|
|
|
|
|
বাইশ বছরেও মেলেনি বিচার
নিজস্ব সংবাদদাতা • রঘুনাথগঞ্জ |
|
বাইশ বছর পার হয়ে যাওয়ার পরেও স্বামীর হত্যার বিচারের আশায় আদালতে ঘুরছেন টুকু বেওয়া। বৃহস্পতিবার এসেছিলেন জঙ্গিপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজের আদালতে। বিচারক না থাকায় পুনরায় মামলার দিন পড়েছে ১৫ জুলাই।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৯১ সালের ১১ জুন সকালে সুতি থানার গাইঘাটা গ্রামের বাসিন্দা প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক সাম মহম্মদকে নৌকার উপরে কুপিয়ে খুন করা হয়। ওই মামলায় গ্রামেরই চার অভিযুক্তকে পুলিশ গ্রেফতার করে। যথা সময়ে মামলার চার্জশিটও দেয় পুলিশ। পরে জামিনে ছাড়া পান অভিযুক্ত চার জন।
টুকু বেওয়া বলেন, “স্বামী শিক্ষক ছিলেন। আমার ভরা সংসার ছিল। সব এক লহমায় ভেসে গেল। কিন্তু স্বামীর খুনের অভিযুক্তেরা এখনও সাজা পেলেন না। তবে আইনের প্রতি আমার সম্পূর্ণ ভরসা রয়েছে। জানি, একদিন সুবিচার পাবই।”
ছয় মেয়ে ও দুই ছেলেকে নিয়ে স্বামীর মৃত্যুর পরে কোনওমতে সংসার চালিয়ে গিয়েছেন টুকু বেওয়া। সাম মহম্মদের ভাই বুদ্ধু শেখই তাঁর দাদাকে খুনের ঘটনায় চার জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন সুতি থানায়। তিনি বলেন, “জমি সংক্রান্ত বিবাদের জেরেই খুন করা হয় দাদাকে। সকাল ৯টার সময় অনেক লোকের সামনে তাঁকে নৌকার উপরে কুপিয়ে চলে যায়। প্রায় ২০ জন সাক্ষী দিয়েছিলেন ঘটনার। বিচারপর্ব অবশ্য শেষ হয়নি।” তিনি বলেন, “মোটামুটি দু’মাস অন্তর আদালতে শুনানির দিন পড়ে। আমরা আসি। আবার ফিরে যাই। কখনও শুনি বিচারক নেই, কখনও শুনি আইনজীবীদের ধর্মঘট, কখনও অন্য কিছু। তাই ২২ বছর পার হয়ে গেলেও খুনের মামলা শেষ হয়নি। তবে আদালতের আমাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে।”
তাঁদের গ্রামের কয়েকজনের বক্তব্য, বিচার এত বিলম্বিত হচ্ছে কেন? বারবার আদালতে গিয়ে ঘুরতে হচ্ছে কেন ওই পরিবারের লোকজনকে? জঙ্গিপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতের সরকারি আইনজীবী সৈয়দ সাদেক রিটু এই মামলায় বিলম্ব হওয়ার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি বলেন, “এই আদালতে এমন আরও কয়েকটি মামলা ঝুলে রয়েছে দুই দশকের বেশি সময় ধরে। সেগুলি খুঁজে বার করারা চেষ্টা শুরু হয়েছে, যাতে দ্রুত বিচারের কাজ শেষ করা যায়।”
তিনি জানান, সাম মহম্মদ খুনের মামলায় এক চিকিৎসকের সাক্ষ্য নিতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। সেই চিকিৎসক সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়ে কোথায় রয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে বহু চেষ্টা করেও তার সন্ধান মেলেনি। সে কারণে তাই অনেক সময় লেগে যায়। তা ছাড়া এই ওই আদালতের বিচারক গত সপ্তাহে বদলি হয়ে গিয়েছেন। নতুন বিচারক এখনও কাজে যোগ দেননি। সরকারি আইনজীবী অবশ্য আশাবাদী। তিনি বলেন, “১৫ জুলাই পরের শুনানির দিন। তারপরে আর বেশি দিন লাগবে না বিচারের পর্ব শেষ করে রায় দানের জন্য।”
আর এক সরকারি আইনজীবী অশোক সাহার কথায়, “মামলা বিলম্বিত হওয়ার অনেক কারণ থাকে। দু’পক্ষের আইনজীবীদেরই মামলার তাড়াতাড়ি নিষ্পত্তি করার জন্য উদ্যোগী হতে হবে। তবে পুরনো মামলাগুলি নিষ্পত্তির চেষ্টা করছি।” |
|
|
|
|
|