কলেজছাত্রীকে গণধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় বারাসতের কামদুনি যখন ক্ষোভে-উপেক্ষায় ফুটছে, বৃহস্পতিবার সেখান থেকে ১৫-১৬ কিলোমিটার দূরেই খুন হল এক কিশোরী। গলায় গামছার ফাঁস লাগিয়ে ওই কিশোরীকে খুন করা হয়েছে নিউ ব্যারাকপুরের পূর্ব কোদালিয়ায়। কে বা কারা কেন তাকে খুন করল, সেই ব্যাপারে পুলিশ অন্ধকারে। এই হত্যাকাণ্ড এবং উত্তর ২৪ পরগনা জুড়ে নারী-নিগ্রহের প্রতিবাদে রাতে নিউ ব্যারাকপুর ফাঁড়ি
|
কিশোরীর বাবা।
— নিজস্ব চিত্র |
ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখায় কংগ্রেস। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ কিশোরী খুনের ঘটনায় তারই প্রতিবেশী এক যুবককে গ্রেফতার করেছে।
পুলিশ জানায়, এ দিন বেলা দেড়টা নাগাদ সুজাতা মণ্ডল (১৩) নামে ওই কিশোরীকে তার ঘরের মেঝেতে গলায় গামছার ফাঁস জড়ানো অবস্থায় পাওয়া যায়। কোনও আক্রোশ থেকে শ্বাসরোধ করে মেয়েটিকে খুন করা হয়েছে বলে পুলিশের ধারণা। এই ঘটনায় ধৃতের নাম বাপি ঘোষ ওরফে নব। সে মেয়েটির প্রতিবেশী। তাকে গ্রেফতার করার পরেও খুনের কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি। ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার সঞ্জয় সিংহ রাতে ঘোলা থানায় বলেন, “খুন ও চুরির অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। কী ভাবে খুন করা হয়েছে, ময়না-তদন্তে তা বোঝা যাবে। বাপিকে জেরা করা হচ্ছে।”
স্থানীয় সূত্রের খবর, বাপির সঙ্গে সুজাতাদের গোলমাল চলছিল। ফুল তোলা নিয়ে কিছু দিন আগে সুজাতার সঙ্গে বাপির বচসা হয়। বাপি তখন সুজাতাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিল বলে অভিযোগ। তার পরে, বুধবার সুজাতার মা সুনীতাদেবীর সঙ্গে ঝগড়া হয় বাপির। সুনীতাদেবী এ দিন বলেন, “আমার ছেলে সুজনকে কলকাতার হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। সুজাতা একা বাড়িতে ছিল। দেড়টা নাগাদ ফিরে দেখি, ঘর লন্ডভন্ড। মেয়ে পড়ে আছে মেঝেতে। লেপ-কম্বল সব চাপা দেওয়া। টি-শার্টটা এক দিকে ছেঁড়া। গলায় গামছার ফাঁস।” বাপিই তাঁর মেয়েকে খুন করেছে বলে সুনীতাদেবীর অভিযোগ।
স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর বীথিকা সমাদ্দার বলেন, “ছ’মাস আগে বাপির মাধ্যমেই পাড়ার নারায়ণচন্দ্র রায়ের বাড়ি ভাড়া নিয়েছিল সুজাতারা। কিন্তু খুনের ঘটনার সঙ্গে বাপির যোগাযোগ কতটা, জানা নেই। এখানে কখনও এমন ঘটনা তো দূর অস্ৎ, চুরিও হয়নি। আমরা চাই, দোষীরা শাস্তি পাক।” |
মেয়ের শোকে। —নিজস্ব চিত্র |
রাত পর্যন্ত জেরায় বাপি ঘটনার কথা স্বীকার করেনি বলে পুলিশের দাবি। তদন্তকারীরা জানান, নেশাখোর বাপি কোনও কাজ করে না। বিরাটির মাইকেলনগরে বসবাসের সময় থেকেই সুজাতাদের পরিবারের সঙ্গে বহু দিন ধরে আলাপ ছিল তার। সেই সূত্র ধরেই পূর্ব কোদালিয়ায় দু’কামরার বেড়ার ঘরের ভাড়া বাড়িতে এসে ওঠে তারা। পরিচারিকার কাজ করতেন সুনীতাদেবী ও সুজাতা। সুজাতার বাবা সুভাষবাবু পেশায় রঙের মিস্ত্রি। অধিকাংশ সময়েই বাইরে থাকেন। ঘটনার সময়েও তিনি রঙের কাজে বাইরে ছিলেন বলে জানান।
পুলিশ সুজাতাদের বাড়ি ঘিরে রেখেছে। বিকেলে ঘটনাস্থলে যান ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার সঞ্জয় সিংহ। সংবাদমাধ্যমকে এড়াতে পুলিশি ঘেরাটোপে সুভাষবাবুকে বার করে মোটরবাইকে চাপিয়ে যে-বাড়িতে সুজাতা কাজ করত, সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। সুনীতাদেবীকে নিয়ে পুলিশ প্রথমে যায় নিউ ব্যারাকপুর ফাঁড়িতে, পরে ঘোলা থানায়। রাতে নিউ ব্যারাকপুর পুরসভার কাউন্সিলর প্রবীর শীল বলেন, “পুলিশ এত বড় একটা ঘটনা ধামাচাপা দিতে চাইছে, এটাই সব চেয়ে দুঃখজনক।” |