খুনের পরেই গ্রামবাসীদের ছেলেটি জানিয়েছিল, তার মা-ই পড়শি একটি শিশুকে কুয়োয় ফেলে খুন করেছে। পরে আদালতেও সে একই সাক্ষ্য দেয়। সেই ছেলের সাক্ষ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতেই মায়ের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হল। বৃহস্পতিবার বাঁকুড়া আদালতের অতিরিক্ত জেলা দায়রা বিচারক (১) নবনীতা রায় এই রায় দেন। আসামি শঙ্করী ঘোষালের বাড়ি বাঁকুড়া সদর থানার আঁচুড়ি গ্রামে।
২০০৯ সালের ৮ মার্চের ঘটনা। আঁচুড়ি গ্রামের সাত বছরের গৌরব ঘোষাল বাড়ির সামনে খেলার সময় হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যায়। বাড়ির লোক ও পড়শিরা খোঁজ করেও তার সন্ধান না পেয়ে শঙ্করীদেবীর বাড়িতে যান। ওই দুই পরিবারের মধ্যে বিবাদ থাকায়, গৌরবের নিখোঁজের পিছনে শঙ্করীদেবীর হাত থাকতে পারে বলে পড়শিদের একাংশ সন্দেহ করেন। সেই সময় শঙ্করীদেবীর শারীরিক প্রতিবন্ধী ছেলে (বর্তমানে ১৫ বছর বয়স) পড়শিদের জানায়, মাছ ধরার লোভ দেখিয়ে ওর মা গৌরবকে কুয়োর ভিতরে ফেলে দিয়েছে। এর পরে পড়শিরা কুয়োয় দড়িতে বাঁধা লোহার হুক ফেলে গৌরবের দেহ তুলে আনেন। ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের একাংশ শঙ্করীদেবীকে বেড়ধক মারধর করেন। পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি করেন। পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে শঙ্করীদেবী ও তাঁর স্বামী স্বামী পরিমল ঘোষালকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
সরকার পক্ষের আইনজীবী অমিয় চক্রবর্তী জানান, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শঙ্করীদেবীর ছেলে প্রীতম পরে আদালতে জবানবন্দিতে জানায়, তার মা গৌরবকে কুয়োয় ফেলে খুন করেছে। তার ভিত্তিতে শঙ্করীদেবীর দোষ প্রমাণিত হয়। তবে ঘটনার সময় পরিমলবাবু গ্রামে না থাকায় তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। বিচারক শঙ্করীদেবীকে দোষি সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড-সহ ৫০০০ টাকা জরিমানা ধার্য করেন। অনাদায়ে আরও ছ’মাস কারাদণ্ডের সাজার কথা জানান।
প্রীতম অবশ্য এখন বাড়িতে থাকে না। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সে এখন একটি হোমে থাকে। তবে আদালতের এই রায়ে খুশি নয় গৌরবের পরিবার। তার দাদু রামরবি ঘোষাল বলেন, “নাতির মৃত্যুর পরে ওর মা শম্পা মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত হয়ে রয়েছে। এখনও সে ধাক্কা সামলে উঠতে পারেনি। আমরা শঙ্করীর ফাঁসি চেয়েছিলাম। এই রায়ে আমরা মোটেই খুশি নই।”
|