বহিরাগতদের নিয়ে মিছিল করল তৃণমূলই
কামদুনিতে বহিরাগতরা ঢুকে গোলমাল পাকিয়েছে বলে অভিযোগ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই বহিরাগতদের ঠেকাতে বৃহস্পতিবার উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মহিলাদের এনে কামদুনিতে মিছিল করল তৃণমূল।
তবে আমন্ত্রণ জানানো সত্ত্বেও সেই মিছিলে যোগ দেননি এলাকার মানুষ। ঠিক যেমন ভাবে বুধবার তাঁরা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তৃণমূল বিধায়ক সব্যসাচী দত্তের খিচুড়ি খাওয়ার নিমন্ত্রণ। সব্যসাচীর ভূমিকা নিয়ে বুধবারই দলের অন্দরে সমালোচনা শুরু হয়। অনেকেই বলেন, কামদুনিতে যখন শোকের ছায়া স্পষ্ট, তখন বাইরে থেকে জনা তিরিশেক যুবককে নিয়ে ধুমধাম করে ওই খিচুড়ি পিকনিক করার কী দরকার ছিল! গ্রামের মানুষ যে বিষয়টা ভাল চোখে দেখেননি, সেটা তাঁদের নীরব প্রত্যাখ্যানের মধ্যে দিয়ে স্পষ্ট হয়েছে বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতাদের অনেকেই।
এই ক্ষতি সামাল দিতে বুধবার রাতেই ঠিক হয়, মহিলাদের নিয়ে কামদুনিতে একটি মিছিল করা হবে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার মধ্যে মধ্যমগ্রামে উত্তর ২৪ পরগনার জেলা তৃণমূল অফিসে দলের কর্মী-সমর্থক মহিলাদের জড়ো হতে বলা হয়। সেখান থেকে তিনটি বাসে করে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় কামদুনি মোড়ে। বেলা ১২টা নাগাদ শ’দেড়েক মহিলা মিছিল করে মৃতার বাড়ির দিকে রওনা দেন। মিছিল চলাকালীন এলাকায় টহল দেয় পুলিশ, র্যাফ ও কমব্যাট ফোর্স। মিছিল চলে যেতেই তারা মিলিয়ে যায়। কেবল মৃতার বাড়ি ও কয়ালপাড়ার সামনে দেখা যায় কিছু পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্মীকে।
বহিরাগত মহিলাদের নিয়ে তৃণমূলের মিছিল। কামদুনিতে বৃহস্পতিবার। ছবি: সুদীপ ঘোষ
কিন্তু মিছিলে এলাকার মানুষ যোগ দিলেন না কেন? মৃতার আত্মীয়দের প্রতিবেশীদের বক্তব্য, “এখানে রাজনৈতিক দল বাদ দিয়েই আন্দোলন হচ্ছে। আমরা গোড়া থেকেই বলছি, আমরা মেয়ের জন্য আন্দোলন করছি, কোনও পার্টির জন্য নয়। তা হলে তৃণমূলের মিছিলে যেতে যাব কেন!” আজ শুক্রবার কলকাতায় যে মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছে, সেখানে অবশ্য যাওয়ার কথা ভাবছেন কামদুনির বাসিন্দাদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, “অরাজনৈতিক যে কোনও আন্দোলনের সঙ্গে আমরা আছি।” তবে ওই মিছিলে না-যাওয়ার জন্য পরোক্ষে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠছে।
কামদুনিতে বহিরাগতদের নিয়ে মিছিল সম্পর্কে কী বলছেন তৃণমূল নেতৃত্ব?
সেখানে কোনও মিছিল হয়েছে কি না, তা জানেনই না বলে দাবি করছেন বারাসতের তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার। আর সব্যসাচীর বক্তব্য, “যে মিছিলে আমি ছিলাম না, সেই মিছিল সম্পর্কে আমার কিছু বলার নেই।” তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বেরও সকলের মুখে কুলুপ।
ফলে কামদুনিতে বহিরাগতরা ঢুকে গোলমাল পাকাচ্ছে বলে খোদ মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ তোলার পরে সেই বহিরাগতদের নিয়েই সেখানে মিছিল করা হল কেন, সেই ব্যাখ্যা মেলেনি।
গ্রামবাসীরা অবশ্য বহিরাগতদের নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন। কয়ালপাড়ার এক মহিলা বলেন, “দু’দিন ধরে গ্রামে কারা ঢুকছে, তা কেন মুখ্যমন্ত্রী দেখছেন না? গ্রামে একটি অরাজনৈতিক আন্দোলন নিয়ে কেন এ ভাবে রাজনীতি করা হচ্ছে?”
পাশাপাশি, গ্রামের মেয়েদের বহিরাগত মাওবাদী বলা নিয়েও এখনও ক্ষোভ কমেনি কামদুনির। গ্রামবাসীদের বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী যাঁদের বহিরাগত বলছেন, তাঁরা এই গ্রামের মেয়ে বা বউ। তিনি এক জন মহিলা হয়ে গ্রামের মেয়ে-বউদের বহিরাগত, মাওবাদী বলেছেন!” মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়ানো টুম্পা কয়ালের এক আত্মীয়া বলেন, “যে মেয়েটা এ রকম নির্মম ভাবে খুন হলো, সে টুম্পার বন্ধু ছিল। তাই টুম্পা প্রতিবাদ করেছে। সেই টুম্পা বহিরাগত হয়ে গেল! মাওবাদী হয়ে গেল!”
আর এক প্রতিবাদী মৌসুমী কয়ালের শাশুড়ি সবিতা কয়াল বলেন, “আমার বৌমাকে মাওবাদী তকমা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মাওবাদী কাকে বলে জানি না। বৌমাকে বলেছি সংসারের কাজ আমরা করব। আর প্রতিবাদ করতে তোমাকে যত দূর যেতে হয় যাবে।” মৌসুমীর স্বামী বিশ্বজিৎ বলেন, “আমাদের পরিবারের কেউ রাজনীতি করেনি। কিন্তু মেয়েটির ছিন্নভিন্ন দেহটা দেখে ঘরে থাকতে পারিনি। প্রতিকারের বদলে মুখ্যমন্ত্রী গ্রামবাসীদের বদনাম করছেন।”
মৃত ওই ছাত্রীর দূর সম্পর্কের এক দাদা বলেন, “যাঁরা আমাদের হয়ে আন্দোলন করেছেন, তাদের মাওবাদী বলায় খারাপ লাগবেই। তবে মুখ্যমন্ত্রী যে আমাদের পরিবারকেও মাওবাদী তকমা দেননি, তাই তাঁকে ধন্যবাদ।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.