|
|
|
|
মজুরি ৬৭ থেকে ৮৫ টাকা |
এক মাস পর চালু কাঁঠালগুড়ি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বানারহাট |
এক মাস বন্ধ থাকার পরে বৃহস্পতিবার ডুয়ার্সের কাঠালগুড়ি চা বাগান খুলল। চা বাগানের ১১২২ জন শ্রমিক ৬৭ টাকার পরিবর্তে এখন থেকে ৮৫ টাকা করে মজুরি পাবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি, বাগানের বিদ্যুৎ ও জলের সমস্যা মেটাতে প্রশাসনের সঙ্গে মালিকপক্ষও উদ্যোগ নেবে বলে বৈঠকে স্থির হয়েছে। উত্তরবঙ্গের যুগ্ম শ্রম আধিকারিক মহম্মদ রিজওয়ান বলেন, “মালিক ও শ্রমিক চুক্তি মতো শ্রমিকরা প্রথম ধাপে ৮৫ টাকা করে পাবেন। পরে তাদের চুক্তি অনুযায়ী মজুরি বৃদ্ধি হবে বলে ঠিক হয়েছে। বাগানের জল ও বিদ্যুতের বিষয়টি জেলা প্রশাসনের তরভে দেখা হবে।”
বাগান সুষ্ঠভাবে চলা নিয়ে আশাবাদী জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন। জেলা শাসক স্মারকী মহাপাত্র বলেন, “২০০২ সালে বাগানের বিদ্যুতের বকেয়া বিল ছিল ৯ লক্ষ টাকা। সেই সঙ্গে সুদ যুক্ত হওয়ায় সে অর্থ দ্বিগুণ বেড়ে যায়। প্রশাসনের থেকে পর্ষদকে বলে সুদ ছাড় করানো সম্ভব হয়েছে। বিদ্যুৎ হলে, জলের সমস্যা দূর হবে।”
বাগানে বাসিন্দাদের জন্য সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু রাখার জন্য স্বাস্থ্য দফতরকে নির্দেশ দিয়েছেন জেলা শাসক। চা মালিকদের সংগঠন ডুয়ার্স ব্রাঞ্চ অব ইন্ডিয়ান টি এসোসিয়েশনের সচিব প্রবীর ভট্টাচার্য এ দিন বলেন, “বাগানটির অধিকাংশ চা গাছ অত্যন্ত পুরনো। তাই তেমন ভাবে চা পাতা মিলছে না। বেশ কিছু জমিতে নতুন চা গাছ রোপণ করা হয়েছে। উৎপাদন কম থাকায় মালিক পক্ষ অন্য বাগানের মতো মজুরি দিতে পারছিলেন না। শ্রমিকরা সহযোগিতা করলে মালিক পক্ষ ভালভাবে কাজ করতে পারবে।” |
|
কাঁঠালগুড়ি চা বাগান খোলার পরে কাজ করছেন শ্রমিকেরা। বৃহস্পতিবার তোলা নিজস্ব চিত্র। |
২০০২ সালের অগস্ট মাসে কাঠালগুড়ি চা বাগান প্রথম বন্ধ হয়। সে সময় থেকে টানা আট বছর বাগান বন্ধ থাকার ফলে বাগানে ৪০০ জনের বেশি শ্রমিক ও তাদের পরিবারের লোকজনের মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ। অপুষ্টি সহ নানান রোগের কবলে পড়া ওই শ্রমিকদের চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকায় মৃত্যুর মিছিল শুরু হয় বলে অভিযোগ। ২০১০ সালের ২ জুন বাগানের মালিকানা হাতবদল হয়ে ফের বাগান খোলে। বছর খানেক বাদে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে অন্যান্য বাগানের শ্রমিক মজুরি বৃদ্ধি পেলেও কাঁঠালগুড়ি বাগানের শ্রমিকদের মজুরি ৬৭ টাকাই থেকে যায় বলে অভিযোগ। শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করে। তিন দিন ধরে গেট মিটিং চলার পরে বাগানে শ্রমিক অসন্তোষের কারণ দেখিয়ে গত ১৪ মে বাগান ছেড়ে চলে যান কর্তৃপক্ষ।
গত মে মাসে বাগান বন্ধ হবার পরে বাগান জুড়ে অনাহার অর্ধাহারের অভিযোগ শুরু হয়। বাগান বন্ধের পরে, ২ সপ্তাহের মধ্যে গাঙ্গু ওঁরাও (৪২), সীমানি মুন্ডা (২০) এবং বিত্তি ওঁরাওয়ের (৫০) মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় আলোড়ন শুরু হতেই স্বাস্থ্য দফতর থেকে সপ্তাহে ছয় দিনের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে স্বাস্থ্য দফতর। কাঁঠালগুড়ি বাগানের এনইউপিডব্লু শ্রমিক নেতা মাধো ওঁরাও এই প্রসঙ্গে বলেন, “এই এক মাসের মধ্যে বাড়ি বাড়িতে হাহাকার শুরু হয়ে গিয়েছিল। আর কিছুদিন বন্ধ থাকলে, পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নিত। অন্য বাগানের মত সম-মজুরি না হলেও ১৮ টাকা বৃদ্ধি হওয়ায় আমরা খুশি। এতে অন্তত কিছুটা হলেও অভাব মিটবে।” এ বার চা বাগান বন্ধ হওয়ার পরে, অর্ধাহার, অনাহার থেকে বাঁচতে শ্রমিকদের একাংশ ভুটানে গিয়ে দিন মজুরি করতে শুরু করেন। তাদেরকে পিরিয়ে আনার ব্যবস্থাও প্রশাসনের থেকে করা হবে বলে জানা গিয়েছে। |
|
|
|
|
|