দিনহাটায় তৃণমূল কর্মী খুনের মামলায় দলের কোচবিহারের জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ-সহ অভিযুক্ত বাম নেতা কর্মীদের আগাম জামিনের আর্জি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হচ্ছে ফরওয়ার্ড ব্লক। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য তথা বিধায়ক অক্ষয় ঠাকুর গোটা বিষয়টির তদারকি করতে কলকাতা গিয়েছেন। ইতিমধ্যে একাধিক আইনজীবীর সঙ্গে ফরওয়ার্ড ব্লক নেতারা পরামর্শ করছেন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী সোমবারের মধ্যে আগাম জামিনের আবেদন জানানো হতে পারে। দলের রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য অক্ষয় ঠাকুর বলেন, “উদয়নবাবু-সহ বাম কর্মী সমর্থকদের বিরুদ্ধে সাজানো অভিযোগ খতিয়ে না দেখেই পুলিশ খুনের মামলা রুজু করেছে। আইনের পথেই আমরা মোকাবিলা করব। দিনহাটার বিধায়ক তথা ফরওয়ার্ড ব্লক জেলা সম্পাদকের পরিবারিক সূত্রেও দাবি করা হয়েছে, উদয়নবাবু রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার। ঘটনার দিন সকাল বেলা উনি দিনহাটা থেকে কোচবিহারে গিয়ে বামফ্রন্টের বৈঠকে যোগ দেন। দুপুরে সেখানে সাংবাদিক সম্মেলন করে বিকালে তিনি কলকাতা রওনা হন। তাঁর আগাম টিকিট কাটা ছিল। কলকাতা থেকে স্ত্রীকে নিয়ে কয়েকদিনের মধ্যে তাঁর দিনহাটা ফেরার পরিকল্পনা ছিল। এর মধ্যেই ওই ঘটনায় উদয়নবাবুর নাম জড়িয়ে মামলা করা হয়।
পুলিশ সূত্রেই জানা গিয়েছে, গত শনিবার দিনহাটার খট্টিমারি এলাকায় তৃণমূলের বাইক বাহিনীর সঙ্গে বাম কর্মী সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনায় রতন বর্মন নামে এক তৃণমূল সমর্থকের মৃত্যু হয়। তৃণমূলের দিনহাটা থানায় উদয়ন গুহ-সহ ৬০ জনের নামে অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযুক্ত ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা তথা জেলা পরিষদের বিদায়ী সহকারি সভাধিপতি মণীন্দ্র বর্মন-সহ ১৩ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করে। দলের দাবি, ধৃতদের মধ্যে ৯ জন ফরওয়ার্ড ব্লক ও ৪ জন সিপিএম নেতা কর্মী আছেন। অভিযুক্ত ৬০ জনের তালিকার ৫০ জন ফরওয়ার্ড ব্লকের ও বাকিরা সিপিএমের সঙ্গে যুক্ত। তাঁদের মধ্যে উদয়নবাবু-সহ যাঁদের পুলিশ এখনও গ্রেফতার করেনি। তাঁদের আগাম জামিনের আর্জি জানানো হবে। তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্য ফরওয়ার্ড ব্লক জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহের বিরুদ্ধে পালিয়ে বেড়ানোর অভিযোগ তুলেছেন। দলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “পুলিশ কার বাড়িতে তদন্তে যাবে, সেটা তাঁদের ব্যাপার। এটুকু বলতে পারি আমাদের ওই কর্মী খুনের ঘটনায় উদয়ন গুহ পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে শুনেছি। উনি নিরপরাধ হলে কিংবা সৎ সাহস থাকলে প্রকাশ্যে আসতেন। দিনহাটার বিভিন্ন কর্মসূচিতেও তাঁকে দেখা যেত।” খুনের অভিযোগ রুজু হলে অভিযুক্তদের ভূমিকা প্রাথমিকভাবে খতিয়ে দেখা হয়। তদন্তকারী অফিসার তথ্য সংগ্রহ করার পরেই গ্রেফতার করেন। জেলা পুলিশ সুপার অনুপ জয়সওয়াল বলেন, “তদন্তকারী অফিসার সবকিছু খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করছেন।” মোবাইল টেলিফোন বন্ধ থাকায় উদয়নবাবুর প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। ফরওয়ার্ড ব্লকের দিনহাটা জোনাল সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য বিশু ধর বলেন, “সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত না করে রবীন্দ্রনাথবাবুরা নিজেদের কাজ করুন। আমাদের দলের ব্যাপারে ওঁদের ভাবতে হবে না। কয়েকদিন পরেই নির্বাচন। সুষ্ঠু ভাবে ভোট হলে উদয়নবাবুর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জবাব দিনহাটার মানুষ ব্যালটের মাধ্যমে বুঝিয়ে দেবেন।”
|