সালিশি সভার ‘রায়’ মেনে তাঁকে ‘ধর্ষণে অভিযুক্ত’ যুবককেই বিয়ে করেছিলেন এক তরুণী। বিয়ের তিন দিনের মাথায় স্বামীকে নিয়ে বাবার বাড়িতে গিয়েছিলেন তিনি। সেই বাড়ির পিছনের পাট খেত থেকে বৃহস্পতিবার সকালে তাঁর দেহ পাওয়া গিয়েছে। তাঁর পা বেঁধে শ্বাসরোধ করে ছুরি মেরে খুন করা হয়েছে।
উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর থানার মাদ্রাসা মোড় এলাকায় বাড়ি অষ্টাদশী ওই তরুণীর। তাঁর স্বামী আখতার রাজাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আখতারের অবশ্য দাবি, “আমি ওকে ভালবাসতাম। কখনও ধর্ষণ করিনি। খুনও করিনি।”
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, ওই তরুণী এলাকার একটি মাদ্রাসায় আরবি শিখতেন। তাঁদের তিনটি বাড়ির পরেই আখতারদের ঘর। দু’জনেই কৃষক পরিবারের সন্তান। ওই তরুণীর পরিবারের দাবি, ৪ মে ওই তরুণীকে একটি পাট খেতে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেন আখতার। তবে ওই তরুণীর বাড়ির লোকজন তখন পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগ করেননি। এলাকায় মাতব্বরদের নিয়ে সালিশি সভা বসে। সেই সভায় ‘রায়’ হয়, ওই তরুণীকে বিয়ে করতে হবে আখতারকে। এরপরেই আখতার এলাকা ছেড়ে উধাও হয়ে যান। তবে তিন দিনের মাথায় আখতার বাড়ি ফিরে আসেন। ১৫ জুন দু’জনের বিয়ে হয়। |
ওই তরুণীর বাবা ইসলামউদ্দিন বলেন, “আখতার আমাদের প্রতিবেশী। তাই গ্রামেই নিজেদের মধ্যে কথা বলে মিটিয়ে নেওয়ার কথাই ঠিক হয়েছিল। আখতারের পরিবারও চাইল বিয়ে দিতে। আমরা রাজি হয়ে গেলাম।” গোবিন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিদায়ী প্রধান কংগ্রেসের সামিরুল হক বলেন, “সালিশি সভার এমন পরিণতি হবে ভাবতে পারিনি।”
বুধবার ওই তরুণী স্বামীকে নিয়ে বাবার বাড়িতে যান। খাওয়াদাওয়ার পরে রাত প্রায় ১২টা পর্যন্ত সকলে মিলে গল্পও করেন। এর পরে ছোট বোনকে নিয়ে একটি ঘরে ঘুমোতে যান ওই তরুণী। সেই ঘরের সামনের বারান্দায় শুয়েছিলেন আখতার। আর একটি ঘরে শুয়েছিলেন ওই তরুণীর বাবা ও মা। এদিন ভোর ৬ টা নাগাদ ইসলামউদ্দিন মেয়েকে ডাকতে গিয়ে দেখেন তাঁর ছোট মেয়ে শুয়ে ঘুমোচ্ছে কিন্তু বড় মেয়ে নেই। বারান্দায় তখনও ঘুমোচ্ছিলেন আখতার। তিনিও ঘুম থেকে উঠে জানান, তাঁর স্ত্রী কোথায় গিয়েছে জানেন না।
ইসলামউদ্দিনের অভিযোগ, “মেয়ের স্বামী ঘরের বাইরেই ছিল। আজ সকালে মেয়েকে ওই অবস্থায় পাই। আমার বিশ্বাস ওর স্বামীই ওকে খুন করেছে।” পুলিশ জানিয়েছে, যে ঘরে ওই তরুণী শুয়েছিলেন, তার পিছনের দিকের বেড়ার খানিকটা ভাঙা ছিল। ইসলামপুরের এসডিপিও সুবিমল পাল বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে বেশ কিছু তথ্য মিলেছে। তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, ওই তরুণীর পরিবার ধর্ষণের ঘটনা পুলিশকে জানাতে পারতেন। তা না করে গ্রাম্য সালিশি করা উচিত হয়নি। |