এ বার কৈজুড়ি
ধর্ষণে বাধা পেয়ে পরপর ভোজালির কোপ
কামদুনির পরে স্বরূপনগরের কৈজুড়ি।
বুধবার মাঝরাতে বাড়ির দরজা ভেঙে ঢুকে এক মহিলাকে ধর্ষণের চেষ্টা করল এক দুষ্কৃতী। বাধা পেয়ে প্রথমে মহিলার মাথায় এবং হাতে বাঁশ দিয়ে মারল। মধ্য তিরিশের ওই মহিলা মাটিতে ছিটকে পড়ে চিৎকার করতেই ভোজালি দিয়ে তাঁর যৌনাঙ্গে উপর্যুপরি কোপ মেরে পালাল সে।
ঠিক সেই সময়েই গ্রামের আর কয়েকটা বাড়ি পরে আর এক দল দুষ্কৃতীর হাতে আক্রান্ত হচ্ছিলেন আর এক গৃহবধূ। বয়স ২৬-২৮-এর মধ্যে। দুষ্কৃতীরা তাঁকে অপহরণ করে নিয়ে যাচ্ছিল। গ্রামবাসীদের তাড়া খেয়ে শেষ পর্যন্ত ওই মহিলাকে একটি খানায় ফেলে পালায় তারা।
বাংলাদেশ সীমান্ত-লাগোয়া কৈজুড়ি গ্রামের অভিযোগের আঙুল ও-পার থেকে আসা গরু পাচারকারীদের দিকে।
গ্রামবাসীদের দাবি, বুধবার রাতের এই জোড়া হামলা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে বিএসএফের হাত থেকে গুলিচালনার ক্ষমতা চলে যাওয়ার পর থেকেই পাচারকারীদের তাণ্ডব চলছে নিত্যদিন। খুন-জখম-যৌন নিগ্রহ এখন গ্রামের রোজকার ঘটনা। সন্ধের পর থেকেই এলাকার দখল চলে যায় সীমান্ত পারের দুষ্কৃতীদের হাতে। তাদের হাতে দা-বল্লম-শটগান, কী নেই! দশ কিলোমিটার দূরে থানা। ফলে পুলিশের সাহায্য মেলে না তেমন। বিএসএফ-এর একটা ক্যাম্প আছে ঠিকই। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, জওয়ানরা এখন ঠুঁটো জগন্নাথ। কৈজুড়ি সমস্বরে জানাচ্ছে বিএসএফ-কে নালিশ জানাতে গেলে জওয়ানরা এখন বলে দেন, “গুলি চালানোর হুকুম নেই। গ্রামে ঢুকে পাচারকারীদের হাতে কি মার খাব?”
রক্তাক্ত উঠোন। —নিজস্ব চিত্র
গ্রামের মেয়ের ধর্ষণ ও খুনের প্রতিবাদে সঙ্ঘবদ্ধ আন্দোলন গড়েছে বারাসতের কামদুনি গ্রাম। কৈজুড়ি সে রাস্তায় হাঁটতে পারে না? এলাকার অনেকেই কামদুনির আন্দোলনের কথা শুনেছেন। কিন্তু সকলেই এক বাক্যে স্বীকার করছেন, সীমান্তবর্তী এই গ্রামের সমস্যাটা আলাদা। এখানে দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করাই দায়। গ্রামের বাঁ-পাশ দিয়ে চলে গিয়েছে রাস্তা। গ্রামের পিছনে আট-দশ গজ চওড়া একটা খাল। খালের ও-পারেই বাংলাদেশ। কাঁটাতারের বেড়া পর্যন্ত নেই। ফলে এই গ্রাম কার্যত গরু পাচার এবং তার সঙ্গে নানা অপরাধের মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয়েছে। গত কয়েক মাসে বিএসএফ জওয়ান-সহ গ্রামের একাধিক নারী-পুরুষ খুন হয়েছেন, আহত হয়েছেন। বিএসএফ চৌকি ভাঙচুর করে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। সন্ধের পর থেকে তাই দরজায় খিল দিতেই অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে কৈজুড়ি। গ্রামের কামনা গাইন, সুবলা গাইনরা জানান, বিকেলের পর থেকে আতঙ্কে ঘরবন্দি থাকতে হয় তাঁদের। যদিও এখন ঘরও আর নিরাপদ থাকছে না। কৈজুড়ি পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ বিশ্বনাথ সরকারও স্বীকার করেন, “ওরা মা-বোনেদের উপর সীমাহীন অত্যাচার শুরু করেছে।”
