৮ জুন, ২০১৩— ফরাসি ওপেন: সেরেনা বনাম মারিয়া ৬-৪, ৬-৪।
২৩ জুন, ২০১৩—উইম্বলডন: মারিয়া বনাম সেরেনা ৬-০, ৬-০!
মাত্র পনেরো দিনের তফাতে ফরাসি ওপেন ফাইনাল হারের প্রতিশোধ নিলেন মারিয়া শারাপোভা। সেরেনা উইলিয়ামসকে উড়িয়ে দিয়ে।
কোর্টে নয়, কোর্টের বাইরে!
ক্রিম, স্ট্রবেরির গ্র্যান্ড স্ল্যামের রোমান্টিসিজম বড় ধাক্কা খেয়েছে এ বার ঘাসের কোর্টে প্রথম স্ট্রোক পড়ার আগেই! মেয়েদের ট্যুরের সর্বকালীন দুই আবেদনময়ী টেনিস তারকার মধ্যে ঝগড়া আর চাপানউতোরে! ভয়ঙ্কর ‘এস’-এ যা শুরু করেছিলেন সেরেনা। কিন্তু ম্যাচ পয়েন্টে বিপক্ষের দুর্বল ফোরহ্যান্ড নেটে জড়ানো দেখে শারাপোভাই হয়তো অবাক!
|
ধর্ষণের মতো জঘন্য সামাজিক অপরাধ নিয়ে নিজের বিতর্কিত মন্তব্য এবং শারাপোভার প্রেমের জীবন নিয়ে আলটপকা কথাবার্তা বলে ফেলা— দুই কাণ্ডের জন্যই শেষমেশ নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন সেরেনা। অনেকটা দারুণ শুরু করেও দু’টো সেটই কোনও গেম না পেয়ে হারার মতোই অবস্থা বিশ্বের এক নম্বর মেয়ের উইম্বলডন শুরুর ঠিক মুখে! যিনি আবার আজ বলেছেন, “আমাকে হয়তো মানসিক চাপে ফেলা হচ্ছে!” যার পাল্টা শারাপোভা দিয়েছেন টুইটে, “একই খেলায় আছি বলে সেই খেলাটার সবাইকে বন্ধু ভাবতে হবে এর কোনও মানে নেই।”
সব দেখেশুনে টেনিস বিশেষজ্ঞদের এমনও মনে হচ্ছে, এই মুহূর্তে কোর্টে অপ্রতিরোধ্য সেরেনার কোর্টের বাইরের এই মানসিক ধাক্কা তাঁর উইম্বলডন পারফরম্যান্সের উপর না প্রভাব ফেলে! বিশেষ করে সেরেনার মতো ডাকাবুকো মেয়ে যখন মিনমিনে গলায় বলছেন, “মারিয়ার কাছে আমি ক্ষমা চেয়ে নিয়েছি। নিজের পরপর দু’টো বেফাঁস মন্তব্যের জের থেকে একটা বড় শিক্ষা পেলাম। সেটা হল, এ বার থেকে কোনও ব্যাপারে কিছু বললে সে ব্যাপারে আরও ভাল ভাবে সব জেনে তবেই মন্তব্য করব।”
কী বেঁফাস মন্তব্য ছিল সেরেনার?
দিন কয়েক আগে মার্কিন কৃষ্ণাঙ্গী টেনিস সুপারস্টার সম্প্রতি নিজেরই দেশের (ওহিও শহরে) এক ধর্ষিতা ষোড়শী নাবালিকা সম্পর্কে বলে বসেছিলেন, “মেয়েটা তো শুনছি নিজেও মাদকাসক্ত ছিল। ঘটনার সময়েও মদ্যপ অবস্থায় ছিল। মেয়েটার নিজেরও এই কেলেঙ্কারিতে কোনও প্ররোচনা আছে কি না কে জানে?” যা শুনে ‘দুঃখিত’ মারিয়ার মন্তব্য ছিল, “সেরেনা যত দুর্দান্ত ভাল টেনিস প্লেয়ার, ততটা ভাল মানুষ হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে পারেনি ওর এ রকম মন্তব্যে। ও নিজে একজন মেয়ে হয়ে একজন ধর্ষিতা সম্পর্কে এ জাতীয় কথা বলল কী ভাবে?”
