পুরুষ সিঙ্গলস ‘ড্র’ এ বার এমন কিছু ঠক্করে-ঠক্করে হয়েছে, যাতে ২০১৩ উইম্বলডন টুর্নামেন্টের ইতিহাসে অন্যতম উত্তেজক হয়ে উঠতে পারে।
নীচের অর্ধের কোয়ার্টার ফাইনালে একটা সম্ভাব্য লড়াই অ্যান্ডি মারে বনাম জো সঙ্গা। আর একটা কোয়ার্টার ফাইনালে মহা জমজমাট লড়াই সম্ভবত হচ্ছেই রজার ফেডেরার আর রাফায়েল নাদালে।
চোটটোটের কথা না তুলেও বলা যায়, নীচের অর্ধের বাছাই তালিকাটা গড়বড়ে হয়েছে। উপরের অর্ধের ড্র-টা আবার এমন সহজ-সরল যে, নোভাক জকোভিচের সামনে সেমিফাইনালে ওঠার রাস্তা একেবারে সাফসুতরো। এই অর্ধের অন্য সেমিফাইনালিস্টের জায়গাটা আবার টুর্নামেন্টের কোনও ডার্ক হর্স-এর জন্য থাকবে। তবে সব মিলিয়ে পুরুষ সিঙ্গলসে দুর্দান্ত লড়াইয়ের সম্ভাবনা। |
তৈরি হচ্ছেন বেকারের বিচারে
‘চার নম্বর’ফেভারিট নাদাল। ছবি: রয়টার্স |
টুর্নামেন্টের শুরুতেই তো চার-চারজন পরিষ্কার ফেভারিটকে দেখতে পাচ্ছি জকোভিচ, মারে, ফেডেরার এবং নাদাল। নামগুলো লিখলাম ফেভারিট হওয়ার অর্ডার অনুসারে। তবে আলোচনা শুরু করছি জনতার ফেভারিট মারে-কে দিয়ে।
মারে এখন ওর কাঁধ থেকে প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার বাঁদরটাকে নামিয়ে ফেলেছে। যেটা গতবারের রানার আপকে উইম্বলডনে এই প্রথম যথেচ্ছ মানসিক স্বাধীনতা নিয়ে খেলতে দেবে। আর অনেক কম চাপে রাখবে। গতবারের তুলনায় মারে আরও শক্তিশালী, কঠিন আর ফোকাসড এ বার। লন্ডন অলিম্পিক সোনাটা উইম্বলডন থেকেই জেতাটাও ওকে মানসিক দিক দিয়ে সাহায্য করবে। গত বছরই মারে উইম্বলডন জিততে তৈরি ছিল। এবং সেটা ফেডেরারকে ফাইনালে সর্বস্ব দিয়ে আটকাতে হয়। এ বছর আমি মনে করি, মারের যথেষ্ট প্রতিভার সঙ্গে যথোপযুক্ত টেম্পারামেন্ট যোগ হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, যে চোটের কারণে ও ফরাসি ওপেন খেলেনি, সেই চোট থেকে শুধু পুরোপুরি সেরেই ওঠেনি, খুব ভাল ফিজিক্যাল কন্ডিশনে আছে।
এর পর আসছি জকোভিচের কথায়। ইদানীংকালের উইম্বলডন কী ভাবে জিততে হয় জানে। যেহেতু মাত্র দু’বছর আগেই অল ইংল্যান্ড ক্লাবের সেন্টার কোর্টে ট্রফি হাতে নিয়েছে। তবে যত দূর ওকে চিনি, ওর মনের ভেতর নিশ্চয়ই এখনও রোলাঁ গারো সেমিফাইনালে নাদালের কাছে হারের কষ্ট খোঁচা মেরে চলেছে। আর একটা ব্যাপারও ওর মনে হয়তো ঘুরপাক খাচ্ছে যে, কেরিয়ারের এই মধ্যগগনে থাকতে থাকতে যত বেশি সম্ভব গ্র্যান্ড স্ল্যাম তুলে নিতে পারি! ড্র-এর আশীর্বাদ জকোভিচ কিন্তু এ বার পেয়েছে। এর সঙ্গে ওর ফর্ম, স্ট্যামিনা আর রক্তঝরা প্রতিজ্ঞা মিলিয়েটিলিয়ে জকোভিচকে আমি ফাইনালে দেখছি। |
