কেন্দ্র ঘুঘুমারি বারুইপাড়া। প্রার্থী ৩ জন। তৃণমূলের প্রতীকে দাঁড়িয়েছেন কল্পনা দে। তৃণমূলের প্রতীক না পেয়ে নির্দল হয়ে লাঙল চিহ্নে দাঁড়িয়েছেন আশা সরকার (দাস)। সিপিএমের প্রতীক নিয়ে দাঁড়িয়েছেন মায়া দে।
শুধু বারুইপাড়া নয়, কোচবিহার সদর, মাথাভাঙা, মেখলিগঞ্জ, দিনহাটা তুফানগঞ্জে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে অন্তত ১০০ টি আসনে তৃণমূলের সঙ্গে লড়াই হচ্ছে তৃণমূলের। কেউ দলের টিকিট পেয়ে জোড়া ফুল চিহ্ন নিয়ে লড়াই করছেন। কেউ দলের টিকিট না পেয়ে নির্দল হয়ে দাঁড়িয়ে লাঙল বা অন্য কোনও চিহ্ন নিয়ে লড়াই করছেন। তা নিয়ে এলাকায় এলাকায় তৃণমূল কর্মীদের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। বিপাকে পড়েছেন কোচবিহারে তৃণমূল নেতৃত্ব। ইতিমধ্যে নির্দল প্রার্থীদের ভোট ময়দান থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য আবেদন করেছেন দলীয় নেতৃত্ব।
তৃণমূল জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “যারা দলের কর্মী সমর্থক হয়েও নির্দল হয়ে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন কাজে সামিল হতে লিফলেটে বিলি করে ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর আবেদন করা হয়েছে। আশা করছি, আবেদনে সকলেই সাড়া দেবেন।” তৃণমূল নেতৃত্ব জানান, মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনের আগেই দলের যে সমস্ত কর্মী নির্দল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁদের চিঠি পাঠানো হয়। সেখানেই মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়। বেশির ভাগ মনোনয়ন তুলে নেন বলে তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি। প্রশাসন সূত্রের খবর গ্রাম পঞ্চায়েতে ১৯৬৬ আসনের জন্য তৃণমূলের পক্ষ থেকে ২৫৪৬টি মনোনয়ন জমা পড়ে। ৭৪৯টি নির্দল প্রার্থীর মনোনয়ন জমা পড়ে। পঞ্চায়েত সমিতির ৩৬৬টি আসনে তৃণমূলের ৫৭৬টি মনোনয়ন জমা পড়ে। ১৭০ জন নির্দল প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেন। জেলা পরিষদের ৩৩টি আসনের জন্য তৃণমূলের পক্ষে ৫০টি মনোনয়ন জমা দেওয়া হয়। ৫৯ নির্দল প্রার্থীও জেলা পরিষদে মনোনয়ন জমা দেন। ১৭ জুন মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে বড় অংশ প্রার্থী পদ প্রত্যাহার করেছে। তা-ও একশোর বেশি আসনে তৃণমূলে প্রতীক চেয়েও না পাওয়া নির্দল প্রার্থী রয়েছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলা পরিষদের কোচবিহার উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের একটি আসনে তৃণমূলের এক কর্মী নির্দল প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। ওই আসনে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন শ্যামলকান্তি ঘোষ। জেলা পরিষদের দিনহাটার শালমারা আসনে তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে দলের এক কর্মী নির্দল হয়ে দাঁড়িয়েছেন। ওই আসনে দলের টিকিট পেয়েছেন তরণী বর্মন।
কোচবিহার ১ ব্লকের ঘুঘুমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের এলাকার একটি পঞ্চায়েত সমিতির আসনে তৃণমূল কর্মী ভরত বর্মন নির্দল প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়েছেন। ওই আসনে তৃণমূলের টিকিট পেয়েছেন কোচবিহার ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী সভাপতি সুধীর কার্জি। সিতাই, মাথাভাঙা, মেখলিগঞ্জ, দিনহাটা ১ ও ২ ব্লক, কোচবিহার ২ ব্লক, তুফানগঞ্জ এলাকার বেশ কয়েকটি আসনে তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে একাধিক ব্যক্তি নির্দল হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তাদের হয়ে তৃণমূলেরই একাংশ কর্মী প্রচারে নেমেছেন বলে দলীয় সূত্রের খবর। বারুইপাড়া কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী কল্পনা দেবীর স্বামী সুনীলবাবু বলেন, “এলাকার অনুন্নয়ন নিয়ে আমাদের মূল প্রচার। দীর্ঘ দিন সিপিএম ক্ষমতায় থাকার পরও এলাকার পানীয় জল, রাস্তার উন্নয়ন হয়নি। সিপিএম প্রার্থী ছাড়াও এক জন নির্দল প্রার্থীও ওই কেন্দ্রে দাঁড়িয়েছেন। তাঁকেও বিরোধী হিসেবেই দেখছি।” নির্দল প্রার্থী আশা দেবী কিছু বলতে না চাইলেও ঘনিষ্ঠ এক কর্মী বলেন, “আশ্বাস দিয়েও দল তাঁকে টিকিট দেননি। তাই এই এলাকার সব তৃণমূল কর্মী তাঁর পাশে আছেন।” |