বৃহস্পতিবার সকালে গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় আতঙ্কের পরিবেশ। স্বরূপনগরের তৃণমূল বিধায়ক বীণা মণ্ডল এলাকায় দাঁড়িয়ে স্বীকার করেন, পাচারকারীদের দাপটে কৈজুড়ি বিপন্ন। তিনি বলেন, “এই এলাকায় গরুপাচার বন্ধ করতে এবং পাচারকারীদের দৌরাত্ম্য রুখতে বিএসএফ যাতে আরও সক্রিয় হয়, সে জন্য কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলার অনুরোধ করব মুখ্যমন্ত্রীকে।”
গুরুতর জখম অবস্থায় বসিরহাট মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি ওই মহিলা পুলিশ ও চিকিৎসকদের জানিয়েছেন, তাঁর স্বামী কলকাতায় চাকরি করেন। ছেলে বেড়াচাঁপার একটি পেট্রোল পাম্পে কাজ করে। বুধবার রাতে স্বামী-ছেলে কেউই বাড়ি ফিরতে পারেননি। মাটির উপরে টালি ছাওয়া বাড়িতে তিনি একাই ছিলেন। বাড়ির পিছনেই বাঁশবাগান আর তার পিছনেই খাল। গ্রামবাসীরা জানান, রাতে ওই বাঁশবাগানে লুকিয়ে থাকে দুষ্কৃতীরা। বুধবার রাত আড়াইটে-তিনটে নাগাদ একটি লোক বেড়া ভেঙে বারান্দায় উঠে দরজায় ধাক্কা মারে। মহিলা দরজা খোলেননি। তখন লাথি মেরে দরজা ভেঙে ফেলে ওই দুষ্কৃতী। চুলের মুঠি ধরে মহিলাকে বাইরে এনে মুখে হাত চাপা দিয়ে তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। মহিলা প্রাণপণে বাধা দিতে থাকেন। তখন তাঁকে বাঁশ দিয়ে ঘায়েল করে ভোজালি দিয়ে কোপায় সে।
আক্রান্ত অন্য বধূটির পরিবার সংবাদমাধ্যম এবং পুলিশকে সব ঘটনা খুলে বললেও লিখিত অভিযোগ এখনও করেনি। বধূর কাকা জানান, রাতে মেয়েটি শৌচাগারে যেতে ঘর থেকে বেরিয়েছিলেন। তখনই পাঁচ-ছ’জন দুষ্কৃতী তাঁকে তুলে নিয়ে সীমান্তের দিকে এগোয়। কিন্তু বধূর চিৎকারে গ্রামের লোকজন বেরিয়ে পড়েন। তাই শেষ পর্যন্ত তাঁকে ফেলেই পালাতে বাধ্য হয় দুষ্কৃতীরা। কৈজুড়ির মেয়েরা বলছেন, “কামদুনির ঘটনার পরে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, দোষীদের ফাঁসি দেওয়া হবে। সীমান্তে আমরা ভয়ে জেগে রাত কাটাচ্ছি। কেউ আমাদের খবর রাখে না। স্বাধীন দেশে বাস করি বলে মনেও হয় না। আমাদের চোখের জল দেখার কেউ নেই।”

ফের ধর্ষিতা নাবালিকা
ফের নাবালিকা ধর্ষণের ঘটনা উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটায়। বৃহস্পতিবার পুলিশের কাছে করা অভিযোগে বালিকার পরিবারের লোকেরা জানিয়েছেন, গত মঙ্গলবার নয় বছরের ওই শিশুটিকে ধর্ষণ করে এক নাবালক। বর্তমানে শিশুটি আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.