যার পাল্টা স্ট্রোক সেরেনার থেকে তখনই ছিটকে না আসুক। তার পর দু’দিনও কেটেছে কি না সন্দেহ, সেরেনা অবশ্য এক বিখ্যাত মার্কিন ম্যাগাজিনে দিদি ভেনাসের সঙ্গে কথোপকথনে শারাপোভার নাম উল্লেখ না করে ‘বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম পাঁচে থাকা এক মেয়ে টেনিস প্লেয়ারের সঙ্গে র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম পঁচিশের ভেতরেও না থাকা এক ছেলে টেনিস প্লেয়ারের টাটকা প্রেম’ নিয়ে বারবার বলেন। যে ইন্টারভিউ পড়লে যে কেউ বুঝতে পারবে, শারাপোভা আর তাঁর বুলগেরীয় প্রেমিক গ্রিগর দিমিত্রভের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথাই বলেছেন সেরেনা। |
যাঁদের নিয়ে ঝামেলা |
|
|
শারাপোভার ঘনিষ্ঠ দিমিত্রভ। সেরেনার পাশে মৌরাতগ্লৌ। |
|
ওয়াকিবহাল মহল আবার সেরেনার এই মন্তব্যের ভেতর এক ত্রিকোণ প্রেমের গন্ধও পাচ্ছে। যে ত্রিকোণ প্রেমের এক দিকে সেরেনা-শারাপোভা। অন্য দিকে দিমিত্রভ। টেনিসমহলে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, দিমিত্রভ একটা সময় সেরেনার বর্তমান ফরাসি কোচ-কাম-প্রেমিক প্যাট্রিক মৌরাতগ্লৌ-এর কাছে ট্রেনিং করতেন। সেই সময় নাকি সেরেনার সঙ্গেও দিমিত্রভের একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। ফলে এখন দিমিত্রভ-শারাপোভাকে যুগলে দেখে সেরেনা প্রকাশ্যে না হলেও ভেতরে ভেতরে চটছেন। তারই বহিঃপ্রকাশ সেরেনার মন্তব্যে। “খারাপ লোকের সঙ্গে প্রেমটেম করার কথা আমি ভাবতেই পারি না।” যা নিয়ে ওয়াকিবহাল মহলের ব্যাখ্যা, ওটা শারাপোভার বয়ফ্রেন্ডকে উদ্দেশ্য করেই বলা। যাঁর প্রতি এক সময় সেরেনারও নাকি দুর্বলতা ছিল।
কিন্তু প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ শারাপোভা যে-ই পাল্টা সেরেনাকে উদ্দেশ্য করে মন্তব্য করেন যে, “কারও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কিছু বলার আগে সেই মনুষ্যটির উচিত নিজের ব্যক্তিগত গোপন জীবনের দিকেও তাকানো।” অমনি সেরেনা সুড়সুড় করে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন। কারণ, সবাই জানে সেরেনার প্রেমিক তথা ব্যক্তিগত কোচ মৌরাতগ্লৌ বিবাহিত। এক সন্তানের পিতা। এবং বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা চলছে। আচমকা বেসলাইনে পিছিয়ে পড়া সেরেনা বলতে বাধ্য হয়েছেন, “উইম্বলডনের প্লেয়ার্স পার্টিতে মারিয়ার দিকে আমি নিজে এগিয়ে গিয়ে বলেছি যা হয়েছে, হয়েছে। কিছু মনে কোরো না। আশা করি, ও আমাকে বুঝবে। ক্ষমা করেও দেবে। মারিয়ার মতো প্লেয়ারকে আমি প্রচণ্ড শ্রদ্ধা করি।”
টেনিস মহল এখন অপেক্ষায়, উইম্বলডনের প্লেয়ার্স পার্টিতে ‘আত্মসমর্পণ’ করা সেরেনা উইম্বলডনের কোর্টে শারাপোভাকে পেলে ঠিক কতটা ‘শ্রদ্ধা’ দেখাবেন! |