজকাল কমই হয়। বন্ধুত্বের চেয়ে একটু বেশি এই রকম স্টেটাসে অনেক দিন বিচরণ করে কলেজপড়ুয়ারা। আবার সেই প্রেম ফুরিয়েও যায় কখনও। তখন আবার তারা শুধুই বন্ধু, সঙ্গে একটু মন খারাপ হয়তো থাকে। তবে বেশি মন খারাপের সুযোগ নেই। কলেজ জীবনে প্রেমের রানরেট শিখর ধবনের চেয়েও ভাল, তাই আবার চোখে চোখে কথা......। অভিনেত্রী সোহিনী কলেজ জীবনে অনেক বার প্রেমে পড়েছেন। “প্রেমে থাকতে আমার খুব ভাল লাগে, এমন সুন্দর অনুভূতি আর আছে নাকি? আমাদের শহরে তো প্রেমের জায়গার খুব অভাব, তাই যাদবপুর ক্যাম্পাস ছিল প্রেমের জন্য আইডিয়াল জায়গা।” সিধুর পছন্দের সেই নারী, যাকে অনেকটা কিরণ জুনেজার মতো দেখতে ছিল, খুব সুন্দর গাইতেন তিনি। “ফাঁকা ক্লাসরুমে আমরা কয়েক জন বসে আড্ডা দিতাম। চেষ্টা করতাম গান গেয়ে মনের কথা ওর কাছে পৌঁছে দিতে।” বলছেন সিধু।

কেয়ার অব স্যার/ম্যাডাম
কলেজ জীবনের বড় প্রাপ্তি শিক্ষক-শিক্ষিকারা। অনেক দুষ্টুমি, ক্লাস ফাঁকি, ঠিক করে পড়াশুনা না করা, বিদ্রোহী হয়ে ওঠা, প্রতিবাদ করা কথায় কথায়, অকারণ প্রশ্ন করা এমন অনেক কিছু অনায়াস দক্ষতায় যাঁরা সামলান কখনও রেগে, কখনও ভালবেসে তিনি হলেন শিক্ষক। সচিন তৈরি করতে যেমন একজন আচরেকার দিন রাত খেটেছেন শিষ্যের সঙ্গে, ঠিক তেমনই কলেজের অধ্যাপকরাও জানেন কী মূল্যবান প্রতিটা দিন। আপ্রাণ চেষ্টা করেন তাঁরা তাঁদের দিক থেকে সব রকম সহযোগিতা করতে। ‘নান্দীকার’ সোহিনীকে শিখিয়েছে কী ভাবে সবার সঙ্গে মিশতে হয়। তিনি বছরের পর বছর ধরে দেখেছেন, বাবা রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, ২৪-২৫ বছর বয়সীদের সঙ্গে কী ভাবে মেশেন। একসঙ্গে বসে ওদের সঙ্গে খান, গল্প করেন। “আমি নিজে পড়ানোর সময় বা শেখানোর সময়, বন্ধুর মতো মিশি ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে। আমার মনে হয় শেখানোর মনোভাব নিয়ে, আসলে কিছু শেখানো যায় না। নিজের কথা, অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে হবে ওদের সঙ্গে। শিক্ষক-শিক্ষিকারা সব সময় চান সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে উঠুক শিক্ষার্থীদের,” বললেন সোহিনী।
দেবলীনা নেট পরীক্ষায় বসার জন্য তৈরি হচ্ছেন। সিইউ-তে পড়াকালীন খুব বিভ্রান্ত ছিলেন, বুঝতে পারছিলেন না এর পর কী করবেন। “আমার এই অবস্থা বুঝতে পেরে পরামর্শ পেলাম আমাদের এইচওডি-র কাছে,” বললেন দেবলীনা। তারপর কী কী করতে হবে সবই তিনি জেনেছিলেন সেই শিক্ষকের কাছেই। স্নেহ, ভালবাসার এই বন্ধন যত দীর্ঘস্থায়ী হয় ততই ভাল,” বললেন দেবলীনা।
যাঁরা সদ্য পা দিচ্ছেন কলেজ লাইফে তাদের জন্য রইল একলা আকাশ। ছড়িয়ে পড়ুন রামধনুর রঙে।

মস্তির পাঠশালা
• ক্লাস শেষে সবাই বসে নতুন গান বাঁধা। ব্যান্ড তৈরি নিয়েও ভাবা যেতে পারে

• কলেজ ফেস্টে চমক দেওয়া

• কোন রেস্তোরাঁয় কোন ডিল চলছে, তাই দেখে খেতে যাওয়া

• সকালের টিকিটে মাল্টিপ্লেক্সে সিনেমা দেখা ফুটপাথে শপিং করা কিংবা ডিজাইনার হয়ে যাওয়া। কলেজের লোগো বা ডিপার্টমেন্টের নাম লেখা টি শার্ট তৈরি করানো যেতে পারে

• নিজেরা প্ল্যান করে মাঝে মাঝেই সপ্তাহান্তে বেড়াতে যাওয়া। ফিল্ড ওয়ার্কের নাম করে বাড়িতে বলে বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যান করতে পারলে মাঝে মাঝেই কাছে-পিঠে বেড়িয়ে আসা যাবে

• সময় পেলেই বন্ধু বা বান্ধবীদের সঙ্গে ফ্লার্ট করা

• সব রকম আনন্দের ফাঁকে পড়াশোনা কতটা এগোচ্ছে খবর রাখা। ক্লাসে না যেতে পারলেও নোটস জোগাড় করে রাখা

• গ্রুপ স্টাডির নাম করে বন্ধুবান্ধবের মেসে পার্টি করা

• পার্টটাইম কাজ করে হাতখরচ চালানো



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.