সুরক্ষাহীন কামদুনি
প্রতিশ্রুতিই সার, পথের বাঁকে বাঁকে এখনও ত্রাস
ন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, রাস্তায় আলো জ্বলবে। নিরাপত্তা জোগাতে বসানো হবে পুলিশ চৌকি। কিন্তু এখনও সন্ধ্যা গড়ালে নিঝুম আঁধারে ডুবে যায় পথ। স্কুল-কলেজ ফেরতা ছাত্রীদের নিয়ে ভয়ে গা সিঁটিয়ে বাড়ি ফেরেন অভিভাবকেরা।
চোদ্দো দিন আগে এক কলেজ-ছাত্রীকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার জেরে কামদুনিবাসীকে দেওয়া প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের প্রতিশ্রুতি মুখের কথাই রয়ে গিয়েছে। আদতে কামদুনি আছে সেই কামদুনিতেই।
এ মাসের ৭ তারিখ দুপুরে কলেজ থেকে ফেরার সময় গ্রামের এক তরুণীকে পাঁচিলঘেরা চত্বরে টেনে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে হত্যা করেছিল কয়েক জন দুষ্কৃতী। প্রতিবাদ-বিক্ষোভ সামাল দিতে তখন কামদুনি গিয়ে স্থানীয় মানুষকে নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়ে এসেছিলেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। পুলিশ চৌকি মোতায়েনের প্রতিশ্রুতি তো ছিলই, পুলিশি টহলের বন্দোবস্ত করার কথাও মন্ত্রী বলেছিলেন। দু’সপ্তাহ কেটে গেলেও যেগুলোর প্রায় কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি বলে গ্রামবাসীদের অভিযোগ।
তাঁদের অভিযোগ যে খুব ভিত্তিহীন নয়, বৃহস্পতিবারের কামদুনি অন্তত তা-ই বলছে। কী রকম?
দুপুরে দু’কিলোমিটার দূরের নবীনচন্দ্র হাইস্কুল থেকে মেয়েকে নিয়ে ফিরছিলেন তার অভিভাবক। কথায় কথায় বললেন, “ঘটনার পরে ক’দিন বিস্তর পুলিশ ছিল। আস্তে আস্তে সব চলে গিয়েছে। রাস্তায় পুলিশের টহলও চোখে পড়ে না। গ্রামে এমন একটা কাণ্ড ঘটে গেল! মেয়েকে একা ছাড়ি কী করে?”
মৌসুমি-টুম্পার বাড়ির সামনে পুলিশি প্রহরা। —নিজস্ব চিত্র
কিন্তু ঘটনার পরেই তো গ্রামবাসীরা পাঁচিলঘেরা জায়গাটা ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন! তা হলে ভয় কী?
স্কুলফেরতা দশম শ্রেণির এক ছাত্রীর জবাব, “তাতে কী? রাস্তার দু’ধারে পাটখেত। সেখানে যে কেউ লুকিয়ে নেই, কে বলতে পারে?” মেয়েদের নিয়ে ফিরছিলেন আরও কিছু অভিভাবক। “রাতারাতি পুলিশ চৌকি বসানো হয়তো কঠিন। তবে টহলদারি চলবে আশা করেছিলাম। কোথায় কী!” বললেন তাঁদের এক জন।
বস্তুত কামদুনির ওই পথের বাঁকে-বাঁকে যে এখনও আতঙ্ক, ছাত্রী ও অভিভাবকদের কথায় তা স্পষ্ট। তবু আতঙ্কের আবহেই ফের স্কুলমুখো হয়েছে কামদুনির মেয়েরা। যেমন নবীনচন্দ্র স্কুলের ক্লাস নাইনের ছাত্রীটি। বাড়ির সবাই দিনমজুর, তাই স্কুল থেকে নিয়ে যাওয়ার কেউ নেই। একা-একাই বাড়ি ফিরছে। ভয় করছে না?
মেয়েটির মন্তব্য, “স্কুল তো যেতেই হবে! অন্য দিন সঙ্গে বন্ধুরা থাকে। আজ ওরা আসেনি।” জানা গেল, কলেজছাত্রীর ধর্ষণ-খুনের পরে সে বেশ ক’দিন স্কুল যায়নি। শেষমেশ পড়ার তাগিদে বার হয়েছে। একরাশ ভয় বুকে নিয়েই ফের স্কুলের পথে।
এবং এ-ও জানাতে ভুলছে না যে, যাতায়াতের পথে কোনও পুলিশের দেখা সে পায়নি। সত্যিই কি পুলিশ নেই তল্লাটে?
ছিল। তবে আসল জায়গায় নয়। রাজারহাট-খড়িবাড়ি রোড ধরে কামদুনি গ্রামে ঢোকার রাস্তায় দু’জন পুলিশের দেখা মিলেছিল। বারাসত-খড়িবাড়ি রোডে এক জন উর্দিধারীকেও চোখে পড়েনি। অথচ এই রাস্তাটি ধরেই কামদুনির অধিকাংশ মেয়ে স্কুল-কলেজ থেকে বাড়ি ফেরে বলে জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা। তা হলে মন্ত্রীর এত প্রতিশ্রুতির অর্থ কী?
ওঁদের তা জানা নেই। গ্রামের মহিলাদের একাংশের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে পেয়ে নিরাপত্তার এই সব সমস্যার কথাই ওঁরা তাঁকে জানাতে গিয়েছিলেন। “তা আর হল কই?” আক্ষেপ এক গৃহবধূর। সাধারণের সুরক্ষায় না হোক, গ্রামে পুলিশের কিঞ্চিৎ উপস্থিতি অবশ্য রয়েছে। পুলিশ-সূত্রের খবর: মুখ্যমন্ত্রীর মুখে ‘মাওবাদী’ তকমা পাওয়া টুম্পা কয়াল-মৌসুমি কয়ালের বাড়ির সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে, মানবাধিকার কমিশনের নির্দেশে।
কামদুনির সান্ত্বনা-প্রাপ্তি বলতে সেটুকুই।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.