শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন প্রকল্পে প্রায় ৫০ কোটি টাকার দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত ঠিকাদার সংস্থার কর্ণধার অজিত বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর ছেলে দেবব্রতকে গ্রেফতার করল পুলিশ। বৃহস্পতিবার বিকেলে দুর্গাপুরের ইস্পাত কলোনি এলাকায় একটি বাড়ি থেকে তাঁদের ধরা হয়। ওই বাড়িটি ভাড়া নিয়ে তাঁরা থাকতেন। গত ১৬ মে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এসজেডিএ’র তরফে দফতরের দুই বাস্তুকার এবং ঠিকাদার সংস্থা ইউরেকা ট্রোডার্স ব্যুরোর কর্ণধার অজিতবাবুর নামে পুলিশে অভিযোগ দায়ের হয়। সেই থেকে অজিতবাবু ফেরার ছিলেন।
তবে যে সমস্ত প্রকল্প নিয়ে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে সেগুলি গোদালা কিরণ কুমার এসজেডিএ’র কার্যনির্বাহী আধিকারিক থাকার সময়েই হয়েছে। অথচ পুলিশের তরফে তাকে এখন পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি কেন তা নিয়ে অভিযুক্তদের এক জন মৃগাঙ্কমৌলি সরকারের আইনজীবীর তরফে প্রশ্ন উঠেছে। বর্তমানে গোদালা কিরণকুমার মালদহের জেলাশাসক। পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, তাই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হলে কিছু নিয়ম মেনেই তা করতে হবে। এসব নিয়ে পুলিশকর্তারা কিছু বলতে চাননি।
শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার কারলিয়াপ্পন জয়রামন বলেন, “ঠিকাদার সংস্থার ইউরেকা ট্রেডার্স ব্যুরোর বিরুদ্ধে যন্ত্রাংশ সরবরাহ এবং কাজ না করে টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এর আগে ধৃতদের জেরা করে অজিতবাবুর বিরুদ্ধে বেশ কিছু তথ্য হাতে এসেছে। অজিতবাবু এবং তার ছেলেকেও জেরা করা হবে।” পুলিশ সূত্রেই জানা গিয়েছে, শিলিগুড়ি গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল অজিতবাবুর খোঁজে কলকাতায় তার বাড়ি এবং সংস্থার অফিসে হানা দিয়েছিল। অজিতবাবু পলাতক থাকায় তাকে সেখানে পাননি। এর পরেই পুলিশের কাছে খবর আসে অজিতবাবু হুগলিতে আত্মগোপন করেছেন। পরে খবর মেলে বর্ধমানে রয়েছেন বলে। সেখানেও পুলিশ তাকে খুঁজতে যায়। তবে পায়নি। পরে জানতে পারেন অজিতবাবু বর্ধমান থেকে দুর্গাপুরে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন।
বুধবার রাতেই শিলিগুড়ি পুলিশের একটি দল সহকারী পুলিশ কমিশনার সেলিমা লামার নেতৃত্বে পৌঁছয়। এদিন সকাল থেকেই তাঁরা প্রস্তুত ছিলেন। দুপুরে পর বাড়িতে হানা দেন। অজিতবাবু এবং তার ছেলে দু’জনকে একসঙ্গে বাড়িতে পেয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ দিনই ধৃত দু’জনকে নিয়ে শিলিগুড়ির উদ্দেশে রওনা হয় পুলিশ।
অজিতবাবু ও তাঁর ছেলে দেবব্রতের নামে ওই কোম্পানি ইউরেকা ট্রেডার্স ব্যুরো মহানন্দা অ্যাকশন প্ল্যানে নিকাশি তৈরি (এসটিপি-২ এবং এসটিপি-৩) এবং বাগডোগরা, মালবাজার এবং ময়নাগুড়ি শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি বসানোর বরাত পায়। যন্ত্রাংশ সরবরাহ এবং কাজ করা হয়েছে বলে প্রায় ৫৪ কোটি টাকা ওই সমস্ত কাজের জন্য এসজেডিএ’র তরফে তাদের দেওয়া হয়েছে। দফতরের সহকারি বাস্তুকার সপ্তর্ষি পাল ও মৃগাঙ্কমৌলি সরকার যন্ত্রাংশ সরবরাহ এবং কাজ হয়েছে বলে শংসাপত্র দিলে কর্তৃপক্ষ তাদের ওই টাকা মিটিয়ে দেয়। অথচ বাস্তবে সেই কাজ হয়নি এবং যন্ত্রাংশ সরবরাহ না হওয়ার বিষয়টি নজরে আসতে পুলিশে অভিযোগ জানানো হয়। ইতিমধ্যে পুলিশ, মৃগাঙ্কমৌলি সরকার, সপ্তর্ষি পাল, সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার প্রবীণ কুমার এবং ঠিকাদার সংস্থার এক প্রতিনিধি অমলকৃষ্ণ সাহাকে ধরে। শিলিগুড়িতে অজিতবাবুর একটি ফ্ল্যাটের হদিস পেয়ে সেখানে তল্লাশি চালিয়ে ওই সমস্ত প্রকল্পের নথি, নকশা বাজেয়াপ্ত করে। তা ছাড়া অপর একটি সংস্থাকে দিয়ে কাজ করাতে নিযুক্ত করেছিলেন অজিতবাবু। ওই সংস্থার দফতরে এবং তাদের বাস্তুকাররা যে ফ্ল্যাটে থাকত সেখানে তল্লাশি চালিয়ে নথিপত্র উদ্ধার করে। বিভিন্ন ঠিকাদার সংস্থার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়।
|