নাদাল ওর কেরিয়ারের ৩৫ নম্বর গ্র্যান্ড স্লামে প্রথম বার প্রথম রাউন্ডে হারল। গত মাসেই ফরাসি ওপেনে ও জীবনে প্রথম কোনও গ্র্যান্ড স্ল্যামের উদ্বোধনী সেট হেরেছিল। সোমবার অল ইংল্যান্ড ক্লাবের এক নম্বর কোর্টে বসে নাদালের মহা অপ্রত্যাশিত হার দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, রোলাঁ গারোতেই কি সে দিন আজকের উইম্বলডনের বীজ পোঁতা হয়েছিল? ফেডেরার, মারে, শারাপোভা, আজারেঙ্কাদের জয়ের মধ্যেই বারবার প্রশ্নটা আজ ঘুরপাক খেল।
সে দিন পরের তিন সেট জিতেছিল ওর প্রিয়তম সারফেসে। আজ ৬-৭ (৪-৭), ৬-৭ (৮-১০), ৪-৬ হেরে ছিটকে পড়ল ওর সবচেয়ে অপছন্দের সারফেসে। স্টিভ দারসিস ছেলেটাকে এই প্রথম দেখলাম। কিন্তু মজার ব্যাপার, লন্ডনে পা দেওয়া ইস্তক ছেলেটাকে নিয়ে ব্রিটিশ মিডিয়ায় লেখালেখি দেখছি। তবে সেটা সম্পূর্ণ অন্য কারণে। হুজুগে ব্রিটিশ ট্যাবলয়েডগুলো দারসিসের সঙ্গে প্রিন্স উইলিয়ামের চেহারার মিল খুঁজে পেয়েছে! আমি তো বরং দারসিসের চেহারার সঙ্গে ইভান লেন্ডলের খানিকটা মিল পেলাম। খেলাটায় অবশ্য মিল নেই। সার্ভিস খুব জোরে করল ঠিকই। ১৩টা ‘এস’ মারল। ম্যাচ উইনিং শটটাও ‘এস।’ কিন্তু নেট-প্লে নাদালের মতো বেসলাইন প্লেয়ারেরও এ দিন যেখানে ৭৮ পার্সেন্টেজ, সেখানে দারসিসের ৭০। কিন্তু উইনার মারায় বিশ্বের পাঁচ নম্বরের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে র্যাঙ্কিংয়ে ১৩৫ নম্বর। ৫৩-৩২। |
উইম্বলডনে ডুবল স্প্যানিশ আর্মাডা। ১৩০ ধাপ পিছনে থাকা স্টিভ দারসিসের কাছে
বিধ্বস্ত রাফায়েল নাদাল। জীবনে এই প্রথম বার ছিটকে গেলেন প্রথম রাউন্ডেই। ছবি: রয়টার্স |
এর কারণ কোর্টে নাদালের অভাবিত মন্থরতার সুযোগ সুদে-আসলে নিয়েছে ওর অখ্যাত প্রতিদ্বন্দ্বী। ৫-৪ এগিয়ে দ্বিতীয় সেট জেতার জন্য সার্ভিস গেম হারাচ্ছে নাদাল, কোনও এক দারসিসের কাছে এটা ‘ফ্যান্টাসি টেনিসে’ও কেউ বোধহয় ভাববে না! কিন্তু আজ সেটাই বাস্তবে ঘটল। ওই সময় নাদাল ১-১ করে ফেললে ম্যাচটার ফলও হয়তো অন্য রকম হত।
এই ম্যাচে নাদালকে অবিশ্বাস্য স্লো দেখানোর কারণ আমার মতে, ওর বাঁ হাঁটুর পুরনো চোটটা নিশ্চয়ই আবার মাথাচাড়া দিয়েছে। রোলাঁ গারোয় রেকর্ড সংখ্যক অষ্টম বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর নাদাল সটান বাড়ি চলে গিয়েছিল। এ বার প্রস্তুতি টুর্নামেন্ট না খেলে উইম্বলডনে নেমেছিল তো বটেই। গত বছর এখানে দ্বিতীয় রাউন্ডে লুকাস রসোলের কাছে হারার পর আজই প্রথম ঘাসের