কলকাতা হাইকোর্ট আগাম জামিন দিয়েছে। কিন্তু খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষাকর্মী স্কুলের কাজে যোগ দিতে পারবেন না, এমনই দাবি তুলে তাঁকে বেধড়ক মারল জনতা। হাবরার দক্ষিণ নাংলা বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষাকর্মী নৃপেন বিশ্বাস মারের চোটে স্কুলের মধ্যেই জ্ঞান হারান। ওই অবস্থাতেই তাঁকে টেনে রাস্তায় ফেলে আর একপ্রস্ত মারা হয়। ইট দিয়ে থেঁতলে দেওয়া হয় মাথা। স্কুলের মধ্যে মার খান প্রধান শিক্ষিকা নিবেদিতা ঘোষ পালও। তাঁর বিরুদ্ধে নৃপেনবাবুকে কাজে যোগ দিতে সাহায্য করার অভিযোগ তোলে জনতা। |
ইট দিয়ে মার জখম নৃপেন বিশ্বাসকে। ছবি: শান্তনু হালদার |
বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ১১টা নাগাদ ঘটনার সূত্রপাত। ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছয় প্রায় এক ঘণ্টা পরে। জনতার বাধা কাটিয়ে নৃপেনবাবুকে রাস্তা থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠাতে কালঘাম ছোটে পুলিশের। কারণ, কিছু লোক এলাকার রাস্তা অবরোধ করে রেখেছিল। আশঙ্কাজনক অবস্থায় কলকাতার এক নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন নৃপেনবাবু। এই ঘটনায় রাত পর্যন্ত কেউ ধরা পড়েনি। গোলমালের জেরে স্কুলের পঠনপাঠন বন্ধ হয়ে যায়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছরের ২৮ মার্চ সন্ধ্যায় নিজের ঘরেই অগ্নিদগ্ধ হন কাশীপুর আমপাড়ার বাসিন্দা মিঠু বালা। তিনি গত ২ এপ্রিল কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে মারা যান। বছর চল্লিশের নৃপেনবাবুও কাশীপুরের বাসিন্দা। মিঠুদেবীদের বাড়িতে তাঁর যাতায়াত ছিল। প্রথমে নৃপেনবাবু-সহ দু’জনের বিরুদ্ধে থানায় মিঠুদেবীকে খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করেন তাঁর বাবা সনাতন বিশ্বাস। মিঠুদেবী মারা যেতে দু’জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগেও মামলা করে পুলিশ। ধরা হয় এক অভিযুক্তকে। সেই সময়ে নৃপেনবাবু পলাতক ছিলেন। পুলিশ সূত্রের দাবি, চিকিৎসাধীন থাকার সময়ে মিঠুদেবী পুলিশকে জানান, বোতল থেকে জ্বলন্ত লম্ফে কেরোসিন ঢালার সময়ে তাঁর গায়ে আগুন লাগে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ অবশ্য ঘটনার পর থেকে নৃপেনবাবুর বিরুদ্ধে ছিলেন। শিক্ষিকাদের একাংশ এবং স্কুলপড়ুয়ারাও তাঁর বিরুদ্ধে সরব হন। মঙ্গলবার নৃপেন ফের স্কুলে যোগ দেন। বুধবার তাঁর শাস্তি চেয়ে স্কুলে পোস্টার সাঁটানো হয়। বৃহস্পতিবার তিনি স্কুলে ঢুকতেই পড়ুয়ারা তাঁর শাস্তির দাবিতে স্কুল-চত্বরে মিছিল করে। তার কিছুক্ষণের মধ্যে কয়েকশো মহিলা-পুরুষ স্কুলে ঢুকে পড়েন। নৃপেনবাবু অফিস-ঘরে ছিলেন। জনতা সেখানে চড়াও হয়। চেলাকাঠ, ইট দিয়ে শুরু হয় মার। অফিসঘর ভাঙচুর হয়। প্রতিবাদ করায় কয়েকজন মহিলা প্রধান শিক্ষিকাকে কটূক্তি করেন বলে অভিযোগ। তিনিও প্রহৃত হন। তাঁকে জুতো, ঝাঁটা দিয়ে মেরে তালাবন্দি করে রাখা হয়। বাইরে থেকে অফিসঘর তাক করে শুরু হয় ইটবৃষ্টি। বিক্ষোভকারীদেরই একাংশ অবশ্য কিছু ক্ষণ পরে প্রধান শিক্ষিকার ঘরের তালা খুলে দেয়।
প্রধান শিক্ষিকা বলেন, “নৃপেনবাবু আগাম জামিন নিয়ে এসেছেন। তাঁকে স্কুলে যোগ না দিতে দিলে আইনি সমস্যায় পড়তাম। কিন্তু আমাদের দু’জনের উপরে যে এ ভাবে হামলা হবে, তা ভাবতে পারিনি। স্কুলের চাকরি ছেড়ে দিতে ইচ্ছে করছে। গোলমালের শুরুতেই থানায় ফোন করেছিলাম। কিন্তু পুলিশ আসেনি।” পুলিশ অবশ্য দেরিতে পৌঁছনোর অভিযোগ মানেনি।
এ দিকে, নৃপেনবাবুকে স্কুলের সামনে হাবরা-মগরা সড়কে টেনে নিয়ে গিয়েও মারধর চলে। অভিযোগ, তাতে সামিল হন মিঠুদেবীর এক আত্মীয়া। মিঠুদেবীর ভাসুর রঞ্জিত বালার দাবি, “এ দিনের ঘটনা এলাকাবাসীর রাগের বহিঃপ্রকাশ। আমরা দুই অভিযুক্তকে মিঠুর ঘর থেকে পালাতে দেখেছিলাম। আমাদের মনে হয় না, ওটা দুর্ঘটনা। এলাকাবাসীরও হয়তো একই ধারণা।”
নৃপেনবাবুর বাড়িতে এ দিন তালা দেওয়া ছিল।
স্কুলের সম্পাদক জাফর আলি বিশ্বাস বলেন, “নৃপেনবাবুর কাজে যোগ দেওয়ার ব্যাপার নিয়ে শনিবার আলোচনায় বসার কথা ছিল। তার আগেই এমন ঘটনা। কারণ যা-ই হোক, স্কুলে ঢুকে এ ভাবে মারধর সমর্থন করা যায় না।” |