সিআইডি নিয়ে রাজ্যের আর্জি খারিজ
নাসির-হত্যার তদন্ত সিবিআইয়ের হাতেই
সিআইডি-র তদন্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে কলকাতা হাইকোর্ট মামলাটি সিবিআই-কে দেওয়ায় রাজ্য সরকার এক দফা ধাক্কা খেয়েছিল। ধনেখালি কাণ্ডে এ বার সুপ্রিম কোর্টেও ধাক্কা খেল তারা। সিআইডি ধনেখালি থানায় তৃণমূলকর্মী কাজী নাসিরুদ্দিনের মৃত্যুর নিরপেক্ষ তদন্ত করতে না-পারায় ১৩ মে সিবিআই-কে ওই রহস্য উদ্ঘাটনের দায়িত্ব দেয় হাইকোর্ট। রাজ্য সরকার সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে। তাদের আর্জি ছিল, তদন্তের দায়িত্ব সিআইডি-র হাতেই রাখা হোক।
রায়ে খুশি নাসিরুদ্দিনের স্ত্রী মনুজা বিবি।
শীর্ষ আদালতের বিচারপতি এ কে পট্টনায়ক ও রঞ্জন গগৈয়ের ডিভিশন বেঞ্চ সোমবার রাজ্যের সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। সিবিআই-ই তদন্ত করবে। সিবিআই অবশ্য ১৩ মে হাইকোর্টের নির্দেশের পরেই সিআইডি-র কাছ থেকে কাগজপত্র নিয়ে তদন্তে নেমে পড়েছিল। তাদের তদন্তকারীরা ধনেখালিতে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে দিয়েছিলেন। রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে বিশেষ অনুমতির আবেদন করার পরেও তারা তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে বলে সিবিআই সূত্রে জানানো হয়েছে। ওই সূত্রে বলা হয়, এ দিন শীর্ষ আদালতের নির্দেশের পরে তাদের তদন্তে গতি আসবে।
১৮ জানুয়ারি ধনেখালি থানায় পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু হয় নাসিরুদ্দিনের। হাইকোর্টের নির্দেশেই ফেব্রুয়ারি থেকে তার তদন্ত করছিল সিআইডি। কিন্তু সিআইডি-র তদন্ত নিয়ে প্রথম থেকেই অসন্তোষ প্রকাশ করে এসেছে হাইকোর্ট। তবু তারা সিআইডি-কে বারবার সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক অসীমা পাত্র এবং ধনেখালি থানার ওসি ষড়যন্ত্র করে নাসিরকে খুন করেছেন বলে যে-অভিযোগ উঠেছে, তার তদন্তে সিআইডি একেবারেই অগ্রসর হতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছিল ডিভিশন বেঞ্চ।
রাজ্যের আইনজীবী ঋতেশ অগ্রবাল অবশ্য এ দিন সুপ্রিম কোর্টে জানান, ধনেখালি কাণ্ডে সিআইডি যথাযথ ও নিরপেক্ষ তদন্তই করছে। তাই তাদেরই তদন্ত চালিয়ে যেতে দেওয়া হোক। হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলার আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য ও শুভাশিস ভৌমিক বলেন, ওই অস্বাভাবিক মৃত্যুতে রাজ্যের শাসক দলের স্থানীয় বিধায়কের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। তাই নিরপেক্ষ সংস্থাকে দিয়ে তদন্ত করানো দরকার। হাইকোর্ট সেই ব্যবস্থা করেছে। রাজ্যের আইন ও বিচারমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, “রাজ্যের আবেদন সর্বোচ্চ আদালত খারিজ করে যে-রায় দিয়েছে, তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না। আদালত যা বলেছে, সেটাই হবে। সিবিআই-ই ধনেখালি কাণ্ডের তদন্ত করবে।” আর বিধায়ক অসীমাদেবী বলেন, “বিষয়টি আদালতের বিচার্য। বিচারাধীন কোনও মামলা নিয়ে মন্তব্য করব না।”
সুপ্রিম কোর্ট এ দিন রাজ্যের আবেদন খারিজ করে দেওয়ায় নাসিরুদ্দিনের স্ত্রী মনুজা বিবি খুশি। তিনি বলেন, “আমার স্বামীর খুনের জন্য দায়ী ধনেখালির বিধায়ক অসীমা পাত্র। তাঁকে আড়াল করার জন্যই রাজ্য সরকার শীর্ষ আদালতে গিয়েছিল। কিন্তু সত্য কখনও চাপা থাকে না। তা প্রকাশ পাবেই। সিবিআই এ বার ঠিকঠাক তদন্ত করে ধনেখালি থানার ওসি এবং বিধায়কের উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করুক।” রায়ে খুশি মনুজার বাবা শেখ আব্দুল আলিও। তিনি বলেন, “যা গিয়েছে, তা ফেরত পাব না। কিন্তু এই নৃশংস হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা উপযুক্ত শাস্তি পাক। সর্বোচ্চ আদালতের উপরে আমাদের আস্থা আছে।”
কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান গোড়া থেকেই নিহতের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এ দিন তিনি বলেন, “নাসির-হত্যায় মুখ্যমন্ত্রী প্রকৃত হত্যাকারীকে আড়াল করার চেষ্টা করেছেন। সে-জন্য তাঁর দুঃখ প্রকাশ করা উচিত। এত কাণ্ডের পরেও অভিযুক্ত বিধায়ককে পুরস্কৃত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁকে পরিষদীয় সচিব করে মন্ত্রীর সমমর্যাদা দিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের এ দিনের রায়ের পরে পরিষদীয় সচিবের পদ থেকে ওই বিধায়কের ইস্তফা দেওয়া উচিত।”
উচ্চপদস্থ পুলিশকর্তা এবং স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের যোগাযোগ যেখানে স্পষ্ট, সেখানে সিআইডি তাদের তদন্তে সত্য প্রকাশ করতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছিল হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। তাই তারা সিবিআই-কে এই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল। এ দিন সিবিআই সূত্রে জানানো হয়, তারা সিআইডি-র হাত থেকে কেস ডায়েরি নিয়ে তদন্ত শুরু করে দিয়েছে। ধনেখালির বিধায়ক অসীমাদেবী এবং ধনেখালি থানার ওসি-র মধ্যে ১৮ জানুয়ারি টেলিফোনে কী কথা হয়েছিল, তা জানার চেষ্টা করছে তারা। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশ ষড়যন্ত্র করে নাসিরুদ্দিনের মৃত্যু ঘটিয়েছেন কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.