কোর্টে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলল। মায়োরকায় কাকা টনি নাদালের কাছে উইম্বলডনের জন্য কী প্রস্তুতি নিয়েছিল স্বভাবতই আমার পক্ষে জানা সম্ভব নয়। কিন্তু নিজে একটুআধটু টেনিস খেলার দৌলতে বুঝতে পারছি, নাদালের এই অভুতপূর্ব হারের প্রথম কারণ যদি ওর হাঁটু পুরো ফিট না থাকা হয়। তা হলে, দ্বিতীয় কারণ ঘাসের কোর্টে খেলার চরম অভাব। ম্যাচ প্র্যাক্টিস আর চোট হারিয়ে দিল। |
কে দারসিস |
|
• পুরো নাম স্টিভ দারসিস
• দেশ বেলজিয়াম
• বসবাস লিজ
• বর্তমান র্যাঙ্কিং ১৩৫
• বয়স ২৯ বছর
• উচ্চতা ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি
• ওজন ৭৩ কেজি |
• খেলার ধরন ডান-হাতি, ‘সিঙ্গল হ্যান্ডেড ব্যাকহ্যান্ড’
• গ্র্যান্ড স্ল্যাম কেরিয়ার ১৯টা খেলে ১২টায়
• প্রথম রাউন্ডে হার উইম্বলডন কেরিয়ার
চার বার খেলে দু’টো জয়
• নাদালকে খেলার অভিজ্ঞতা ২০১০
দোহা ওপেনে
০-৬,
২-৬ পিছিয়ে থেকে
ম্যাচ ছেড়ে দিয়েছিলেন |
|
সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত থেকে অবশ্য দেখলাম, নাদাল চোটের অজুহাত একবারও দিল না। এই হল চ্যাম্পিয়নদের নিজের খারাপ দিনেও মস্তানি। সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন করা হল, ওর হাঁটুর অবস্থা নিয়ে। আর প্রতিবার নাদাল ঠান্ডা গলায় জবাব দিল, “আজ আমার হাঁটু নিয়ে চর্চার দিন নয়। বরং স্টিভের খোঁজ নিন। কী চমৎকার খেলল।” স্টিভ দারসিস কিন্তু আমার আশঙ্কার কথাটাই বলল সাংবাদিক সম্মেলনে। “নাদাল আজ ওর নিজের খেলা খেলতে পারেনি। জানি না, ওর বহু দিনের চোটের জন্য কি না।” আমি এর সঙ্গে আর একটা কথাই যোগ করব।
নাদাল যতই সাত মাসের চোট সারিয়ে ফিরে এসে চার মাসের মধ্যে ন’টা টুর্নামেন্টের আটটার ফাইনাল খেলে সাতটা খেতাব জিতুক। এই হাঁটু ওকে মাঝেমধ্যেই ভোগাবে। আর যে দিন ভোগাবে, সে দিন এ রকম দশাই হবে ওর।
|
“... দুম করে গ্রাস কোর্টে নেমে ঘাসের বাউন্সের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া সহজ নয়। গত বছর রসোলের কাছে এখানেই হারার এক বছর পর প্রথম কোনও গ্রাস কোর্ট ম্যাচ খেললাম। আমার হাঁটুর অবস্থা নিয়ে এখন কথা বলার সময় নয়। এর পর আমি শুধু স্টিভ-কে অভিনন্দন জানাতেই পারি।” —রাফায়েল নাদাল |
“ঘাসে আমি বরাবর ভাল খেলি। হয়তো এখানে কখনও সে রকম ভাল খেলিনি এত দিন। কিন্তু তার কারণ উইম্বলডনে সর্বদা কঠিন ড্র পাই। সে জন্যই আজ আরও বেশি খুশি আমি। কঠিন প্রতিপক্ষকে হারিয়েই পরের রাউন্ডে উঠলাম উইম্বলডনে।” —স্টিভ দারসিস |
|