সঙ্গী সারমেয়। বরিস বেকার অপেক্ষায় উইম্বলডন শুরুর। ছবি: টুইটার |
এ বার আসছি গতবারের চ্যাম্পিয়ন ফেডেরার প্রসঙ্গে। রজারকে নিয়ে এখন প্রতিটা মেজরের শুরুতেই ‘কমন’ প্রশ্ন ওর কি সতেরোর পর আঠারো নম্বর গ্র্যান্ড স্ল্যামটা জেতার ক্ষমতা আর আছে? অগস্টে ফেডেরার ৩২-এ পা দেবে। সার্কিটের তরুণদের সঙ্গে টক্কর নিতে ও নিশ্চয়ই আগের চেয়ে অনেক বেশি পরিশ্রম করে। ফেডেরার স্বাভাবিক অ্যাথলিট। পুরুষ টেনিসে ওর খেলা এখনও চোখের পক্ষে সবচেয়ে আরামদায়ক দৃশ্য। কিন্তু দিন-দিনই ওর পক্ষে সর্বোচ্চ পর্যায়ের ম্যাচ জেতা কঠিন হয়ে উঠছে। সাতবারের উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন নিজেও জানে, এখানকার ঘাসের কোর্টেই ওর আর একটা গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার সবচেয়ে বড় সুযোগ। রাফার কাছে রোলাঁ গারো যা, রজারের কাছে উইম্বলডন তাই। ওদের কাছে প্যারিস বা লন্ডনে আসাটা নিজের ঘরে ফেরার মতোই অনুভূতি।
ফেডেরারকে অবশ্য নাদালের মতোই কঠিন ড্র-এর চ্যালেঞ্জ সামাল দিতে হবে। কোয়ার্টার ফাইনালে নাদাল টপকালে সেমিফাইনালে মারে বা সঙ্গা। সেটাও টপকালে ফাইনালে জকোভিচ। মানে ফ্যাব ফোর-এর বাকি তিন মহারথীকে হারিয়ে তবেই ট্রফিতে হাত।
নাদালেরও সেই দশাই। তবে ঘাসের কোর্টে আমি বরাবরের মতো এ বারও নাদালকে বাকি তিন ফেভারিটের চেয়ে এক ধাপ পিছনে রাখব। গ্রেট চ্যাম্পিয়ন দু-দু’বার উইম্বলডন জিতলেও নিজেই সম্ভবত সবার আগে মেনে নেবে, ঘাস ওর প্রিয় সারফেস নয়। পুরো ফিট থাকা সত্ত্বেও বলেছে, এ বার উইম্বলডনে ও দু’টো হাঁটু পাচ্ছে! আসলে নিজেই বুঝছে, ট্রফিতে হাত রাখার কাজটা ওর কাছেও কী মারাত্মক কঠিন। বরং সঙ্গার দিকে নজর রাখব আমি। ওর খেলা দারুণ পছন্দ করি বলেই নয়, ফ্যাব ফোরের বিরুদ্ধে অনেক ভাল ম্যাচ খেলার জন্য ওকে কেবল ডার্ক হর্স-ই বলছি না। সঙ্গা তার চেয়ে একটু বেশিই কিছু।
একটা দুর্ধর্ষ টেনিস-পক্ষ আমাদের সামনে। যেখানে বি. বেকারের বিরুদ্ধে মারে অভিযান শুরু করছে দেখে আমি আরও উত্তেজিত। বরিস বেকার আবার উইম্বলডনে ফিরে না আসুক, আমার ‘নেমসেক’ তো এ বার আছে!
|